১.
পরিচিত এক লোক তার নতুন ব্যবসা চালু করবে। তাই দোয়ার আয়োজন করবে। আমাকে বললো, একটা দোয়ার আয়োজন করবো। তোমারতো অনেক জানাশোনা। কিছু হুজুর লাগবে। ম্যানেজ করে দাওতো।
হুজুর দ্বারা কাদের সে বুঝিয়েছে তা আমি ভালোই বুঝেছি। আমি সাধারণত কথা প্যাঁচাই না। কিন্তু একটা সঠিক ধারণা দেওয়ার জন্য প্যাঁচাতে চাইলাম।
বললাম, হুজুর কারা? আমি তাদের চিনি না। কীভাবে ম্যানেজ করবো?
সে পুরাই টাস্কি খেলো।
বললো, মজা করো নাতো।
বললাম, মজা করছি না। হুজুর কারা?
সে এবার বিরক্ত হয়ে বললো, আরে মাদ্রাসায় যারা পড়ে ওরাইতো হুজুর। যাওতো আর কথা বলো না। পশ্চিমপাড়ার হাফেজি মাদ্রাসার হুজুরকে বলো কিছু হাফেজ হুজুর নিয়ে কাল সন্ধ্যায় চলে আসে যেন। আমার পক্ষ থেকে দাওয়াত দিও।
দেখলাম সে কিছুই শিখলো না। তাই আবারো প্যাঁচ ধরলাম। বললাম, হাফেজি মাদ্রাসার হুজুর আবার কে?
সে বললো, তুমি ইচ্ছা করে মজা নিচ্ছো।
আরে যিনি বাচ্চাদের পড়ান তার কথা বলছি।
আমি বললাম, ও তাই বলো। তিনিতো ঐ মাদ্রাসার শিক্ষক। তাকে হুজুর বলছো কেন?
এবার সে আমার উদ্দেশ্য অনেকটাই ধরতে পারলো।
বললো, শোনো আমরা মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেম, মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের হুজুর বলে থাকি। শুধু তাই নয়। লম্বা জামা পরা, টুপি পরা এমনকি অনেক সময় দাঁড়ি থাকা লোকদেরও হুজুর বলে থাকি। এটাতো আমাদের সমাজে অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। বদলানো যাবে না।
বললাম, বদলানো যাবে কি যাবে না সেটা পরের কথা। কিন্তু অনেকেতো তোমার মতো তাও স্বীকার করে না। তারা মনে করে এ শব্দটি একটা গোষ্ঠীর জন্য খাস। অথবা এটা কেবল তাদের বেলায় ব্যবহারযোগ্য।
সে বললো, হুম এভাবেতো কখনো ভেবে দেখিনি। আচ্ছা আজ থেকে আমি নিজেকে বদলাবো।
২.
একটা মাহফিলে এক বক্তা একদিন বলছেন, যতদোষ খালি আমরা হুজুরদের। ডানে, বামে যেদিকে যাই সেদিকেই সমস্যা।
দেখলাম সমস্যাতো কিছু আছেই। সমস্যা দূর করা দরকার। তাই দাঁড়িয়ে বললাম, আমার একটা কথা বলার আছে। অনুমতি দিলে বলি। ( আমিও কিন্তু ডানে, বামে ভুল ধরার মতোই করলাম। কিন্তু তার সংশোধনের জন্য এটা জরুরি।)
বক্তা বললেন, আচ্ছা ভাই বলেন।
বললাম, আচ্ছা আপনি যে এইমাত্র নিজেকে হুজুর বলে সম্বোধন করলেন; আপনি হুজুর কীভাবে হলেন?
উনি বললেন, সরি আপনার কথা বুঝতে পারিনি।
বললাম, আপনি নিজেকে হুজুর বলেছেন। আপনাকে কেন হুজুর বলা হয়। হুজুর শব্দটির বিষয়ে জানতে চাচ্ছি। আমিতো জানি আপনি একটা মসজিদের খতিব। আপনার কাজ খুতবা দেওয়া তাই আপনি খতিব। আজ বক্তব্য রাখছেন তাই আপনাকে বলা যায় বক্তা। কিন্তু কোনো কাজের কারণে আপনাকে হুজুর বলবো দয়া করে বলবেন?
বক্তা সাহেব মুচকি হাসলেন। তিনি বললেন, শুনুন। এটা একটা প্রচলিত শব্দ। মানুষ বলতে বলতে এমন করেছে। তাই আমরাও এখন নিজেকে হুজুর বলে ফেলি।
বললাম, হুম একটা প্রচলিত ভুল। অথবা ভুল প্রচলন। যা একটা গোষ্ঠীর জন্যই ব্যবহার করা হয়।
বক্তা বললেন, ঠিক বলেছেন ভাই।
হাতের ইশারায় আমাকে বসতে বলে তিনি নিজেই এবার বলতে শুরু করেন। এ ভাইটি আমাকে সুন্দর একটা বিষয় ধরিয়ে দিয়েছে। আসলে আমাদের দেশে একসময় রাজা, বাদশাহদের মানুষ হুজুর বলতো। ব্রিটিশ আমলে জমিদারদের মানুষ হুজুর বলতো। এমনকি কাজি অর্থাৎ বিচারকদের মানুষ হুজুর বলতো।
এমনিভাবে বক্তা আরো তথ্যবহুল কথা বলে যাচ্ছে। আমি আনন্দিত হলাম যে লোকটি ভালোই জানেন। পাশাপাশি সত্যকে গ্রহণ করার সৎসাহস তার আছে।