যা ইচ্ছা তা করাকে স্বাধীনতা বলে না। যা ইচ্ছা তা করাকে নষ্টামি বলে অথবা অন্যের উপর জুলুম করা বলে। স্বাধীনতার প্রকৃত মানেটাই আমরা আসলে বুঝি না। আমরা স্রষ্টার বিরুদ্ধে চলে যাই। নিয়মের বিরুদ্ধে চলে যাই। প্রকৃতির বিরুদ্ধে চলে যাই। স্বাধীনতার মানে হলো জীবনের জন্য যা প্রয়োজনীয় তাই পাওয়া। আপনি বলুনতো সূর্য কি স্বাধীন? চাঁদ, গ্রহ, তারা কি স্বাধীন? জীবজগতের প্রতিটি প্রাণীই কি স্বাধীন?
উত্তর হলো প্রকৃতপক্ষে তাদের স্বাধীনতা হিসেবে যতটুকু স্পেস দরকার তা তাদের দেয়া আছে। আর এজন্যই মহাবিশ্ব এতো সুন্দর। কারণ তারা জীবনের রুটিনে সন্তুষ্ট। একটি ঘুড়িকে স্বাধীনতা দিতে গিয়ে যদি ছেড়ে দেন তবে ঘুড়িটি আর উড়তেই পারবে না। কিন্তু এরপরেও আমরা মানুষেরা বুঝি না। হয়তো বুঝি যখন শোকের পাহাড়গুলো বিশালাকার হয়ে যায়।
মানুষ সৃষ্টির সেরা। শ্রেষ্ঠ জীবও বটে। তবে তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে হয় ভালো কাজের মধ্য দিয়ে। এ মহাবিশ্বের সবকিছুর মধ্যেই, সব সৃষ্টির মধ্যেই মানুষের জন্য কোনো না কোনো নির্দেশনা আছে। এগুলোকে মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য নিদর্শন করেছেন। চন্দ্র, সূর্য, পৃথিবী নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরছে। নিয়ম মেনে রাত হয়, দিন হয়। পানিচক্রের কথাই ধরি। সমুদ্র, নদী-নালা খাল বিলের পানি বাষ্প হয়ে উপরে ওঠে। কণা জমে সাদা বরফে পরিণত হয়। আমরা তাকে বলি সাদা মেঘ। তারপর কালো মেঘে রূপান্তরিত হয়। তারপর আবার বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে পৃথিবীর বুকে। একটা পুকুরের খাদ্য শৃঙ্খলের মতো প্রাণী জগতে কত শত খাদ্য শৃঙ্খল ও খাদ্য জাল রয়েছে। এসব কিছুর মধ্যেই আমরা নিয়মানুবর্তিতা দেখতে পাই। এরা এ নিয়ম কখনোই ভাঙতে পারে না। তাদের সে সাধ্য নেই।
রাতের একটা সময় আছে। দিনের একটা সময় আছে। সূর্য, চাঁদ ও তারার আলো বিতরণের একটা সময় আছে। (পৃথিবীর দৃষ্টিকোণ থেকে)। পাখিরা জেগে ওঠে ভোরে। সারাদিন খাবার খেয়ে সন্ধায় ঘরে ফিরে যায়। দিনের পশু পাখি রাতে জেগে থাকে না। রাতের পশুপাখি দিনে কাজ করে না। এদের থেকে আমরা সময়ানুবর্তিতা শিখতে পারি। এরা এ সময়ের নিয়মকে ভাঙতে পারে না। কারণ এদের সে ক্ষমতা দেয়া হয়নি। সে স্বাধীনতা এদের নেই। প্রয়োজনও নেই।
পিপীলিকা সারাজীবন কাজ করে। কখনোই অলসতা করে না। কোটি কোটি পিপীলিকা কাজের পরে কাজ করেই যায় অথচ কতো শৃঙ্খলা প্রদর্শন করে। আমরা এ ক্ষুদ্র প্রাণীটির কাছ থেকে শিখতে পারি শৃঙ্খলা ও পরিশ্রম। শৃঙ্খলার মধ্যে থেকেও অলসতা কীভাবে পরিহার করে কঠোর পরিশ্রম করা যায় তার শ্রেষ্ঠ উপমা হলো পিপীলিকা। এরা অলস হয় না। বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে না। এদের সে স্বাধীনতাই দেয়া হয়নি। আর তেমন স্বাধীনতার এদের দরকারও নেই। কাজই এদের স্বাধীনতা। পরিশ্রম ও সুশৃঙ্খলাই এদের স্বাধীনতা।
জলের মাছ স্থলভাগ দখল করে না। স্থলের প্রাণীরা জলভাগ দখল করে না। অর্থাৎ জলচর প্রাণী জলেই খুশি আর স্থলচর প্রাণী স্থলেই খুশি। তারা কোনো নিয়ম ভাঙে না। কারণ এটাই তাদের স্বাধীনতা। তারা স্ব স্ব স্থানে খুশি ও সন্তুষ্ট।
কিন্তু মানুষকে আল্লাহ স্বাধীনতা দিয়েছেন। তারা চাইলে ভালো কাজ করতে পারে, চাইলে খারাপ কাজও করতে পারে। হ্যাঁ ও না বলার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। তাদেরকে সৃষ্টির মাঝে উত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করা হয়েছে। শ্রেষ্ঠ জীবের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। আবার স্বাধীনতা দেয়ার কারণে তাদের পরীক্ষা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। পরীক্ষায় পাশ ফেল হয়। তাই তাদের পুরস্কারের জন্য ও শাস্তিদানের জন্য দুটো জায়গাও নির্ধারণ করা হয়েছে।
পরীক্ষার হলে একজন ছাত্রের তিনঘন্টা লেখার স্বাধীনতা আছে। তার ইচ্ছামতো লেখার স্বাধীনতা আছে। তবে যা তা লেখার স্বাধীনতা নেই। প্রশ্নের উত্তর হতে হয় প্রাসঙ্গিক ও যথাযথ। অনেক নিয়ম মেনেই তাকে পরীক্ষা দিতে হয়। এটাই স্বাধীনতা।
একজন ফুটবল খেলোয়াড়ের নব্বই মিনিট সময় মাঠে দৌড়ে গোল করার স্বাধীনতা আছে। নব্বই মিনিট পরে খেলা শেষে খালি মাঠে গোল দিলে সেটা গোল হয় না। অনেক নিয়ম মেনেই একটা খেলা খেলতে হয়। এটাই স্বাধীনতা।
রাস্তায় চলতে হলে মেনে চলতে হয় ট্রাফিক আইন। যা তা করে তাকে স্বাধীনতা আখ্যা দিলে গুণতে হয় জেল জরিমানা। আরও কত শাস্তি। তেমনি জীবনে চলার পথেও আমাদের মানতে হয় বিভিন্ন নিয়মকানুন। এটাই আমাদের স্বাধীনতা। সে স্বাধীনতা মেনে চললেই জীবন হয়ে ওঠে সুন্দর ও স্বার্থক। যা ইচ্ছা তাই করার নাম কখনোই স্বাধীনতা হতে পারে না।