পবিত্র ঈদুল ফিতরের দুমাস ১৫ দিন পর পবিত্র ঈদুল আজহা মানে কোরবানির ঈদ। ঈদুল আজহার কয়েকদিন আগে বাবা দুপুরবেলায় অফিস থেকে এসে খাওয়ার সময় বললো কয়েকদিন পর তো পবিত্র ঈদুল আজহা কোরবানির ঈদ। কোরবানির জন্য গরু কিনতে হবে৷ হাতে বেশি সময় নেই, হাটে যাওয়া লাগবে, গরু কিনতে হবে। এত তাড়াতাড়ি অফিসের তো ছুটি নেই। তখন মা বললো অফিস ৪ টায় শেষ হয়। তারপরে একটু কষ্ট করে হাঁটে যেয়ে গরু কিনতে হবে। বছরে তো একবার আসে কোরবানির ঈদ। যাই হউক অফিস ছুটির পর তো গরু কেনা সম্ভব নয়। কারণ,অফিস শেষ হওয়ার পর বাজার করতে আর বাসা আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। তাই এই কয়েকদিনের মধ্যে গরু কিনতে হবে। সজীবের বাবা বললো তাহলে বৃহস্পতিবার হাটে যেয়ে একটা গরু কিনে নিয়ে আসবো। সজীবের মা বললো তুমি একদিনে হাঁটে গিয়ে একদিনে গরু নিতে পারবে। সজীবের বাবা বললো কি আর করবার? সেদিন ই নিবো দাম কম হউক আর বেশি হউক।
তখন সজীব বললো বাবা আমিও তোমার সাথে হাটে যাবো। সজীব খুব বায়না করলো। সে হাটে যাবে গরু কিনবে গরু নিয়ে আনন্দে বাসা ফিরবে। বাবা অনেক বোঝালো যে হাটে অনেক মানুষের ভীড় চলাফেরার সমস্যা হয়। তুমি কিভাবে সেখানে যাবে? সজীব কোনো কথায় মানলো না। শেষ পর্যন্ত কি আর করার বাবা বললো আচ্ছা বাবা যেদিন হাটে যাবো সেদিন তোমাকে নিয়ে যাবো। আজ তো শনিবার আমরা বৃহস্পতিবার হাটে যাবো। যাই হউক এই কথা শুনে তো সজীব অনেক খুশি মুখ ভরা দিল একটা হাসি। এখন সজীব বলে কোনদিন আসবে সেই দিন আর কত দেরি আমার আর ধৈর্য্য সইছে না। রাতের বেলায় ঘুমনোর আগে সজীব শুয়ে শুয়ে ভাবছে বৃহস্পতিবার তো হাটে যাবো। কেমন গরু নিবো এটাই তো আমার মাথায় আসছে না। আজকে ঘুমিয়ে পড়ি কালকে বিদ্যালয়ে গিয়ে বন্ধু বান্ধব এর সাথে কথা শেয়ার করবো। এই ভাবনা করে সজীব ঘুমিয়ে পড়লো।
পরেরদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে বই পত্র নিয়ে বিদ্যালয়ে চলে গেলো। বিদ্যালয় যাওয়ার পথে চিন্তা করে এই কথা বন্ধু বান্ধবের সাথে শেয়ার করা ঠিক হবে। যাই হউক আগে পৌছাই বিদ্যালয়।
পাঠদান শেষে বাসা ফেরার পথে দেখলো একজন একটা গরু টেনে নিয়ে যাচ্ছে বাসা। পরে দেখতে পেল সজীবের বন্ধু আবরার তখন সজীব জিজ্ঞেস করলো কি রে আবরার কত দিয়ে কিনে আনলে গরুটা? জবাবে আবরার বলে আমরা এই লাল রঙের গরুটা কিনে নিলাম চল্লিশ হাজার টাকায় । সজীব আর কিছু না বলে বললো যাও তালে, তখন আবরার বললো তোমরা গরু কিনছো। সজীব বললো না বৃহস্পতিবার হাটে গিয়ে নিবো। এই বলে
বাসার দিকে হাটতে শুরু করে সজীব। তারপরে মনে মনে বলে এবার হাটে গেলে লাল গরু নিবো।
আজ তো রবিবার আগামীকাল তো বিদ্যালয় বন্ধ দিবে। কতো না মনে খুশি খুশি লাগছে, ভালোই হলো বেশ কয়েকদিনের ছুটি পাবো। শুধু বাবার অফিসের ছুটি পেতে একটু দেরি। দেখতে দেখতে বিদ্যালয় বন্ধ দিলো সময় পার আসলো বুধবার আর মাত্র একটি দিন। আগামীকাল হাঁটে যাবো। রাতের বেলায় হাঁটে যাওয়ার কথা ভেবে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে বলতে পারি না। পরেরদিন সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেয়ে পড়তে বসে সজীব। পড়ায় কোনো মনোযোগ ছিল না। শুধু মনে ঘুরছে কখন হাটে যাবো। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেল, বাবা আমি গোসল করে খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম নেওয়ার পর রওনা দিলাম হাটে যাওয়ার উদ্দেশ্য, বাসা থেকে বের হলাম মোটরসাইকেল চেপে মিনিট ত্রিশেক পর পৌছে গেল হাঁটে। দুর থেকে দেখে সজীব হাটে এত মানুষের কোলাহল যা বলা অসম্ভব। গাড়ি নিয়ে হাটের ভিতরে যেতে পারলো না। গাড়ি এক দোকানের পাশে রেখে হাটের ভিতরে প্রবেশ করলো সজীব ও বাবা। ভিতরে ঢুকতেই দেখতে পেল অনেক অনেক ছোট বড় গরু। কোনটা রেখে কোনটা নিবে সজীব হিমশিম খেয়ে গেল। সজীবের বাবা দাম ঠিক করতে শুরু করলো। শেষ পর্যন্ত একটা লাল গরু সজীবের পছন্দ হলো বাবাকে বলে ওঠে সজীব। এই লাল গরুটা নিবো। বাবা শেষে দাম ঠিক করলো। ষাট হাজার টাকা। টাকা দিয়ে গরু নিয়ে নিলো। গরুর দড়ি হাতে নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলো। গরুটা ছিল বেশ শান্তশিষ্ট। গরু নিয়ে এসে একটা গাড়িতে তুলে বাসা নিয়ে আসলো সজীব । পরদিন সকালবেলা পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ পড়ে এসে কোরবানি করলো। এবং মাংস নিজের জন্য রাখলো গরীব দুঃখীকে বিলিয়ে দিলো আত্বীয় স্বজনকে দিলো। খুবই আনন্দে ঈদ উদযাপন করলো সজীব।