• আজ- শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন
Logo

মা

এস এম নওশের / ১৭১ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : সোমবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

add 1
  • এস এম নওশের

কমলাপুর স্টেশনে যখন এসে পৌছালাম ঘড়ির কাটা সাতটার ঘর ছুই ছুই। প্ল্যাট ফর্মে এসে দেখি সোনার বাংলা ট্রেন টা ছেড়ে যাচ্ছে। দৌড় শুরু করলাম। আমি যত এগোই ট্রেন যেন তার চাইতে বেশি আগায়।হঠাত করেই একটা হাত দরজা দিয়ে বেরিয়ে এল আমার দিকে। হ্যাচকা টান দিয়ে আমায় তুলে নিল। উঠে পড়লাম ট্রেনে।আমি হাপাচ্ছিলাম সমানে। ভদ্রলোক তার বোতল টা এগিয়ে দিল।
নিন পানি টুকু খান।
নিলাম। ঢক ঢক করে খেয়ে নিলাম প্রায় অর্ধেক পানি।
পকেট থেকে টিকিট বের করে সীট খুজে বের করলাম। আরে আমার পাশের সীটেই ত সেই ভদ্রলোক।
ভাই আপনাকে যে কী বলে ধন্যবাদ দিব।।।

জানালাটা খুলে দিয়ে।একা খুলতে পারছিনা।হাসতে হাসতে বললেন তিনি

জানালা টা খুলে দিলাম।
ট্রেন ধরবেন হাতে একটু সময় নিয়ে বের হবেন না??

না আসলে সময় নিয়েই বেরুচ্ছিলাম। হঠাত আমার পাশের ফ্ল্যাটের প্রতিবেশি এলেন তার বাচ্চার খুব জ্বর। একটু যেন দেখে যাই। বাচ্চাটা কে দেখে প্রেস্ক্রিপশন করে বেরুতে বেরুতে একটু দেরি হয়ে গেল। তাই একেবারে ইলেভেন্থ আওয়ারে স্টেশনে আসা। আপনি হেল্প না করলে গেছিল ট্রেন টা।বললাম আমি

অহহো আপনি ডাক্তার বুঝি। যাক ভালই হল। আমি স্টিফেন গোমেজ। ছোট খাট বিজনেস আছে। আমার মা ছিলেন নার্স। উনার স্বপ্ন ছিল আমাকে ডাক্তার বানাবেন। কিন্তু হল না। হাসলেন স্টিফেন। জানতে চাইলেন
তা চাটগা যাচ্ছেন কেন??

আসলে আমার মা আছেন অখানে আমার ভাইয়ের বাসায়। মার শরির টা ভাল না। দেখতে যাচ্ছি মা কে। বললাম

দেখবেন আপনি গেলেই মা সুস্থ। সন্তানেরা কাছে এলেই মা দিব্যি সুস্থ হয়ে যান। জানেন আমার মা রিটায়ার করার পরেও আমার সাথে থাকেন নি। উনি চলে গেলেন বিরিশিরি। সেখানে একটা অনাথ আশ্রমে বাচ্চাদের দেখা শুনা করতেন।

বাহ খুব ভাল তো। কি নাম ছিল উনার? জানতে চাইলাম

স্টেলা গোমেজ।

এভাবেই স্টিফেনের সাথে দারুন গল্প জমে উঠেছিল। স্টিফেন তার সাথে আনা নাশতা আমার সাথে শেয়ার করল। আমি ওকে কফি খাওয়ালাম। এর মধ্য ট্রেনের এক এটেন্ডেন্ট এসে জানতে চাইল যাত্রীদের মধ্যে কেউ ডাক্তার আছেন কিনা?
আমি পরিচয় দিলাম। সে আমাকে নিয়ে গেল ফার্স্টক্লাস কেবিনে একটা রুগি দেখাতে।

ফিরে আসার পর স্টিফেন জানতে চাইলো কী কেস??
সাইকিয়াট্রিক সমস্যা। ফিমেল পেশেন্ট। হঠাত করেই অভার এক্সাইটেড হয়ে রেস্টলেস হয়ে গেছিলেনআমি জাস্ট একটা সিডেটিভ ট্রাংকুলাইজার দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখে এসেছি।

স্টিফেন কিছুটা গম্ভির হয়ে গেল।আমরা বেশ খানিক সময় চুপচাপ। আমার এর মধ্যে কিছু টা ঘুম পেয়ে গেল। ঘুমিয়ে পড়লাম।

ঘুম ভেংগে গেল স্টিফেনের ঝাকুনি তে।
ভালই তো ঘুম দিলেন দেখি। এখন নিন কফি নিন।হাসছে ও

কফি খেতে খেতে স্টিফেন বললেন আপনি আজ যেরকম একটা রুগি দেখলেন ট্রেনে বহু বছর আগে ওরকম একজন কে দেখা শুনার জন্যে মা কে রাখা হয়েছিল প্রাইভেট নার্স হিসেবে। তখন আমরা ভাই বোন রা ছোট।বাবা ব্যবসা করতে গিয়ে ঋন গ্রস্থ। মায়ের হাসপাতালের চাকরির বেতনে চলে না।তাই বাড়তি রোজগারের জন্য এই কাজ টি নিয়েছিলেন। সেই মহিলাও হঠাত হঠাত এরকম হয়ে যেতেন। বিশেষ করে মাসের একটা নির্দিস্ট তারিখে। কয়েকবার আত্মহত্যার চেস্টাও নাকি করেছেন।তার স্বামী নেই। ভাই এর বাড়িতে রাখা হয়েছে। উনাদের টাকা পয়সার অভাব নেই। মা কে ভালই বেতন দিত। আবার কখনো কখনো অনেক খাবার দিয়ে দিত মায়ের সাথে। প্রায় বছর দশেক মা এই মহিলার সেবা করেছেন। একদিন হঠাত মায়ের সাথে সেই মহিলা গল্প করছেন হঠাত পাশের ড্রয়িং রুমে এক ভদ্রলোকের গলা শুনে বললেন মাকে জিজ্ঞেস করলেন কে এসেছে?
মা দেখে এসে বললেন আমি তো চিনিনা উনাকে। আপনার ভায়ের কাছে এসেছেন কোন দরকারে। কথা বলছেন উনার সাথে।
মহিলা যেন কান খাড়া করে সেই লোকের কথা শুনছিলেন।আর বিড়বিড় করছিলেন
হঠাত ই উনি দৌড় দিলেন রান্না ঘরে। মাছ কুটার বড় বটিটা এনে সোজা ড্রয়িং রুমে।
তোকে আমি চিনেছি শয়তান বলে চোখের পলকে ঝাপিয়ে পড়লেন সেই লোকটার উপরে। এলোপাথারি ভাবে কোপাতে লাগলেন। তার গায়ে যেন অসুরের শক্তি ভর করেছে। সারা ঘর ভেসে গেছে রক্তে। সেই লোকটি সেখানেই স্পট ডেড।
পুলিশ এলো। সেই মহিলা কে এরেস্ট করল। আমার মা কেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে নিয়ে গেল থানায়। মহিলার নামে খুনের কেস দেয়া হলেও যেহেতু মেন্টাল পেশেন্ট আগে থেকেই তাই তাকে জেল ফাসি না দিয়ে মেন্টাল এসাইলামে ভর্তির নির্দেশ দেয়া হল কোর্ট থেকে।

একদিন সেই এসাইলামের ডাক্তার ফোন দিলেন মা কে।বললেন সেই মহিলা মৃত্যু শয্যায়। মার সাথে দেখা করতে চান।
মা গেলেন দেখা করতে।

দেখলেন একেবারেই স্বাভাবিক। পাগলামির কোন লক্ষন ই নেই তার মধ্যে। মৃত্যু আসন্ন তারপরেও অদ্ভুত একটা প্রশান্তি খেলা করছে যেন তার চোখে মুখে। যেন মৃত্যু কে আলিংগনের জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন
এসো স্টেলা। তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছি। তুমি আমার অনেক সেবা করেছ। আমার গয়না গাটি যা আছে সব তোমাকে দিয়ে যাচ্ছি।

মা আপত্তি করলেন। উনি বললেন দেখ একজন মৃত্যু পথ যাত্রী যখন তার শেষ ইচ্ছে জানায় এটা কি পুরন করা উচিত নয়।
আমার গয়না গাটি সব তুমি পাবে এটা আমার শেষ ইচ্ছা।

আপনি এমন কাজ কেন করতে গেলেন??
দেখো স্টেলা আমার জায়গায় তুমি হলে তুমিও একই কাজ করতে।
আমার স্বামী তখন বিজনেস করতেন খুলনায়।আমরা সেখানেই থাকতাম। ভালই ছিলাম।এর মধ্যে শুরু হয়ে গেল মুক্তিযুদ্ধ। আমি তখন তিন মাসের প্রেগ্নেন্ট। তাই আমাকে ফেলে আমার স্বামি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে যান নি।কিন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের গোপনে টাকা পয়সা দিতেন। এটা জেনে গেছিল তার ই এক পার্টনার। সে এটা বলে দেয় আর্মিকে। একদিন আমার স্বামী কে আর্মিরা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়।তাদের বাড়ি চিনিয়ে নিয়ে আসে অই হারামজাদাই।আমাকেও সে তুলে দেয় ওদের হাতে।অদের নির্মম অত্যাচারে আমার এবর্শন হয়ে যায়।পরবর্তী তে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা উদ্ধার করে। খবর পেয়ে আমার বাবা আমাকে নিয়ে আসে। বহুদিন আমার চিকিতসা চলে। এর মধ্যেই আমার পাগলামি দেখা দেয়।বাবা মারা যাবার সময় আমার বড় ভাই এর হাতে আমাকে দেখা শুনার ভার দিয়ে যান।
সেদিন সেই লোকটার গলা শুনেই বুঝে যাই এ ই সে লোক।তারপরেই আমি তাকে মেরে ফেলি। আমার বিন্দু মাত্র অনুশোচনা নেই।

জানেন মা কিন্তু অই গয়না বিক্রির টাকা পুরোটাই দান করে দেন অনাথ আশ্রমে যাতে সেই মহিলার আত্মা শান্তি পায়। রিটায়ার করার পরে সেখানেই কাটিয়ে দেন বাকি জীবন অনাথ বাচ্চাদের সেবায়
স্টিফেনের মায়ের গল্প টা তন্ময় হয়ে শুনছিলাম। এর মধ্যেই ট্রেন চলে এল চিটাগাং স্টেশনে। আমি চললাম আমার মা কে দেখতে

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ

আজকের দিন-তারিখ

  • শনিবার (সকাল ১১:৪৭)
  • ২৭ জুলাই, ২০২৪
  • ২০ মহর্‌রম, ১৪৪৬
  • ১২ শ্রাবণ, ১৪৩১ (বর্ষাকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Sundarban IT