• আজ- শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:১৪ অপরাহ্ন
Logo

মনের অসীম শক্তি

তারিক ইসলাম / ১১১ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৩

add 1
  • তারিক ইসলাম

আমাদের সকল সচেতনতার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে মন। শিল্প-সাহিত্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যা কিছুই আমরা এখন বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি তার সবকিছুর ধারণাই প্রথম এসেছে মনে। সুস্থ, সুন্দর মনের ধারণার বীজই পরবর্তীতে পত্র-পুষ্পে প্রস্ফুটিত হয়ে বাস্তব রূপ নিয়েছে। মনকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। আজ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা মনকে ল্যাবরেটরিতে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতে পারেননি। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন মন মানুষের সকল শক্তির উৎস। মনের এই শক্তি রহস্যকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারলেই এই শক্তিকে আমরা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারবো। মানুষের শক্তির আসল উৎস দেহ নয়, চেতনা। দেহ হচ্ছে চেতনার বসবাস। আর মনের শক্তি এই চেতনারই একটা রূপমাত্র।

মনকে সুস্থ রাখতে পারলে সাফল্যের সবকিছুই নিয়ন্ত্রণে থাকবে। অর্থাৎ মানসিক সুস্থ্যতা তো সকল কিছুরই উৎস। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বা লক্ষ্য দ্বারাই মন নিয়ন্ত্রিত, আর মস্তিষ্ক পরিচালিত হয়। দৃষ্টিভঙ্গি আবার দু’ধরনের। ইতিবাচক ও নেতিবাচক। আত্মবিকাশী বা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিই মানসিক সুস্থতা। আবার আত্মবিনাশী বা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিই মানসিক অসুস্থতা। মন সম্পর্কে আমাদের অতীতের সাধকরা যেভাবে বলেছেন বর্তমান কালের বিজ্ঞানীরাও ঠিক একইভাবে বলেন, Mind is the source of all power. অর্থাৎ একজন মানুষের আসল শক্তির উৎস কিন্তু তার হাত নয়, পা নয়, তার পেশি মন, এ শক্তির উৎস হচ্ছে তার মন। আর মনের এই শক্তি রহস্যকে যদি বুঝতে পারি, তাহলে আমরা এই শক্তিকে চমৎকারভাবে ব্যবহারও করতে পারবো।

মনের এই শক্তিকে সুপরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করতে পারলে আপনি যা চান, সেই প্রতিটি যুক্তিসঙ্গত চাওয়াকে আপনি পাওয়ার রূপান্তরিত করতে পারবেন। মনের শক্তি যে কী অসীম, তার প্রমাণ আধুনিক কালের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। কথা বলতে পারেন না; কিন্তু এই মানুষটিই তার মনের শক্তি দিয়ে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড পরিভ্রমণ করে লিখলেন সাড়া জাগানো বই ‘দি ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’। মানব মনের অসীম শক্তি এভাবে দেহের সীমাদ্ধতাকেও ছাড়িয়ে যায়। প্রবাদ আছে, মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। মানুষ নিজেকে যা ভাবতে পারে, একসময় তাই করতে পারে। আত্মবিকাশি চিন্তা, ইতিবাচক চিন্তা প্রয়োজন মানসি ভালো থাকা, সাফ্যলতার জন্য, সুন্দর সুখী জীবনের জন্য। সুস্বাস্থ্যই জীবন। আর সুস্বাস্থ্য মানেই মানসিক, শারীরিক, আত্মিক সুস্থ্যতা। আগেই বলেছি, মানসিক সুস্থ্যতার ভিত্তি হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি, লক্ষ্য বা অভিপ্রায়। মন পরিচালিত হয় দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ্য বা অভিপ্রায় দিয়েই। আর মস্তিষ্ককে চালায় মন। বিজ্ঞানীরা বলেন, একজন প্রোগ্রামার যেভাবে কম্পিউটারকে পরিচালিত করে, তেমনি মন মস্তিষ্ককে পরিচালিত করে।

আমাদের মনের রয়েছে তিনটি স্তর:

সচেতন মন:

সবিকিছুর নিজের ধরণা, যুক্তি ও বিশ্বাসের প্রেক্ষিতে বিচার-বিবেচনা করে।

অবচেতন মন:

অবচেতন মন ভালোমন্দ কোনোকিছুই বিচার করে না। পূর্বে প্রাপ্ত তথ্য, পরিকল্পনা বা ধারণা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সে কাজ করে। অবচেতন মন আবার সচেতন মনের কথা সহজেই শোনে। অবচেতন মন সবসময়ই কাজ চায় । সে প্রায়শই প্রভাবিত হয় পরিপার্শ্বিকতা দ্বারা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যার কাঁচামাল হয় ভয়-ভীতি, নানা অমূলক আশঙ্কা কিংবা অন্যান্য অযাচিত বিষয় ইত্যাদি। কিন্তু সচেতন প্রচেষ্টায় অবচেতন মনকে কাজে লাগিয়ে অনেক আপাত অসম্ভবকেও সম্ভব করে তোলে যায়। অবচেতন মনের এই শক্তিভাণ্ডারকে ব্যবহার করেই ফরাসি মনোবিজ্ঞানী ও সাইকোথেরাপিস্ট এমিল কুয়ে গত শতাব্দীর শুরুতে অটোসাজেশনের মাধ্যকে বহু রোগীকে সুস্থ করে তোলেন। ১৯২০ সালে এ নিয়ে প্রকাশিত হয় তার বই-Self-Mastery Through Conscious Autosuggestion.

অচেতন বা অতিচেতন মন:

বিজ্ঞানীরা যাকে বলছেন অচেতন মন, সাধকরা তাকেই বলেন অতিচেতন মন। অবচেতন ও অতিচেতন মনের মাঝখানের দরজাটি খুলতে পারলেই সচেতন মন সংযোগ স্থাপন করতে পারে মহাচেতনার সাথে।

প্রতিটি মানুষের মধ্যেই অসীম শক্তি নিহিত আছে, এবং এটি ব্যবহার করে মানুষ এমন কিছু জয় করে ফেলতে পারে, যা সে নিজেই কখনও ভাবতে পারেনি। এই শক্তি বাড়াতে কিংবা বাইরে নিয়ে আসতে সচেতনভাবে চেষ্টা করা যায়, এবং এ চেষ্টায় ভালো ফল আসে। সমস্যা দেখে তা থেকে পালিয়ে না গিয়ে ধৈর্য ও কৌশলের সাথে তার মুখোমুখি দাঁড়ালে সমাধান মিলে যায়। তবে যে সমস্যার সমাধান অন্য সমস্যার সূচনা করে, তা সমাধান না করাই ভালো। মনের শক্তি দিয়ে এমন অনেক কাজ করে ফেলা যায়, যা সাধারণ যুক্তিতে অনেকটাই ব্যাখ্যাতীত। মনে তীব্র ইচ্ছে থাকলে শক্তি ভূতে জোগায়! এমন কিছু কাজ আছে, যা করার সুযোগ পেলে আমরা সময় বের করে হলেও কাজগুলো করি, যদি শরীর খুব অসুস্থ না থাকে। (নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন, এমন কী কী কাজ আছে, যা করার সুযোগ পেলেই আপনি খুশিতে লাফিয়ে উঠবেন!) তখন তো মনের শক্তির অভাব হয় না আমাদের! মজা পেলেই করব, না পেলে করব না, এই মানসিকতা থাকে যদি, তবে জীবনে বড়ো হওয়া কঠিন, কেননা যা-কিছু করা খুব জরুরি, তার বেশিরভাগই মজার কোনও কাজ নয়। আমাদের সুবিধেমতো তো আর কাজের গুরুত্ব নির্ধারিত হয় না, তাই না? তাই যে কাজের জন্য মনের ইচ্ছে ও শক্তি তৈরি করতে পারব না, সে কাজের ফলও আমরা ভোগ করতে পারব না, এটাই স্বাভাবিক। মানুষ যখন মনের শক্তিতে চলে, তখন সে প্রকৃতপক্ষে বিশ্বাস ও চিন্তার একধরনের স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দেয়, যা থেকে কোনও অবসাদ আসে না, যার কোনও নিঃশেষ নেই। এ কারণেই মানুষ যা করতে ভালোবাসে, তা সে অস্বাভাবিক পরিশ্রম করেও করতে পারে। যা করতে না পারলে কারও অস্তিত্ব টেকানোই কঠিন হয়ে পড়ে, তা সে এমন আসুরিক শক্তিতে করে ফেলতে পারে অত্যাশ্চর্য দক্ষতায়, যা স্বাভাবিক মানুষের কল্পনাতেও হয়তো আসবে না। এ সমস্ত ব্যাপার জাগতিক অভিজ্ঞতার অনেক ঊর্ধ্বে। ভেতরটাকে জাগিয়ে তুলতে পারলে, ভেতরের মানুষটাকে দিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করিয়ে নিতে পারলে, মনের শক্তির অমিতপ্রবাহে নিজেকে চালনা করতে পারলে মানুষ পুরো পৃথিবীকে বিস্ময়কর সব কাজ করে দেখাতে পারে।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ

আজকের দিন-তারিখ

  • শনিবার (দুপুর ১২:১৪)
  • ২৭ জুলাই, ২০২৪
  • ২০ মহর্‌রম, ১৪৪৬
  • ১২ শ্রাবণ, ১৪৩১ (বর্ষাকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Sundarban IT