বরিশালের সূর্য কখন উঠে আর কখন অস্ত যায় ধরাই যায় না। তা ছাড়া রুহীর কাছে সূর্য উঠা কোন ব্যাপার না। সকাল ১০টা বাজে, এখনো সে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। এমনিতেও সে ক্লাস টেস্ট পরিক্ষায় ৪সাবজেক্ট ফেল করেছে তাতে তার কোন সংকোচ বা আফসোস নেই।দুপুর ১২টায় ঘুম থেকে উঠে। কিছু একটার আওয়াজে রুহীর ঘুম ভেঙে যায়। অনেক কষ্টে মাথা তুলে চারিপাশ দেখে। আওয়াজটা তাঁর খুব চিনা চিনা লাগছে। মনে হচ্ছে ভ্রোমর পোকা তার মাথার আশে পাশে ভোঁ ভোঁ শব্দ করে ঘুরছে। বালিশের নিচ থেকে ফোনটা চিত করে দেখে তানহা কল দিয়েছে।তানহার কল পেয়ে রুহী চমকে যায় এরকম সময়ে তানহা তো কখনো কল করে না কারন সে যানে রুহী ১২টার আগে ঘুম থেকে উঠে না, আজ কেন কল করলো! রুহী ফোনটা রিসিভ করতেই তানহা বলে উঠলো “তারাতাড়ি ক্যাম্পাসে আয়”
রুহী হাই তুলে বলল,”কেন? আজ যেতে পারবো না”
“কেন আসতে পারবি না? আজগে তিন দিন ধরে তুই কলেজে আসছিস না কল দিলে কল ধরছিস না, ব্যাপারটা কি.? ”
“কোন ব্যাপার টেপার না ”
“তুর বাবা সিদ্দিক সাহেব কলেজের স্টোর রুমে বসে আছে। তুর সাথে দেখা করার জন্য ”
“কি! বাবা এসেছে এই কথাটা আগে জানালি না কেন, ফোন রাখ আমি ৫মিনিটে আসছি।”
বাবা এসেছে শুনে রুহী ভয় পেয়ে যায়। তার বাবা কি রেজাল্টের কথা জেনে গেছে, আজগে হয়তো বাবা তার হাড্ডি গুড্ডি ভেঙে ফেলবে। কি মিথ্যাে বলবে রুহী বুঝতে পারে না। রুহীর একটা ভালো দিক হলো সে কখনো বানিয়ে মিথ্যা কথা বলতে পারে না। বাবা এসেছে শুনে রুহীর উচিত উড়ে উড়ে চলে যাওয়া কিন্তু সে তা করলো না, আস্তে ধীরে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে -দেয়ে কলেজের দিয়ে পা বাড়ালো। তাহার কছে গিয়ে রুহী শুধালো,
“বাবা কোথায়.?”
“স্টোর রুমে বসে আছে ”
রুহীর বাবা এসেছে শুনে তার বুকে মোচড় দেয়, ভাবতে থাকে বাবাকে কি মিথ্যা বলবে রুহী ভাবতে থাকে।
রুহী স্টোর রুমে গিয়ে দেখলো তার বাবা সিদ্দিক সাহেব একটা চেয়ার বসে তসবিতে হাত চালাচ্ছে। বাবার কাছাকাছি গিয়ে সাবধানি কন্ঠে ডাকলো। সিদ্দিক সাহেব তার মেয়েকে দেখে অতন্ত আনন্দবোধ করলো। ফিসফিসিয়ে রুহীকে তার পাশে বসতে বলল।রুহী তার বাবার পাশে থাকা চেয়াড়ে বসে বলল,” বাবা তুমাকে এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন.? ”
সিদ্দিক সাহেব বিরক্ত কন্ঠে শুধালেন,
“তুমার মামার এক আত্নীয় অসুস্থ বেঁচে থাকার কোন চান্স নেই, তার ২ছেলে ১ মেয়ে। বড় ছেলের বিয়ে হয়ে গেছে, তিনি বেঁচে থাকতে থাকতে ছোট ছেলের বিয়ে দেখে যেতে চান। ”
রুহী ভ্রু কুচকে শুধালো,
“তো এখন কি হয়েছে.?”
“আমি বলেছিলাম এক মাসের মধ্যে তুমাকে বিয়ে দিবো। তো ওনার ছোট ছেলেকে আমি দেখেছি তুমি কি বিয়েতে রাজি.? তুমার কি কোন পছন্দের ছেলে আছে.?” ”
রুহী রোদের নাম বলতে গিয়েও বলে না,
রুহী কোমল কন্ঠে শুধালো,
“না বাবা”
“পছন্দের ছেলে না থাকলে এই ছেলেকে বিয়ে করতে আপত্তি কোথায়.? ”
“তুমি কি বলতে চাইছ আমি এই বিয়েতে রাজি হয়ে যাই”
“তুমি এই বিয়েতে রাজি না হলেও আরো ছেলে দেখবো। কিন্তু এই একমাসের মধ্যে তুমার বিয়ে দিয়ে ছাড়বো। তুমার বড় বোন রুপার বিয়ে দিয়েছি এখন তুমারটা দিয়ে আমি হজে যাবো শান্তি মনে ”
“বাবা আমি যদি রাজি না হই তাহলে কি তুমি আমাকে জোর করে বিয়ে দিবে.?”
“নো।ছেলে তুমার মতো টেনেটুনে বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠা ছাএ নয়। বিসিএস দিয়ে বিজিবি হয়েছে। এমন ট্যালেন্টেড বয় ছেলেকে তুমি বিয়ে করবে না.? ”
“বিজিবি দের আয়ু কম থাকে বাবা। তাদের মরে যাওয়ার রিস্ক থাকে, যখন তখন ফট করে মরে যেতে পারে.”
সিদ্দিক সাহেব রেগে শুধালো,
“তুমি স্নাতকের ছাএী না হলে গালটা টেনে কসিয়ে একটা থাপ্পর বসাতাম তুমার গালে। জন্ম মৃত্যু সব আল্লাহর হাতে। তুমিও তো এখন ফট করে মরে যেতে পার, তাই বল কি সে তুমাকে বিয়ে করবে না,। ”
“তাই বলে আপরিচিত একজনের সাথে বিয়ে দিবে.? তা অসম্ভ বাবা। ”
সিদ্দিক সাহেব রেগে কটমট করতে করতে শুধালো,
“কথা বাড়িও না, রাজি থাকলে বল, এখানে বিয়ে হবে। ”
রুহী অসহায় চোখে তাকালো,
“তাই বলে কলেজে বিয়ে হবে.? কোন অনুষ্ঠান হবে না.? বান্ধুদের বলবো না.?”
“আগে বিয়েটা হয়ে যাক তার পর তুমি তুমার অসভ্য বন্ধুদের কোলে উঠে বসে থেকো আমি কোন আপত্তি করবো না ”
বাবার এমন কাথা শুনে রুহীর মাথা গুলিয়ে যায়। সে কথা বলার সব ভাষা হারিয়ে ফেলে। কি বলবে বুঝতে না পেরে রুহী বিয়েতে রাজি হয়ে যায়।