কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সারা বিশ্বে একটা উজ্বল নাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন শুধু কবি ছিলেন না তিনি ছিলেন পৃথিবীর লক্ষ কোটি লেখক ঔপন্যাসিক কবিদের গুরু। একজন বিরল বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি নিজেই ছিলেনএকটা প্রতিষ্ঠান। একটা মানুষ এক জীবনে কি করে এত কিছু সৃষ্টি করতে পারে সেটা ভাবতে গেলে খুব অবাক হতে হয়। যে মানুষটা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কোনোদিন গ্রহন করেননি তিনি আজ নিজেই সমস্ত স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পাঠ্য বিষয়। তার লেখা উপন্যাস, কবিতা, গান, চিঠিতে পাঠক শ্রোতাদের হৃদয় বারে বারে উদ্বেলিত হয়েছে।তার লেখা গান এখন তিনটে দেশের (ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা) জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে যার উদাহরণ পৃথিবীতে বোধহয় আর একটিও নেই। এরকম বিরল প্রতিভাধর মানুষ পৃথিবীর বুকে একবারই আসে হয়তো। যার রেশ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পৃথিবীতে বিরাজিত হয়।তিনি যা লিখে গেছেন সেটা এক জীবনে সবাই পড়েই উঠতে পারবে না অথচ তিনি শুধু কাগজ কলমেই তার সৃষ্টি করে গেছেন একটা জীবনে। তাই অতিমানব ছিলেন কবিগুরু একথা বললেও একটুও অত্যুক্তি করা হয় না। তার লেখা গান হৃদয় উদ্বেলিত করে আজও, মন খারাপ বা শরীর খারাপ হলে একমাত্র মহৌষধ কবিগুরুর গান। সবাই এভাবেই অনেক উপকার পেয়েছে। এমন যিনি সৃষ্টি করে গেছেন সেই স্রষ্টার জীবনেও অনেক করুণ কাহিনী আছে।তার নিজের তিন ছেলেমেয়ে ছিল, তাদের জীবনকাহিনীও অনেক করুণ,এক ছেলে আর এক মেয়ে অকালে মারা যায়। সে সব কষ্ট বুকে চেপে রেখেও তার সৃষ্টিতে আবালবৃদ্ধবনিতা আধুনিক সভ্যতা তার গানে আজও মাতোয়ারা হয়।কবিকে ভালোবাসতেই হবে শুধুমাত্র তার পৃথিবী সেরা গান গুলোর জন্য। অবচেতন মন মাঝে মাঝেই গুনগুন করে ওঠে তার প্রেম পর্যায়ের গানে।তার পূজা পর্যায়ের গান মনে ভক্তি এনে দেয়, প্রেম, পুজা সহ সব ঋতুর গান এই শতাব্দীতেও সমান প্রাসঙ্গিক।তার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনকে লেখা চিঠি সমূহ আজও মূল্যবান দলিল হয়ে রয়ে গেছে এই সময়ে। সেই কবে তিনি সৃষ্টি করে গেছেন তবু তার লেখা দেখে মনে হয় আজকের দিনের কথাই তিনি তুলে ধরেছেন, এতটাই দূরদর্শিতা ছিল কবিগুরুর।তখন না ছিল অত্যাধুনিক লেখার ব্যবস্থা না ছিল যাতায়াতের তেমন কোনো সুবিধা। ছিল না আজকের ইমেইল ইন্টারনেটের মতো কোনো অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা।একটা টেলিফোন,টেলিগ্ৰামের মাধ্যমে তখনকার যোগাযোগ ব্যবস্থা সীমিত ছিল। অথচ তার অত্যশ্চর্য সব সৃষ্টি সাগরপারের দেশগুলিতে পৌঁছে গিয়ে সমান ভাবে সমাদৃত হয়েছে। সারা ভারতবর্ষ জুড়ে তার সৃষ্টিসমূহ বিভিন্ন ভাষার মাধ্যমে প্রতিটা মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। শুধু মাত্র তার গান গেয়ে বহু শিল্পী বহুবছর ধরে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে চলেছে।তার অসামান্য সৃষ্টি শান্তিনিকেতন বিশ্ববিদ্যালয়।যেখানে প্রকৃতির মাঝে শিক্ষার অপরূপ ব্যবস্থা কেউ কখনো ভাবতেও পারেনি। কিন্তু বহুবছর আগে এই মানুষটাই ভেবেছিলেন প্রকৃতির মাঝে শ্রেষ্ঠতর শিক্ষাদানের উপায়।এত বছর বাদে আজও তিনি সমান প্রাসঙ্গিক মানুষের জীবনে এবং সারা বিশ্বে।তিনি গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ লিখে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নোবেল পুরস্কার অর্জন করে ভারতবাসীকে গর্বিত করেছেন।তার অসাধারণ গানগুলো ভারতীয় চলচ্চিত্রে নানা ভাষায় বহুবার ব্যবহৃত হয়ে চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করে গেছে শতাব্দী ধরে। মানুষের হৃদয়ে আজও আলোড়ন ফেলে দেয় তার অসংখ্য সুখশ্রাব্য গানগুলো। তার সৃষ্ট সাহিত্য পাঠ্য হিসেবে আমরা পেয়েছি আমাদের সময়ে স্কুল কলেজে।শিক্ষা শুরু করেছি “সহজ পাঠ”বইয়ের মাধ্যমে যা আজও ব্যতিক্রম হয়ে আছে। তার “দেনা পাওনা”গল্প লিখে বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন তার দূরদর্শিতা।তার এইরকম গল্পের প্রতিফলনআজও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই,রবিঠাকুর শুধুমাত্র সাহিত্য সঙ্গীতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না।পরাধীন অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামেও তার ভুমিকা অনস্বীকার্য ছিল। উত্তাল সেই স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় ব্রিটিশদের জালিয়ানওয়ালা বাগের ঘৃন্য গনহত্যার প্রতিবাদে তিনি ব্রিটিশ প্রদত্ত নাইট উপাধি ত্যাগ করে তীব্র সমালোচনা করেছিলেন ব্রিটিশ শাসকদের। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অনেক কবি সাহিত্যিক মানুষ পেয়েছে কিন্তু কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একটাই। অনেক নামী কবি সাহিত্যিকদের মাঝেও তিনি ব্যতিক্রমী হয়ে সবসময় উজ্বল জোতিস্ক হয়ে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে।তার জম্মজয়ন্তী সারা পৃথিবী এবং আমাদের দেশ ভারতবর্ষ জুড়ে নানান অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যেভাবে পালিত হয় তা একজন রাষ্ট্রনায়কেরও এইভাবে জন্মদিবস পালন করার সৌভাগ্য হয়না। এই হলো আমাদের প্রিয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যাকে নিয়ে যতই লিখি না কেন লক্ষ খাতার পাতায় তবুও কখনোই ফুরোবে না তার কথা। ৮ই মে ২০২৩ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২ তম জন্মজয়ন্তীর বছরে আমার অকুন্ঠ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন এবং প্রণাম জানাই আমার প্রাণের ঠাকুরকে।
হে কবিগুরু লহ প্রণাম।