ঈদ হলো মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। ঈদের আনন্দ মানে একটি পূর্নমিলনী অনুষ্ঠান,যেখানে বাবা-মা, ভাই- বোন, স্ত্রী -সন্তান, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু – বান্ধব সবাই একত্রিত হয়ে একটি খুশির দিন উপভোগ করার নামই ঈদ ।নতুন জামা গায়ে পড়ে, হাতে মেয়েদীর ডিজাইন করে, পাড়ায় মহল্লায় , আত্মীয় স্বজনের বাড়ি ঘুরে বেড়ানোর নামই ঈদ, ভালো মন্দের খাবার তো আছেই। ঈদ মোবারক এই শব্দটা বলার জন্য একটি বছর অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু প্রবাসীদের ঈদ কেমন কাটেছে তার খবর নেওয়ার মতো কেউ থাকেনা, এমনও কেউ আছে, যা ঈদের দিনেও ডিউটি করতে হয়, একটু সেমাই রান্না করার মতো সময় হয়না। ঈদের নামাজ পড়ে সিভিল ডেস খুলে ডিউটির ইউনিফর্ম পড়ে চলে যেতে হয়, কারো সাথে দেখাতো দূরের কথা মায়ের সাথে একটু ফোনালাপ করার মতো সময় হয়না। এই প্রবাসে কেউ কাউকে দেখে না, খাইছে কিনা কেউ জিজ্ঞেসও করে না, কারণ সবাই কর্ম নিয়ে ব্যস্ত, কখন মাস শেষ হবে দেশে টাকা পাঠাবে, পরিবার, পরিজন ভালো থাকবে, সুখে থাকবে। প্রবাসে যে লোকটা দিনের পর দিন গাধারখাটুনি খাটে অক্লান্ত পরিশ্রম করে, পরিবার কে সুখে রাখার জন্য ঈদের দিনে পরিবার গুলো তার কথাই ভুলে যায়, একবারও ভাবেনা প্রবাসী যদি টাকা না পাঠাতো আমরা ভালো কাপড় ভালো খাবার খেয়ে সুখ থাকতে পাড়তাম না, কিন্তু ঈদের দিনে পরিবার ঠিকই হাসি খুশি আনন্দে দিন কাঁটায় আর প্রবাসীর কথা ভুলে যায়, কল দিলে বলে এখন না পরে কল দিও। এই কষ্টটা একজন প্রবাসী কতোটা ধৈর্য্য ধরে সহ্য করে একমাত্র প্রবাসী ছাড়া কেউই জানেনা। হায়রে প্রবাসীর ঈদ, একজন জেলের আসামীরও ঈদের দিনে একটু ভালো মন্দ খেয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করে বিন্দু পরিমাণ হলেও ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার সুযোগ পায়, কিন্তু প্রবাসীদের বেলা তা হয়না। প্রবাসীদের ঈদ মানে নিজের আনন্দটা কে পরিবারের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া। প্রবাসী টাকা ইনকাম করে ঠিক কিন্তু ঈদ আসলে নিজের জন্য একটা শার্ট কিনতে টাকা হিসাব করে, আর ভাবে ধ্যাত নিজে একটা ভালো কাপড় কিনবো আর দেশে পরিবার কিনতে পারবেনা তা হয়না, তাই নিজে না কিনে পরিবার কে জিজ্ঞেস করে কার কি লাগবে, সবাই যে যার মতো করে চেয়ে নেয় কিন্তু প্রবাসী কিন্তু প্রবাসী কিছু কিনছে কিনা তা না জিজ্ঞেস করে বলে অমুক দাওনি সে রাগ করেছে, এরই নাম প্রবাসীর ঈদ। পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দটা না করতে পারা যে কতোটুকু কষ্ট তা প্রবাসীই বুঝে। পুরান কাপড় চোপড় আর নিত্যদিনের মতো খাবার খেয়েই ঈদের দিন কাটে। মাঝে মাঝে মনে হয় কতো বছর ধরে প্রবাসে ঈদ আসে না, প্রবাসে ঈদ প্রতিদিনের মতো। প্রবাস মানে দুঃখের তরঙ্গ বেয়ে সাত সমুদ্র পাড়িয়ে দিয়ে মনের আনন্দটা কে খাঁচায় বন্দী করে পরিবারের স্বপ্ন টা কে লালন পালন করা। একজন প্রবাসী কতোটা ধৈর্য্যশীল, উদার এবং মহত হয় পরিবারের জন্য আমি প্রবাসী না হলে বুঝতামনা। একজন প্রবাসী হতে হলে সাহসী এবং মনে প্রচুর ধৈর্য্য ধারণের শক্তি সঞ্চয় করতে হবে তবেই একজন ত্যাগী মানুষ হতে পারবে। দেশে প্রায় আশি ভাগ পরিবারের লোকজন প্রবাসে থাকে এবং প্রবাসীর আয়ের টাকা দিয়েই সুখের স্বপ্ন বুনে। এই যে, সামনে ঈদ আসছে পরিবার গুলো ঈদের কেনা কাটা করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, এমনকি প্রবাসী যুদ্ধা পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে। একজন প্রবাসী নিজের কথা ভাবেনা বলেই পরিবার গুলো সুখে আছে। প্রবাসী হলো এমনই সুভাগ্যবান পরিবারের সুখে সুখী, কখনো মনের ভিতরের কথা কাউকে বলতে পারেনা, বছরের পর বছর প্রবাসেই দিন কাটে কখন ঈদ আসে আর বছর ঘোরে বলতে পারেনা, শুধু টাকার পিছনে ছুটে হারিয়ে যায় মনের আনন্দ উল্লাস। হাজারো স্বপ্নের ভীড়ে কাঁদে প্রবাসীর ঈদ। কে আছে বলবে প্রবাসে ঈদ কেমন কেটেছে তোমার,ঈদের দিনে কি খেয়েছো,কি করছো,কোথায় ঘুরতে গেছো,ঈদের জন্য কি কেনাকাটা করেছো, এই জামাটা তোমাকে খুব ভালো মানিয়েছে, কেউ নাই এই প্রবাসে প্রশংসা করার মতো, কারণ প্রবাসে সবাই প্রবাসী, কারণ সব প্রবাসীর দুঃখই এক সূত্রে গাঁথা। প্রবাসীর ঈদ মানেই প্রতিদিনের মতো কাজের ফাঁকে মাকে কল দিয়ে বলা কেমন আছো মা, বাবা কেমন আছেন, ভাই বোন কেমন আছে, স্ত্রী সন্তান ওরা আছে? মা বলবেন, আমরা সবাই ভালো আছি, তুমি কেমন আছো? আগামীকাল ঈদের দিন তুমি নেই, তোমাকে ছাড়া আমরা সবাই একসাথে ঈদের আনন্দ করবো, খুব খারাপ লাগে। না মা আমার জন্য কোন চিন্তা করোনা, আমি ভালো আছি, ঈদ ভালো ভাবেই কাটিয়েছি, কেনাকাটা ও করেছি, ভালো খাবারও খেয়েছি, তোমরা সবাই কেনাকাটা করেছো তো সবাই খুশী আছেতো এই মিথ্যে কথার আড়ালে নিজের ঈদের আনন্দ লুকিয়ে রাখার নামই প্রবাসী। পরিবারের ঈদ মানেই প্রবাসীর ঈদ। ঈদের আনন্দ বয়ে আনুক সকল দেশ ও প্রবাসীর অনাবিল সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি। ভালো কাটুক আনন্দে কাটুক সকল প্রবাসীর ঈদ।