বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণ নিয়ে সংকট দূর হচ্ছে না। তাই নিরাপদ বাসযোগ্য পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা অতিজরুরি। নির্মল ও সতেজ বাতাস তথা বায়ু ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচতে পারে না, তেমনি নির্মল বায়ুর অভাব মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং দূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তার একটি বাংলাদেশ। এরমধ্যে বায়ু ও শব্দদূষণে রাজধানীর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বায়ু ও শব্দদূষণ শুধু রাজধানীরই সমস্যা নয়, বরং জাতীয় সমস্যা। দূষণ মানুষের শরীর ও মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। রাজধানীতে দূষণের বড় একটি কারণ হচ্ছে চলমান একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প। উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য পৃথিবীর সব স্থানেই কমবেশি দূষণ ঘটে। তবে বাংলাদেশে দূষণের মাত্রা সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখানে দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয় না, পরিবেশের কথা ভাবা হয় না। পরিকল্পিতভাবে পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন কর্মকান্ড চালালে দূষণ এত তীব্র হতো না।
দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, এজন্য উন্নয়ন জরুরি। আবার মানুষের জীবন ও প্রকৃতিকে রক্ষা করাও জরুরি। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে দূষণ রোধ করার কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। দূষণ রোধে দেশে যেসব আইন বা নীতি রয়েছে তার কঠোর বাস্তবায়ন করতে হবে। কোন একক কর্তৃপক্ষের পক্ষে দূষণ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তাই দূষণ প্রতিরোধে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। পরিবেশ দূষণমুক্ত করতে সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে ব্যক্তিকেও। অস্তিত্ব রক্ষার্থে পরিবেশদূষণ রোধ করতে হবে। পরিবেশদূষণ কমানোর জন্য বেশি বেশি সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করতে হবে। পাশাপাশি বেশি বেশি গাছ লাগাতে হবে। নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধ করুন। কীটনাশক সার ব্যবহারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। শিল্প-কারখানার বর্জ্য অপসারণ করতে হবে। পরিকল্পিতভাবে ড্রেনেজ ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি জৈব কৃষির ওপর অধিক জোর দিতে হবে। নির্বিচারে বন্য ও জলজ প্রাণী শিকার বন্ধ করতে হবে।
বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্পদকে সংরক্ষণের জন্য অভয়ারণ্য, উদ্ভিদ উদ্যান, অভয়াশ্রম, শিকার সংরক্ষিত এলাকা ইত্যাদি সৃষ্টি এবং বন-জঙ্গল, জলাশয়, নদী, সাগর দূষণমুক্ত রাখতে হবে। পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা ও বিস্ফোরণ ঘটানো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শব্দ দূষণরোধে যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার বন্ধ ও বিভিন্ন উৎস থেকে উৎপন্ন হওয়া শব্দ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এ ছাড়া হাজারও উপায় রয়েছে যা আমাদের সবুজ পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষমতা রাখে। একটি গাছ কর্তনের আগে তিনটি গাছ লাগাতে হবে। উন্নত দেশগুলোর পারমাণবিক পরীক্ষা ও অস্ত্র মজুদ নিষিদ্ধ করতে হবে। পরিকল্পিত নগরায়ণ, বসতি গড়ে তুলতে হবে। জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার হ্রাস করতে হবে। জলাশয়, নদী, সাগর দূষণমুক্ত রাখতে হবে। পরিবেশ বাঁচাতে কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য সংরক্ষণ ও সুরক্ষায় জনসচেতনতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রয়োজন পৃথিবীবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টা। তাহলেই একটি সজীব সুন্দর বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব হবে।