‘ধূমপান বিষপান’ এ সত্য কার না জানা? তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত করে মানুষ ধূমপান করে থাকে। পৃথিবীতে প্রচলিত সর্বাধিক মারাত্মক একটি নেশার নাম ধূমপান। ‘ধূমপান’ শব্দটি ‘ধূম’ এবং ‘পান’ শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে গঠিত। ধূম হলো ধোঁয়া বা বাষ্পের প্রতিশব্দ। যেহেতু তামাকজাতীয় পদার্থের ধোঁয়া গ্রহণ করা বা পান করা হয়, তাই একে ধোঁয়া পান বলা হয়। একসময় এটা বিলাসিতা, আভিজাত্য কিংবা স্মার্টনেস হিসেবে গণ্য হলেও বর্তমানে মরণঘাতী ভাইরাসরূপেই সর্বজনবিদিত। তামাকের উৎপত্তি আমেরিকা মহাদেশে। ইউরোপীয়রা কলোনি বিস্তারের পাশাপাশি এ বিষাক্ত দ্রব্যটি সিগারেট তৈরির আধুনিক মেশিন আবিষ্কার করে বাণিজ্যিকভাবে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়। বর্তমানে এর কারণে ধূমপায়ী ব্যক্তিসহ আশেপাশের মানুষজন সাথে পরিবেশের ভারসাম্যও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে চাকরিজীবীরাও এ থেকে বাদ যাচ্ছে না। বর্তমানে বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে ধূমপান একটি ফ্যাশন বা স্মার্টনেসে পরিণত হয়েছে। ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনে। এটা ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয় শরীরের সব অঙ্গ। ধূমপানের কুফল হিসেবে ফুসফুসের ক্যানসার, হার্টের অ্যাটাক, মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে বাধা, যৌন ক্ষমতা হ্রাসসহ নানা ক্ষতিকর দিক রয়েছে। ধূমপান মানুষের আয়ু কমিয়ে দেয়, পরিবেশ দূষণ করে। ধূমপায়ীর আশপাশের অধূমপায়ীরাও ধূমপানজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বর্তমানে দেশের ৩৫ শতাংশের বেশি মানুষ তামাক ব্যবহার করছে। তবে এ সংখ্যার চেয়েও আরো বেশি আশঙ্কাজনক পরোক্ষ ধূমপানের হার। বর্তমানে দেশে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ। পরোক্ষ ধূমপানের হার এভাবে বেড়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ অসচেতনতা এবং আইনের বাস্তবায়নহীনতা। পারিবারিক প্রভাব, ধূমপায়ী বন্ধু-বান্ধবের সংস্পর্শ, স্মার্টনেস বৃদ্ধি, হতাশা, অবসাদ কিংবা কৌতূহলবশতও অনেকে এই নেশায় জড়িয়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুযায়ী, ধূমপান যক্ষ্মা, ফুসফুসের ক্যান্সারসহ নানা ধরনের মারাত্মক রোগের প্রধান কারণ। ধূমপানের ক্ষতি থেকে লক্ষাধিক মানুষকে বাঁচাতে এবং ধূমপানমুক্ত দেশ গড়তে প্রয়োজন সচেতনতার। ২০১৩ সালে সংশোধিত ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে জনসমক্ষে চলাফেরার স্থান বা গণপরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ। এই আইনটি যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। দেশে পুরোপুরি ধূমপান বন্ধ করা সম্ভব নয় তাই ধূমপায়ীদের জন্য স্মোক জোনের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ধূমপানের কুফল সম্পর্কে বিজ্ঞাপন, আর্টিকেলসহ এর বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে জনগণের কাছে প্রচার করতে হবে। মাদক, মাদকের উৎস এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করতে হবে। সর্বোপরি ধূমপান পরিত্যাগে প্রয়োজন প্রবল ইচ্ছাশক্তির তাই সচেতনতার বিকল্প নেই।