• আজ- শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:১২ অপরাহ্ন

তারাবি নামাজে তাড়াহুড়োর বিধান কি?

লেখক : / ১৬৪ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০২৩

add 1

তারাবির নামাজ আদায়ে অতি মাত্রায় তাড়াহুড়ো করা এবং তারাবির নামাজ আদায়ে অবহেলা করা একটি শরিয়ত পরিপন্থী কাজ। যেমন, মুরগির ঠোকর দেয়ার মত করে নামাজ আদায় করা এবং তারাবির নামাজে কোরান খতম করার উদ্দেশ্যে তাড়াতাড়ি কিরাত পড়া। শেখ জামাল উদ্দিন আল কাসেমি রহ. বলেন, মনে রাখতে হবে, তারাবির নামাজ রমজান মাসে অবশ্যই সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, অধিকাংশ মসজিদের ইমামদের দেখা যায়, তারা তাদের মসজিদ সমূহে তারাবির নামাজ তাড়াহুড়ো করে তারাবির নামাজ আদায় করতে অভ্যস্ত। ফলে তারা নামাজের আরকান সুন্নাত ইত্যাদি আদায়ে অবহেলা করে। নামাজ তাড়াহুড়ো করে শেষ করার প্রবণতায় তারা রুকু সেজদা আদায়ে ধীরস্থিরতা ছেড়ে দেয়, কিরাত পড়তে তাড়াহুড়ো করে এবং কোরানের আয়াতের শব্দগুলোকে পরিবর্তন করে ফেলে।  এ ধরনের নামাজ এবং নেক আমল দ্বারা শয়তান ঈমানদারদের ধোঁকা দেয়া ও তাদের বোকা বানানোর চক্রান্ত। শয়তান তাদের আমল করা সত্ত্বেও আমলটিকে নষ্ট করে দেয় এবং যারা এ ধরনের তাড়াহুড়োর অনুকরণ করে, তাদের নামাজ অনেক সময় ইবাদতের পরিবর্তে তা হাসি ঠাট্টায় পরিণত হয়।
তাই আমরা বলি, একজন মুসল্লির উপর কর্তব্য হল, সে তার নামাজের বাহ্যিক যেমন: কিরাত, দাঁড়ানো, রুকু-সেজদা ইত্যাদি এবং আধ্যাত্মিক যেমন: একাগ্রতা, অন্তরের উপস্থিতি, পরিপূর্ণ ইখলাস, কিরাত এবং নামাজের তাসবিহ ইত্যাদির অর্থের মধ্যে চিন্তা ফিকির করা। নামাজের বাহ্যিক সৌন্দর্য হল, মানুষের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সাথে সম্পৃক্ত আর নামাজের বাতিনি সৌন্দর্য, সৌন্দর্য নামাজির অন্তর বা আত্মার সাথে সম্পৃক্ত।
ইমাম গাজালি রহ. বলেন, যে ব্যক্তি নামাজের বাহ্যিক দিকটি লক্ষ্য রাখেন কিন্তু আধ্যাত্মিকতার প্রতি তেমন কোন গুরুত্ব দেন না, তার একটি দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির মত যে কোন একজন বাদশাকে একটি মৃত ছাগলের বাচ্চা উপহার দিল
আর যে ব্যক্তি নামাজের জাহেরি কাজ গুলোতে শৈথিল্য প্রদর্শন করে তার দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে, কোন বাদশাকে একটি কান কাটা, উভয় চক্ষু নষ্ট এমন একটি জন্তু হাদিয়া দিলেন।
মনে রাখতে হবে, এখানে এ দুই জন লোকই একজন বাদশা মানহানি করেছে এবং বাদশার মর্যাদাকে খাট করেছে। তবে উভয় ব্যক্তির অপরাধ অবশ্যই এক রকম নয়, ফলে তাদের উভয়ের শাস্তি ও এক রকম হবে না।
তার পর ইমাম গাজ্জালি রহ. বলেন নিশ্চয় তুমি তোমার প্রভুকে তোমার নামাজ হাদিয়া দিচ্ছ, তোমাকে অবশ্যই এ ধরনের নামাজ হা দিয়া দেয়ার থেকে বিরত থাকতে হবে ,যে নামাজ দ্বারা তোমাকে শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়।
শেখ উসাইমিন রহ. রাসূল সা. এর কিয়ামুলাইল এবং তার সাহাবিদের কিয়ামুলাইলের আলোচনা করতে গিয়ে এক জায়গায় বলেন : বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ যেভাবে তারাবির নামাজ আদায় করেন তা সম্পূর্ণ শরিয়তের পরিপন্থী, তারা তারাবির নামাজ এত দ্রুত আদায় করে, নামাজের ওয়াজিব, নামাজে ধীরস্থিরতা এবং শান্তি সৃষ্ট তা বজায় ইত্যাদিতর প্রতি কোন গুরুত্ব প্রদান তারা করে না, অথচ এ গুলো নামাজের রুকন, যেগুলো আদায় ব্যতীত নামাজ শুদ্ধই হয় না।
তারা তাদের পিছনের নামাজি-অসুস্থ, রুগি, দুর্বল এবং বৃদ্ধদের শুধু শুধু কষ্ট দেয় এবং তারা নিজেদের উপর অত্যাচার করে এবং অন্যদের উপরও অত্যাচার করে।
বিজ্ঞ আলেমগন বলেন, একজন ইমামের জন্য এত তাড়াহুড়ো করা, যাতে তার পিছনে নামাজিরা সুন্নাত আদায় করতে পারে না, তাহলে তার নামাজ অবশ্যই মাকরূহ হবে।
আর যদি ইমাম এমন তাড়াহুড়ো করে যার ফলে নামাজিরা তার পিছনে ফরজ আদায় করতেও সক্ষম হয় না, তার পরিণতি কি হতে পারে ? আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।
শেখ মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব রহ. কে তারাবির নামাজে তাড়াহুড়ো প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তরে বলেন, তিনি প্রশ্ন কারিকে বলেন- তোমার কথা ইমাম তাড়াতাড়ি করলে তার পিছনে অনেক মানুষ নামাজ আদায় করবে আর যখন সে ধীরস্থির ভাবে নামাজ আদায় করে তখন তার পিছনে নামাজির সংখ্যা কমে যাবে- এর আলোকে আমি বলব, শয়তানের উদ্দেশ্য হল মানুষকে নেক আমল হতে বিরত রাখা, আর শয়তান যখন তা করতে সক্ষম হয়ে উঠে না, তখন তার জীবন মরণ চেষ্টা থাকে মানুষের আমলকে নষ্ট করা।
দু:খের বিষয় হল, আমাদের দেশের অধিকাংশ ইমামরা তারাবির নামাজে এমন সব কাজ করে যা অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই বলা চলে না।
তারা অর্থহীন নামাজ আদায় করে, তারা ঠিক মত রুকু করে না এবং ঠিক মত সেজদা করে না। অথচ ঠিক মত রুকু-সেজদা না করলে নামাজই শুদ্ধ হয় না।
মনে রাখতে হবে,মূলত: নামাজের উদ্দেশ্যই হল একাগ্রচিত্তে আল্লাহর সম্মুখে বিনয় ও নম্রতার সাথে দণ্ডায়মান হওয়া এবং কোরান তেলাওয়াতে চলাকালে তা হতে উপদেশ গ্রহণ করা। কিন্তু নামাজের এ মহৎ উদ্দেশ্য তাড়াহুড়ো করে নামাজ আদায় করলে তা পূরণ হয় না। সুতরাং ইমামের সাথে তাড়াহুড়ো করে বিশ রাকাত আদায় করার চেয়ে ধীরস্থির খুশু ও বিনয়ের সাথে ইমামের পিছনে দশ রাকাত পড়াই উত্তম।
রাকাতের আধিক্যের চেয়ে সুন্দরভাবে নামাজ আদায়ের প্রতি যত্নবান হও; আর ইহাই তোমার জন্য উপকারী ও সর্বোত্তম।
আমরা যে কথাগুলো আলোচনা করলাম, এর উপরই আমল করা উচিত।
আর যদি ইমাম ও মোক্তাদির মাঝে এ নিয়ে মতভেদ দেখা দেয় এবং মোক্তাদিরা তাড়াহুড়ো নামাজে অভ্যস্ত এবং তারা যদি ইমাম এর সাথে সুন্নাত অনুযায়ী নামাজ আদায় করতে অসম্মতি জানান তখনও ইমামের জন্য করণীয় হল, সে ধীরস্থির নামাজ আদায়ে উৎসাহী হবে এবং কোন ভাবেই নামাজে এমন তাড়াহুড়ো করবে না যাতে ধীরস্থিরতার বিঘ্ন হয়।
এ সকল ক্ষেত্রে ইমাম সাহেবের জন্য নামাজে পূর্ণ রুকু সেজদা এবং ধীরস্থিরতা বজায় রেখে তাড়া হুড়া করে দীর্ঘ লম্বা কিরাত পড়ার চেয়ে ছোট কিরাত পড়া উত্তম।
অনুরূপ ভাবে দীর্ঘ কিরাত এবং রুকু সেজদায় ধীরস্থিরতা বজায় রেখে, দশ রাকাত নামাজ আদায় করা তাড়াহুড়ো করে বিশ রাকাত নামাজ আদায় করার তুলনায় উত্তম।
কারণ, নামাজের আসল এবং চালিকা শক্তিই হল মানুষের মন আল্লাহর দিক ধাবিত হওয়া। অনেক সময় আছে তখন কম বেশির চেয়ে উত্তম হয়ে থাকে।
কিতাবুস্সুনান ওয়াল মুবতাদিয়াত গ্রন্থকার বলেন,অনেক ইমামের নামাজ পাগলের নামাজের সাদৃশ্য। বিশেষ করে তারাবির নামাজ তিনি বলেন তাদের দেখা যায় তারা বিশ মিনিটে তেইশ রাকাত নামাজ আদায় করেন এবং প্রত্যেক রাকাতে তা সুরা আলা, দোহা এবং সুরা রহমানের এক চতুর্থাংশ পড়ে নামাজ শেষ করেন। এ ধরনের নামাজ সকলের ঐক্য মতের ভিত্তিতে সম্পূর্ণ বাতিল, কারণ তাদের নামাজ হল মুনাফেকদের নামাজ সমতুল্য।
আল্লাহ মুনাফেকদের নামাজ সম্পর্ক বলেন: এবং যখন তারা নামাজে দণ্ডায়মান হয় তখন তারা অলসতা করে । তারা লোক দেখানো নামাজ আদায় করে। এবং তারা খুব কমই আল্লাহকে স্মরণ করে। তাদের নামাজ সফল মুমিনরেদর নামাজের মত নয় যাদের নামাজ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন: অবশ্যই ঐ সকল ঈমানদাররা সফল কাম যার তাদের নামাজে বিনয়ী। এবং তাদের নামাজ রাসূল সা. যে ধরনের নামাজ আদায় হতে বারণ এবং নিন্দা করেছেন -কাকের ঠোকর, নামাজে চুরি ইত্যাদি-সে নামাজের মতই নয়। আল্লামা দারমি আবুল আলিয়া হতে বর্ণনা করেন, আমরা বিভিন্ন লোকের নিকট হতে ইলম অর্জন করার জন্য উপস্থিত হতাম, তখন আমরা তার নামাজের প্রতি লক্ষ্য করতাম, যখন দেখতাম তার নামাজ সুন্দর,আমরা বলতাম তার অন্য সব কিছুই সুন্দর। আর যখন দেখতে পেতাম তার নামাজ অসুন্দর, আমরা তার থেকে দুরে সরে যেতাম এবং বলতাম তার অন্য সব কিছুই এর চেয়েও বেশি অসুন্দর।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ

আজকের দিন-তারিখ

  • শনিবার (বিকাল ৪:১২)
  • ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১১ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬
  • ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ (হেমন্তকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Sundarban IT