• আজ- সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৪৮ অপরাহ্ন

জ্যামিতি ক্লাসে আমরা

শাহীন খান / ৩০৯ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : সোমবার, ২২ মে, ২০২৩

add 1

উৎসর্গ: প্রয়াত শিক্ষক শ্রীমান ধীরেনশাহীন খান
খবর আছে! গাবলুটা আজ ক্লাসে না এলে খবরই আছে। বুকের ভেতর ঢিপঢিপ, চোখে মুখে দারুণ উৎকণ্ঠা! কী জানি কী হয়, কার পিঠের চামড়া উঠে আসে ধীরেন স্যারের বেত যুগলে। কে যায় হাসপাতালে, কে বা কেঁদে কেঁদে গড়াগড়ি দিয়ে সারা হয় ক্লাসরুমে।একটু পরেই তো ঢংঢং করে ঘণ্টা পড়বে। ধীরেন স্যার বেত নিয়ে আসবেন। স্কুল পালানো” লাল গোল্লা” আর দুসপ্তাহ ধরে একই পড়া” নির্দিষ্ট কোণকে সমদ্বিখণ্ডিত করতে হবে”। এই জ্যামিতিটুকুন না পারার অক্ষমতা আজ দেখিয়েই ছাড়বেন। কী যে করি! এমনিতেই স্যারকে দেখলে পিলে চমকে যায়, তার উপর দু’ সপ্তাহের একই পড়া! মেজাজ মর্জি আজ কী হয় কে জানে, স্যার আজ সবাইকে পিটিয়ে কলা অথবা কচু ভর্তা করেই ছাড়বেন। হায় ভাগ্যে কি আছে কে- ই বা জানে। স্যারের পিটানোর ভয়ে ক্লাসের সব্বাই দিক- বেদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ছি। মাথায় খেলে না এমন কোন বুদ্ধি যাতে পার পেয়ে যাবো। গাবলুটা আজ এলে কিছু একটা করাই যেতো, ওর পাকা বুদ্ধিতে এ যাত্রা বেঁচেই যেতাম কিন্তু কেন যে আসছে না! বড় দু:খ আর হতাশা নিয়ে ক্যবলা কথা গুলো শেষ করলো। আচ্ছা, আমার কি মনে হয় জানিস, গাবলুটা বোধহয় তালগাছে উঠে তালেরকাঁদি কাটছে না হয় ডোঙা নিয়ে ঘোড়ার ঘাস কাটছে তোরা কী বলিস? তাল গাছে উঠুক আর বেল গাছে উঠুক তাতে আমাদের কী। এখন আমাদের উচিৎ স্যারের বেত থেকে কিভাবে রক্ষা পাবো সে চিন্তে করা। কী আর চিন্তা করবো যা হবার হবে। স্যার যদি মেরে তক্তাও বানান আমাদের কী বা করার আছে? আমাদের এই বড় বড় মাথায় গোবর ছাড়া কিচ্ছুটি নেই। এ কথা বলে খুব বেশি জোরে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পকাই বেঞ্চের এক কোণে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো। ধ্যাৎতুরি, ন্যাকামো ছাড়তো পকাই, এ ভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না দোস্ত। তারচে’ স্যার ক্লাসে ঢোকার আগেই দেয়াল টপকে ভোঁদোড় দেবো। পরে যা হবার হবে। পরে কি, কাল যখন ক্লাসে আসবো তখনই তো সাঁই সাঁই করে সব ক’টাকে গরু পেটান পেটাবেন। পকাইর কথাই ঠিক ওর কতা মেনে নিয়ে ক্লাস করাই শ্রেয়। ফ্যালুর কথার রেশ কাটতে না কাটতেই ঢংঢং বিকট শব্দ করে ঘণ্টা পড়লো। ঘণ্টা তো নয় যেন সবার বুকে হাতুড়ি ঘা পড়লো, গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো, কান দিয়ে ধোঁয়া বেরুতে না বেরুতেই দু’টো বেত আর নাম ডাকা খাতা নিয়ে স্যার এলেন। চারদিকটায় একটু চোখ বুলিয়ে চেয়ারে বসলেন। টেবিলের এক কোণে বেত আর খাতা রেখে চোখ দুটো রক্ত জবা করে চেঁচানোর ভঙ্গিতে আমাকে বললেন এই যে কবি ” আজকের মগজ এ” আমার বিরুদ্ধে বলি কী লিখেছেন? এ্যাঁ, কী লিখেছেন! আমি নাকি আপনাদের পড়া না পাড়ার জন্য পিটিয়ে দুধ থেকে মাখন বানাই, মাখন কেন আমার যা খুশি তাই করবো তাতে লেখার কী আছে, কার কী বলার আছে, এ্যাঁ, কার কী করার আছে? এবার আমরা ঠিকই বুঝে নিলাম আজ আর রক্ষা নেই, কেয়ামত অতি সন্নিকটে! হঠাৎ স্যারের নজর পড়লো আমার পায়ের নিকট। পুনরায় বিকট আওয়াজ তুলে বললেন, এাঁ, আবার কাঁপা হচ্ছে! আরে লেখক কবিদের কি এতো ভয় পাওয়া চলে? লেখকরা হবে সাহসী আইমিন নজরুলের মতো। থাক্ থাক্ কাঁপতে হবে না। বসেন। যাক বাবা বাঁচা গেলো। স্যারের হাত থেকে বেঁচে বিধাতাকে সহস্র কোটি বার ধন্যবাদ দিলাম। আমার এহেন অবস্থা দেখে টু শব্দটিও থেমে গেলো। ক্লাসরুমে নেমে এলো দারুণ নিরবতা। কিছুক্ষণ পর স্যার গলা খেঁকিয়ে বড় মিষ্টি করে বললেন, এই শোন, তোদের আমি নাম ডাকছি, ঠিক মতো ঢ়ৎবংরফবহঃ করিস। আমরা চোখ দুটো বড় বড় করে দেখলাম স্যার অত্যান্ত বিজ্ঞের মতো খাতার পৃষ্ঠা উল্টিয়ে নাম ডাকা শুরু করলেন। ১. ধরফর মিয়া গাবলু ২. কেতুবালী ৩. বুড়ো খোকা না ছুঁই পানি ৪.অমূল্য প্রসাদ বকবকা ৫. শাহীন খান মিন মিনা।ও, পালিয়ে ছিলেন বুঝি, হঠাৎ স্যার রোল কল রেখে গলা খিঁচিয়ে বললেন, এ্যাঁ, এ যে দেখছি সব কটা গাধার নামে লাল গোল্লা, না পালালে গরু, মহিষ হবেন কী করে, তা জ্যামিতি পড়া কী হয়েছে? জ্যামিতির কথা উঠতে না উঠতেই পুনরায় শরীরে ঘাম আসতে লাগলো, মুখ ফ্যাঁকাশে ধারণ করলো, কান দিয়ে ধোঁয়া বেরুতে লাগলো, মাথা আস্তে নুয়ে এলো। আমাদের এহেন অবস্থা দেখে স্যার তড়িৎ বেগে বেত নিয়ে আমার কাছে আসতেই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদেই দিলাম। আমার দেখাদেখি বল্টু, পিন্টু, সল্টু, জন্টু, জিল্লু, মিল্লু, আব্বাস, হাছেন, গদা, পকাই, ন্যারু সব্বাই গলা ছেড়ে কাঁদতে লাগলো! স্যার সবার কান্না দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন কী হলো গাধারা অমন করে কাঁদছিস কেন? গদা অতি ভয়ে ভয়ে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বললো, স্যার আপনার ধরফর মিয়া গাবলু নেই। নেই মানে? স্যারের চোখে মুখে প্রশ্নবোধক চিহ্ন। নেই মা- নে নেই, গাবলু নেই! নেই, তা ও কোথায়? স্যার, পুনরায় হতবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন। পকাই অতি সাহস করে উঠে বললো, স্যার, ও আর ক্লাসে আসবে না, জ্যামিতি পড়া হয়নি বলে কোন বুদ্ধিশুদ্ধি বের করতে না পেরে মারের ভয়ে মানে পিটান খাবার ভয়ে…কথার ছেদ রেখে আবারো বললো, স্যার আপনিই বলুন ওর মতো ভালো এবং চৌকস ছাত্র এই আমাদের বানারীপাড়ার সমস্ত স্কুল চষেও কি পাবো? তাই ওকে হারানোর বেদনায় কাঁদছি। প্রাণ উজাড় করেই কাঁদছি! এ্যাঁ, কী বলিস। হ্যাঁ স্যার, আপনার এই জ্যামিতির জন্যই… পকাই আর বলতে পারলো না মিছেমিছি কান্নায় কণ্ঠ ক্ষীণ করে ফেললো। স্যার খুব দুঃখ দুঃখ ভাব নিয়ে পকাইকে বললেন, থাক আর কাঁদিস না আমি তোদের মাফ করে দিলাম। যা গাবলুকে ডেকে নিয়ে আয়।
না না না ডাকার কোন প্রয়োজনই নেই বন্ধুগণ! আমি লুকিয়ে সব কথাই শুনেছি। আমি কি ভেতরে আসবো স্যার? হঠাৎ ধরফর মিয়া গাবলুর আগমন দেখে ক্লাসের সব্বাই হইচই শুরু করে দিলাম। স্যার প্রথমত অবাক এবং ক্ষণিক পরে ফিক করে হেসে লাইব্রেরির দিকে পা বাড়ালেন।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ

আজকের দিন-তারিখ

  • সোমবার (দুপুর ২:৪৮)
  • ৭ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৩ রবিউস সানি, ১৪৪৬
  • ২২ আশ্বিন, ১৪৩১ (শরৎকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Sundarban IT