• আজ- শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫৯ অপরাহ্ন

কবি আসাদ চৌধুরী আর নেই

লেখক : / ২৪৪ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৩
কবি আসাদ চৌধুরী
কবি আসাদ চৌধুরী

add 1

বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় কবি আসাদ চৌধুরী আর নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে কানাডায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার ছেলে জারিফ চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, টরেন্টোর আসোয়া লেকরিচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আসাদ চৌধুরী মারা গেছেন। স্থানীয় সময় গত বুধবার দিবাগত রাত তিনটায় তিনি মারা যান। বরেণ্য এই কবির বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। কবি আসাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, কবি আসাদ চৌধুরীর মৃত্যু বাংলা সাহিত্যের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তার লেখনী বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। রাষ্ট্রপতি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। অন্যদিকে পৃথক এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কবি আসাদ চৌধুরী তার সৃষ্টিশীল কর্মের মধ্য দিয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এদিকে আসাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আবদুল মোমেন। গতকাল বৃহস্পতিবার এক শোকবার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কবি আসাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্যের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তাঁর অনন্য পদচারণা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। তিনি বলেন, দেশের বাইরেও বাংলা সাহিত্য চর্চায় তিনি বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। উত্তর আমেরিকায় বাংলা সাহিত্যের অগ্রযাত্রায় এবং সেখানকার সাহিত্যানুরাগীদের বাংলা ভাষা ও কৃষ্টিতে আকৃষ্ট করতে তার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি মরহুম আসাদ চৌধুরীর রুহের মাগফিরাত কামনা এছাড়া কবি আসাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। গতকাল বৃহস্পতিবার এক শোকবার্তায় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী প্রয়াতের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। ড. হাছান মাহমুদ তার শোকবার্তায় বলেন, কবি আসাদ চৌধুরী বাংলাদেশের প্রধান কবিদের অন্যতম। তিনি তার আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গী, টেলিভিশনে জনপ্রিয় সব অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও উপস্থাপনার জন্য পরিচিত। এ ছাড়া তিনি তার ভরাট কণ্ঠে কবিতা আবৃত্তি করেও মানুষের মন জয় করেছেন। মৌলিক কবিতা ছাড়াও শিশুতোষ গ্রন্থ, ছড়া, জীবনী এবং অনুবাদকর্মে তার অনেক অবদান রয়েছে। কবি আসাদ চৌধুরী তার সৃষ্টিকর্মের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকের কবি আসাদ চৌধুরী বাংলাসাহিত্যে স্বতন্ত্র কাব্য ভাষা তৈরি করে নিজস্বতা অর্জন করেছেন। শিশু সাহিত্যিক হিসেবেও তাঁর সুখ্যাতি রয়েছে। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে তিনি ব্যাপকভাবে পরিচিত। কালের সীমা অতিক্রম করে হয়েছেন কালোত্তীর্ণ। আসাদ চৌধুরী একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও আবৃত্তিকার। আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি। সাহিত্যে তিনি গণমুখী, নান্দনিক ও রোমান্টিক। স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বাংলার লোকায়ত জীবন সবই তাঁর লেখায় স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তুলেছেন। আসাদ চৌধুরীর সাহিত্য সম্ভার সব ধরনের মানুষের পছন্দ। তথ্য ও ভাবনার রসদ পান সব বয়সের পাঠক। তাঁর কবিতা বা প্রবন্ধ পড়েই কেবল মননের গভীরতা উপলব্ধি করা সম্ভব হতে পারে। প্রথম কবিতার বই ‘তবক দেওয়া পান’-এ পরিচিতি পান কবি আসাদ চৌধুরীর। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ২০১৩ সালে একুশে পদক লাভ করেন। কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছেন মানুষের মনে কবি আসাদ চৌধুরী। তার বাচনভঙ্গি, টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও উপস্থাপনার জন্যও সর্বমহলে পরিচিত তিনি। মৌলিক কবিতা ছাড়াও শিশুতোষ গ্রন্থ, ছড়া, জীবনী ও অনুবাদ করেছেন। তিনি কবি আল মাহমুদ পরিষদের সভাপতি ছিলেন। ১৯৮৩ সালে তার রচিত ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া একই বছর তিনি সম্পাদনা করেন বঙ্গবন্ধুর জীবনী ভিত্তিক গ্রন্থ ‘সংগ্রামী নায়ক বঙ্গবন্ধু।’ তিনি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন এবং আওয়ামী লীগের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সখ্যও ছিল। তার বাবা আরিফ চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার কবরের পাশে দাঁডিয়ে বঙ্গবন্ধু কবি আসাদের কাঁধে হাত রেখে সাহস জুগিয়েছিলেন এবং প্রয়োজনে তার পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কবি আসাদ চৌধুরী ১৯৫৭ সালে আরমানিটোলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬০ সালে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকে যাওয়ার পর কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে কবি আসাদ চৌধুরীর চাকরিজীবন শুরু করেন। ১৯৬৪ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে শিক্ষকতা করেন। পরে ঢাকায় থিতু হয়ে তিনি বিভিন্ন খবরের কাগজে সাংবদিকতা করেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি ‘ভয়েস অব জার্মানি’র বাংলাদেশ সংবাদদাতার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালে ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে যোগদান করে দীর্ঘকাল চাকরির পর প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হিসেবে অবসর নেন। উত্তর আমেরিকায় বাংলা সাহিত্যের অগ্রযাত্রা এবং সেখানকার সাহিত্যানুরাগীদের বাংলা ভাষা ও কৃষ্টিতে আকৃষ্ট করতে তার অবদান অসীম ও অনস্বীকার্য। কবি আসাদ চৌধুরী ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আরিফ চৌধুরী এবং মায়ের নাম সৈয়দা মাহমুদা বেগম।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ

আজকের দিন-তারিখ

  • শুক্রবার (রাত ৯:৫৯)
  • ৪ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৩০ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬
  • ১৯ আশ্বিন, ১৪৩১ (শরৎকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Sundarban IT