• আজ- মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৩ পূর্বাহ্ন

ইচপ্রিয়া

মো: মামুন মোল্যা / ২৪৩ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : বুধবার, ৩ মে, ২০২৩

add 1
  • মামুন মোল্যা
ইচপ্রিয়া কমলাপুর রেল স্টেশনের মেয়ে, তা বললেও ভুল হবেনা। কারণ সে যখন বুঝতে শিখেছে, তখন থেকেই রেল স্টেশনের ছায়াতলে তার বসবাস। তার মা বাবাকে সে কখনো দেখছে বলে তার মনে পড়ে না। কে তার মা ? কে তার বাবা? সেই প্রশ্ন তাকে খুঁড়ে খুঁড়ে খায়। ৬ বছরের ছোট মেয়ে। অনেকের কাছে এই প্রশ্ন করেছে। কে তার মা? কে তার বাবা? কেউ তার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। সেই প্রশ্ন নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখে পথ চলছে। একা একা পথ চলা সত্যি ভীষণ কষ্টের। ছোট্ট মেয়ে, সে কোনো কাজ করতে পারে না। পথচারীর কাছে হাত পেতে যা পায় তাই দিয়ে তার দিন চলে যায়। কিন্তু রাত সহজে যায় না। কারণ তার আপন বলতে পাশে কেহ নেই। তাও আবার মেয়ে মানুষ। পথের পাশে ঘুম পড়া যে কত ঝুঁকি সেটা বলে বা লিখে বোঝানো সম্ভব না। এইভাবে তার দীর্ঘদিন চলতে থাকে। যখন তার বয়স ১২ । তখন মানুষের কাছে হাত পাতলে কিছু কিছু ভদ্রলোক বলে, চেহারা তো মন্দ নয়, তবে এই কাজ করো কেন? প্রশ্ন ছুড়ে তারা চলে যায় কিন্তু প্রশ্নের উত্তর নেওয়ার মতো সময় তাদের নেই। একদিন মনে মনে ভাবে এত কথার ভার বহন করা আমার পক্ষে খুবই কষ্টের। সিদ্ধান্ত নিল আর এই পথে থাকবে না। পথ শিশুদের সাথে নতুন জীবন গড়বে। সেখানে গিয়ে দেখে ভিন্ন এক জগৎ। দিনের বেলা ছেলেরা বোতল কুঁড়িয়ে ঠেলা গাড়ি চালিয়ে যা পায় কোন দিন পেট চলে, কোন দিন চলে না। মাঝে মাঝে কাজ করে কিন্তু সেই অর্থে পেট চলে না। কি করবে ? কোনো মালিক পথ শিশুদের কাজ দেয় না। পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে রাতে চিন্তায় অথবা খুনের মত জঘন্য কাজ করে। মেয়েরা আর কি করবে ? ওদের বোতল কুঁড়ানো ছাড়া আর কি বা করার আছে? তাতে কি আর পেট চলে। রাতে বাসের হেল পার অথবা ড্রাইভার দের সাথে রাত কাটালে বেশ কিছু টাকা আসে। সেই টাকা দিয়ে পেট চালায়। আবার দলের ছেলেদেরও সাথে রাত কাটাতে হয়। তা না হলে আবার দল থেকে বাহির করে দেয়। এই সব দেখে ইচপ্রিয়া মনে মনে ভাবে ভিক্ষা করা এর থেকেও শত গুন ভালো। ইচপ্রিয়া এই ভেবে সেখানে এক মুহূর্তেও রইল না। ইচপ্রিয়া আবার এসে সেই পথে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করতে লাগলো। ইচপ্রিয়া এক ভদ্র লোকের নজরে পড়ে। তিনি বলল এই মেয়ে তোমার নাম কি? জি স্যার ইচপ্রিয়া। ইচপ্রিয়া তোমাকে আমার বাড়ি চাকরি দিলে করবে? জি স্যার কি চাকরি? আমার মা কে দেখা শোনা আর রান্নাবান্না করা। বেতন দিবো থাকা খাওয়া বাদে ছয় হাজার টাকা। জি স্যার করবো। ইচপ্রিয়া ভদ্র লোকের বাড়ি গিয়ে বেশ কিছুদিন ভালো ভাবে কাজ করছে। প্রথম মাস শেষ হতেই ইচপ্রিয়া বেতন চাই। ভদ্রলোক বলে দিবো,টাকা নিয়ে চিন্তা করনা। এইভাবে ছয় মাস চলে যায়। একদিন ভদ্র লোকের মা ডাক্তারের কাছে যায়। সেই সুজকে ভদ্রলোকদ্বয় ইচপ্রিয়াকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। ইচপিয়া খুব চিন্তায় পড়ে যায়। এমন সুজক কি জীবনে বার বার আসে? কি করবে? এক পর্যায়ে রাজি হয়। ভদ্র লোকটি ভালোবাসাকে ঢাল বানিয়ে বিবাহের আশ্বাস দিয়ে দীর্ঘদিন সহবাসে লিপ্ত থাকে। যখন তার গর্ভে সন্তান আসে, তখন ছেলেটার মাকে সব খুলে বলে। মা তার ছেলেকে সব খুলে বলতে রেগে আগুন। ছেলেটি ইচপ্রিয়াকে মিথ্যাবাদী বেশ্যা বলে গালিগালাজ করে ক্ষান্ত হয়নি। রুম থেকে চড়াতে চড়াতে গেটের বাইরে বের করে দেয়। ইচপ্রিয়া সেই দিন বুঝতে পারে, কে তার মা ? কে তার বাবা?
add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ

আজকের দিন-তারিখ

  • মঙ্গলবার (রাত ৪:৪৩)
  • ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৩০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬
  • ১৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ (হেমন্তকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Sundarban IT