[প্রথম পর্ব]
ইদানিং আমার রোগটা বেড়েছে। ঠিক রোগ বলা চলে না, বর কিংবা আশীর্বাদও হতে পারে। আসলে আমি এক মানুষের সাথে অন্য মানুষের চেহারার মিল খুঁজে পাই।
আমার ফিল্ম দেখার একটু বেশিই শখ ছিল। কোনো কোনো দিন তো তিন-চারটা মুভি দেখে শেষ করতাম। সম্ভবত এরপর থেকে অ্যাক্টর-অ্যাক্টরেসের সাথে আশে পাশের মানুষের চেহারার মিল পাওয়া শুরু করি। কলেজের অধ্যাপকদের একজনকে আমীর খান মনে হলে আরেকজনকে মনে হতো রাজকুমার রাও।
পাশে বসে থাকা বন্ধুকে যদি বলতাম, “বন্ধু, রাজকুমার রাওকে চেনো?”
“না তো, কে উনি?”
তখন আমি অবাক আর বিরক্তি সহকারে বলতাম, “আরে ছাড়ো, জেনে কি করবে।”
কলেজের রসায়ন ক্লাস নিতেন এক ষাটোর্ধ প্রবীণ অধ্যাপক। স্বাধীনতা দিবসে এক বড় ভাইয়ের আমন্ত্রণে সকাল আটটা কি নয়টার দিকে গেলাম কলেজে। ভাইটি ছিলেন রসায়ন ডিপার্টমেন্টের,তার সহপাঠীরা সংখ্যায় ছিল খুব নগন্য তাই আমার কাজ হলো পুষ্পস্তবক অর্পণে হাত লাগানো।দেখলাম রসায়নের সেই অধ্যাপক এসে আমার পরিচিত ভাইটির সাথে কথা বলছেন।আমি স্যারের সামনে গিয়ে সবিনয়ে বললাম, “স্যার, যদি কিছু না মনে করেন তো একটা কথা বলি?”
স্যার নিতান্ত ভালো মানুষ। আমাকে বললেন,”বলো।”
“স্যার, হিন্দি ফিল্মের অ্যাক্টর ধর্মেন্দ্রো-কে চেনেন?”
“হ্যাঁ।”
“স্যার, ওনি ঠিক আপনার মতোই দেখতে।”
স্যারের সাথে কথা বলার শুরুতে কি বলবো তাই
বারংবার মনে মনে সাজাচ্ছিলাম।প্রথমে মাথায় এসেছিল,স্যার আপনি ওনার মতো দেখতে, কিন্তু না স্যারকে একটু খুশি করার জন্য বললাম, স্যার ওনি আপনার মতো দেখতে।
স্যার আমার কথা শুনে বললেন, “ও।”
সেদিন স্যার নিশ্চয়ই তার মিল খুজে পেয়ে খুশিই হয়েছিলেন।
একদিন ইংরেজি ক্লাসে বসে আছি। পাশে বসে থাকা এক বন্ধুকে বললাম,”বন্ধু, বেগম রোকেয়াকে চেনো?”
সে কৌতূহল সহকারে বললো,”হ্যাঁ, কেন?”
“আমাদের এই ম্যাডামকে বেগম রোকেয়ার মতো দেখতে না?”
সে অবাক হয়ে বললো, “আরে হ্যাঁ, তাইতো।”
বন্ধু চিনতে পেয়েছে শুনে কনফার্ম হলাম যাকে রোগ ভেবেছিলাম তা আমার আধ্যাত্মিক শক্তি।
এই আধ্যাত্মিকতার বলে একটা মুশকিল আসান হয়েছিল।এই ঘটনাটা বলা যাক।
আমি আবার নিজেকে আমার জীবন নামক উপন্যাসের নায়ক বিবেচনা করি। আর উপন্যাস সম্পূর্ণ করতে নায়কের যেহেতু নায়িকা আবশ্যক,তাই নায়িকা হিসেবে কাউকে সিলেক্ট করে নিতাম।নতুন কলেজে নায়িকা হিসেবে একজনকে মনে ধরলো। কিন্তু সমস্যা আমি “খ” শাখায় আর তিনি “ক” শাখায়। শুধু মাঝে মধ্যে পথ চলতে চলতে দেখা হতো -এটাই ছিল সান্তনার।
আমার মেসের এক বন্ধু ছিল “ক” শাখার। এক সাথেই কলেজ আসা হয়।তাকে একদিন সেই অজ্ঞাত নায়িকার কথা বললাম। কিন্তু সে তো আর অন্তর্যামী নয় যে নায়কের হৃদয়ে আঁকা ছবি দেখতে পারবে।আমার অতিরঞ্জিত বর্ণনা তার সামর্থ্যে কুলালো না। তবুও যতটুকু অনুমান করতে পারলো।আর আমার শুধু মন বলছিলে সেই মেয়েটি “ক” শাখার, তা কতখানি সত্যি তাই জানতাম না। তবুও মনটা যেহেতু আমারই তাকে আর কাঠগড়ায় না উঠিয়ে আন্দাজেই ঢিলটা মারলাম।
তাকে ছুটির শেষে মেসে গিয়ে আবার ধরলাম।সে বললো, “বন্ধু, মেয়েটা মাস্ক পড়ে আসে তাই না?”
“আরে হ্যাঁ, সার্জিক্যাল মাস্ক, তারপর মেয়েটার কপালের উপরে থাকে ছোট করে কাটা কিছু চুল-এই সব তো বলেছি তোকে।”
“হ্যাঁ, তারপর মেয়েটা হালকা একটু মোটা, না না, মোটা না তবে বেশি চিকন না এই তো।”
“আমার কথা আমাকে শোনাস না, এটা বল যে নাম-ধাম জানতে পেরেছিস কিছু?”
এরপর আমার সেই গুপ্তচর বন্ধু আমাকে বললো,” ওটাতো আবিরের গার্লফ্রেন্ড।”
আমি রেগে গিয়ে বললাম, ” কি ফালতু কথা বলিস, তোকে বললাম মেয়েটার নাম পরিচয় বের করতে, আর তুই!”
“বন্ধু মেয়েটার প্রেমকাহিনী তো ক্লাস ছাড়িয়ে স্যার অবধি পৌঁছে গেছে।কয়েকদিন আগে কি হয়েছে শোন, স্যার নাম প্রেজেন্টের সময় মেয়েটাকে অ্যাবসেন্ট দেখে কৌতুকের সুরে বললেন, “আবিরও আসে নি না?” তারপর ক্লাসেও তো তাদের প্রেম লীলা চলতো।”
“আরে ওটা নয় হয়তো। দাঁড়া একটা কাজ করি”, এই বলে আমার ফোনের একটা ভিডিও তাকে দেখালাম।
সে বললো, “আমের জুসের অ্যাড দেখাচ্ছিস কেন?”
কয়েকদিন আগে একটা বাংলা নাটক দেখার সময় এই অ্যাডটি পেয়েছিলাম। এই অ্যাডে যে মডেলটি তার সাথে ওই মেয়েটির চেহারার হুবহু মিল আছে। তাই আমার বন্ধুকে ওটাই দেখালাম।
তার প্রশ্নের উত্তরে বললাম,”ওই মেয়েটি কি ভিডিওতে দেখা মডেলটার মতো?”
সে এবার অবাক হয়ে বললো, “হ্যাঁ, দুজনকে কিছুটা এক রকমই দেখতো অবশ্য।”
কিছুক্ষণ কাতর মুখে তার দিকে তাকিয়ে থেকে হাসতে হাসতে বললাম,”আধ্যাত্মিকতা এবার রোগে পরিণত হলো রে।”