• আজ- মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ
বিনামূল্যে জেমিনি প্রো ব্যবহারের সুযোগ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কলারোয়ায় কপাই ফুটবল টুর্নামেন্টে কসমস ফুটবল একাদশ সেমিফাইনালে উন্নীত সাতক্ষীরায় চোখের ছানি অপারেশন ও চক্ষু শিবির ক্যাম্পের প্রস্তুতি সভা সাতক্ষীরায় মাস ব্যাপী এ্যাথলেটিক্স প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সমাপনী ও সনদ বিতরণ দেবহাটায় দুর্যোগ প্রশমন দিবস উদ্যাপন ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গঠনে ছয় দফা প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার সাতক্ষীরায় চোরাচালানের নতুন কৌশল: খৈলের নিচে ৭ কোটি টাকার ভারতীয় পোশাক ও মাদক তালায় আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত ছাত্রসমাজকে নতুন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান ছাত্রশিবির সভাপতি জাহিদুল ইসলামের পল্টন থানার মামলা: মির্জা আব্বাস–রিজভীসহ বিএনপির ১৬৭ নেতাকর্মী অব্যাহতি পেলেন

সাতক্ষীরায় চোরাচালানের নতুন কৌশল: খৈলের নিচে ৭ কোটি টাকার ভারতীয় পোশাক ও মাদক

লেখক : / ৮ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫

add 1

অনলাইন ডেস্ক: ভারত থেকে সীমান্ত পেরিয়ে আসা প্রতিটি ট্রাক যেন এখন শুধু পণ্য নয়- বরং একেকটি সম্ভাব্য চোরাচালানের ছদ্মবেশ।

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে গত রবিবার (১১ অক্টোবর) রাতে ভারত থেকে আসা এমনই তিনটি ট্রাক আটকে দিলো সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি।

খৈল বোঝাই ট্রাক বলে কাগজে-কলমে উল্লেখ থাকলেও, বাস্তবে তার নিচে লুকানো ছিল কয়েক কোটি টাকার ভারতীয় উন্নতমানের পোশাক ও মাদকদ্রব্য।

বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, জব্দকৃত ট্রাক থেকে উদ্ধার হয়েছে উন্নতমানের ভারতীয় শাড়ি, থ্রি-পিস, ব্লাউজ এবং ১৫০ বোতল ফেনসিডিল। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৭ কোটি ৩৯ লক্ষ ২১ হাজার ৫০০ টাকা।

বিজিবি সূত্র জানায়, কয়েকদিন আগে থেকেই ভোমরা স্থলবন্দর হয়ে ‘খৈল বোঝাই ট্রাক’ আসার বিষয়ে সন্দেহ করছিল বিজিবি। তাদের কাছে নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য আসে যে ভারতীয় খৈলের বস্তার ভেতরে কাপড় ও মাদক লুকিয়ে বাংলাদেশে আনা হবে।

১২ অক্টোবর রাতে সেই তথ্যের ভিত্তিতে ৩৩ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আশরাফুল হকের নির্দেশে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

অভিযান চলাকালে ভারতীয় ট্রাক (নম্বর WB-57D6151) ভোমরা আইসিপি দিয়ে প্রবেশ করে। ট্রাকটির চালক ও হেলপার- লিটন মিয়া ও সাগর মিয়া, উভয়েই ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনার বসিরহাট এলাকার বাসিন্দা।

বিজিবির চেকপোস্টে দাঁড় করানোর নির্দেশ অমান্য করে ট্রাকটি দ্রুত কাস্টমস পার্কিংয়ের দিকে ঢোকার চেষ্টা করে। এ সময় বিজিবি সদস্যরা ট্রাকটি অনুসরণ করে ভোমরা বন্দরের ফলমোড় নামক স্থানে চলে যায়।

ঘটনাস্থলে গিয়ে বিজিবির সদস্যরা দেখতে পান, কাস্টমসের গেইট বন্ধ অবস্থায় ভারতীয় ট্রাক থেকে খৈলের বস্তা নামানো হচ্ছে।
কিন্তু বস্তার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে ঝকঝকে ভারতীয় শাড়ি, থ্রি-পিস ও ব্লাউজের প্যাকেট।

এ সময় ভারতীয় ট্রাকের মালামাল বাংলাদেশি ট্রাক ঢাকা-মেট্রো-ট-১৬-৩৬১৩ এবং ঢাকা-মেট্রো-ট-২২-৫৯০৩-এ তোলা হচ্ছিল। এসময় বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে চালক, হেলপার ও শ্রমিকরা পালিয়ে যায়। বিজিবির সদস্যরা পরবর্তীতে তিনটি ট্রাকসহ সকল মালামাল জব্দ করে।

জব্দকৃত তিনটি ট্রাক থেকে উদ্ধার হয়- ১২লাখ টাকা মূল্যের : ২০হাজার কেজি ভারতীয় খৈল, ২ কোটি ৬১ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের অতি উন্নতমানের ২ হাজার ৪৮৯ পিস শাড়ি, ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা মূল্যের উন্নতমানের ২ হাজার ১০০ পিস ভারতীয় শাড়ি, ৩২ লাখ ২২ হাজার টাকা মূল্যের অতি উন্নতমানের ৩ শত ৫৮ পিস থ্রি-পিস, ১২ লাখ টাকা উন্নতমানের ১৫০ পিস ভারতীয় থ্রি পিস, ২ লাখ ৫ হাজার টাকা মূল্যের ২০৫ পিস ভারতীয় ব্লাউজ এবং ৬০ হাজার টাকা মুল্যের ১৫০ বোতল ভারতীয় থ্রি পিস। এছাড়া ১ টি ভারতীয় ট্রাক (মূল্য ৯০ লাখ টাকা) ও ২ টি বাংলাদেশী ট্রাক (মূল্য ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা)। সব মিলিয়ে মোট সিজার মূল্য ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৩৯ লাখ ২১ হাজার ৫০০ টাকা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তবর্তী কিছু প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ভারত থেকে শাড়ি, থ্রি-পিস, ব্লাউজ, এমনকি মাদক চোরাচালান করে থাকে। ভোমরা স্থলবন্দর এই সিন্ডিকেটের অন্যতম নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী বলেন, ভারতীয় ট্রাকগুলো প্রায়ই খৈল, পেঁয়াজ, গম বা চালের চালান দেখিয়ে আসলেও ভেতরে থাকে চোরাচালানের পণ্য। মাঝে মাঝে কিছু প্রভাবশালী দালাল বা আমদানিকারক এই সিন্ডিকেটের সাথে যুক্ত থাকে।

তবে বিজিবির সাম্প্রতিক অভিযান এই সিন্ডিকেটের জন্য বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আশরাফুল হক বলেন- চোরাচালান ও মাদক পাচার রোধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। কোনোভাবেই সীমান্তকে অবৈধ বাণিজ্যের রুটে পরিণত করতে দেওয়া হবে না। জনগণকে সচেতন হয়ে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে।

তিনি আরও জানান, জব্দকৃত ট্রাক, পোশাক ও মাদকদ্রব্য আইনি প্রক্রিয়ায় সাতক্ষীরা সদর থানায় হস্তান্তরের কাজ চলছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সাতক্ষীরা সীমান্তে চোরাচালান একটি পুরনো সমস্যা। প্রতিদিন অসংখ্য পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ ও প্রস্থানের সুযোগে এ রুটে তৈরি হয়েছে শক্তিশালী দালালচক্র। খুলনা ও যশোর অঞ্চলের বড় বড় পাইকারি বাজারেও মাঝে মাঝে এসব ভারতীয় পোশাক পাওয়া যায়- যার অনেকটাই আসে এভাবেই সীমান্ত পেরিয়ে।

স্থানীয়দের মতে, চোরাচালান বন্ধে বিজিবি, কাস্টমস ও প্রশাসনের সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।

ভোমরার সাম্প্রতিক এই অভিযান শুধু একটি বড় চোরাচালান ধরা পড়ার ঘটনা নয়- এটি সীমান্তরক্ষার দায়িত্বে থাকা বাহিনীর দক্ষতা ও সতর্কতার প্রমাণও বটে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, সীমান্তের এত কড়াকড়ির মাঝেও এ ধরনের পণ্য এতদূর পর্যন্ত আসে কীভাবে?

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ