অনলাইন ডেস্ক: সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা বাজারে নজরুল ইসলামের ছোট্ট একটি পানের দোকান এখন সফলতার প্রতীক। সকাল থেকে রাত অবধি তাঁর দোকানে লেগেই থাকে ক্রেতাদের ভিড়। বিশেষ স্বাদের খিলিই নজরুলের দোকানের প্রধান আকর্ষণ।
৬০ বছর বয়সী নজরুল ইসলাম চার দশক আগে অষ্টম শ্রেণির গণ্ডি পেরোনোর আগেই অভাবের কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন। একসময় অন্যের দোকানে কাজ করে শেখা অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ১৯৯০ সালে ধারদেনা করে নিজের পানের দোকান চালু করেন তিনি। তবে শুরুটা ছিল কঠিন। প্রথম ৫-৭ বছর ব্যবসা জমেনি। ধীরে ধীরে বিশেষ খিলির স্বাদ আর গ্রাহকদের আস্থায় তাঁর দোকানটি জমে ওঠে।
এখন দিনে তিন থেকে চার হাজার খিলি বিক্রি হয় তাঁর দোকানে। প্রতিটি খিলি বানাতে ব্যবহার হয় ৩০ থেকে ৩৫ ধরনের মসলার মিশ্রণ—ধনে, কালিজিরা, দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, জায়ফল, বাদাম ও নানা ফল। দাম ৮ থেকে ১০ টাকা হলেও স্বাদের কারণে দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা আসেন এখানে। খুলনা, যশোর এমনকি সাতক্ষীরা শহর থেকেও অনেকেই ছুটে আসেন নজরুলের পান খেতে।
ক্রেতারা বলছেন, নজরুলের পানের স্বাদ একবার নিলে আর অন্য কোথাও যেতে মন চায় না। স্থানীয় বাসিন্দা ওলিউর রহমান বলেন, “একবার যে নজরুল ভাইয়ের পান খেয়েছেন, তিনি আর অন্য পান খেতে চান না।”
দোকান সামলাতে এখন নজরুলের দুই ছেলে তাঁকে সহযোগিতা করেন। বড় ছেলে সিদ্দিক বলেন, “আমরা তিনজন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চেষ্টা করি যাতে কেউ অপেক্ষায় কষ্ট না পান।”
পানের দোকান থেকে আয় করে নজরুল কেবল সংসারই চালাননি, বদলেছেন নিজের ভাগ্যও। পাটকেলঘাটার বাণিজ্যিক এলাকায় কিনেছেন আট শতাংশ জমি। সেই জমিতেই এখন দাঁড়িয়ে আছে তাঁর আট কক্ষবিশিষ্ট দোতলা বাড়ি।
পাটকেলঘাটা বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, “ছোট্ট একটি পানের দোকান যে একটি পরিবারের ভাগ্য ঘুরিয়ে দিতে পারে, নজরুল ইসলাম তার জীবন্ত উদাহরণ। তাঁর গল্প এখন অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা।”