ঢাকা: পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা এবং গাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে রাজধানীর পল্টন থানায় দায়ের করা সাত বছর আগের একটি মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসসহ দলটির ১৬৭ জন নেতাকর্মীকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ সাব্বির ফয়েজ পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে এ আদেশ দেন।
অব্যাহতি পাওয়া আসামিদের মধ্যে রয়েছেন— বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কফিল উদ্দিন, যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুর রশিদ হাবিব, মিডিয়া উইংয়ের শামসুদ্দিন দিদার, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমুনুল ইসলাম, নিপুন রায়, যুবদল সভাপতি রফিকুল ইসলাম মনজু এবং ঢাকা দক্ষিণ ছাত্রদল সভাপতি জহির উদ্দিন তুহিনসহ আরও অনেকে।
মির্জা আব্বাসের আইনজীবী মহি উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “এ মামলায় অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি পুলিশ। আমরা শুরু থেকেই বলেছিলাম এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা। অবশেষে আদালতও আমাদের ন্যায্যতা স্বীকার করলেন।”
মামলার পটভূমি
২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর বিএনপির নির্বাচনপূর্ব কর্মসূচির অংশ হিসেবে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিশাল শোডাউন করে বিএনপি। মিছিলগুলোর নেতৃত্বে ছিলেন আফরোজা আব্বাস, নবী উল্লাহ নবী, কফিল উদ্দিন এবং মির্জা আব্বাস।
পুলিশের অভিযোগ ছিল, মিছিলকারীরা রাস্তা অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ অনুরোধ করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে লাঠিসোটা হাতে বের হয়ে তারা নয়াপল্টনের ভিআইপি রোডে অবস্থানরত পুলিশের ডাবল কেবিন পিকআপে আগুন দেয়— যাতে প্রায় ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়।
তারা আরও একটি সরকারি গাড়ি (এসি, পেট্রোল-মতিঝিল) পুড়িয়ে দেয়, যার ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৩৫ লাখ টাকা। ইটপাটকেলে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন।
মামলার অগ্রগতি
এ ঘটনায় পল্টন থানার এসআই মো. আল আমিন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে আসামিদের অব্যাহতির সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
আজ আদালত সেই প্রতিবেদন গ্রহণ করে অভিযোগ থেকে আসামিদের অব্যাহতির আদেশ দেন।
বিএনপির আইনজীবীরা বলেছেন, “এই রায় প্রমাণ করেছে, সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানি করার জন্যই এ ধরনের মিথ্যা মামলা দিয়েছিল।”
উল্লেখ্য, এ মামলায় মির্জা আব্বাস ও আফরোজা আব্বাস উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান এবং পরে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে স্থায়ী জামিন পান। তদন্তে অভিযোগের কোনো ভিত্তি না পাওয়ায় অবশেষে সবাই অব্যাহতি পেলেন।