• আজ- বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:১২ পূর্বাহ্ন

জ্বর সর্দি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৫৯ শতাংশ রোগী ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত

লেখক : / ১৫ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

add 1

বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণ। সাম্প্রতিক এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের জুন মাসে দেশের ১৯টি হাসপাতালে জ্বর ও কাশির উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে প্রায় ৫৯ শতাংশ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত ছিলেন। যা আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসায় ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকাকে জাতীয় ক্লিনিক্যাল নির্দেশনায় অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআর,বি যৌথভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিডিসি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসির কারিগরি সহায়তায় সম্প্রতি ঢাকায় দুদিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করে। “বাংলাদেশে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসায় ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকার ভূমিকা: ভবিষ্যৎ পথনির্দেশনা” শীর্ষক এ কর্মশালায় চিকিৎসক, নীতিনির্ধারক, গবেষক ও ওষুধশিল্পের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

বিশেষজ্ঞরা জানান, বাংলাদেশে গ্রীষ্ম থেকে বর্ষা—অর্থাৎ এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুম। এর মধ্যে জুন-জুলাই মাসে সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। তাই ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষ, ৫ বছরের কম বয়সী শিশু, গর্ভবতী নারী, স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্টে ভোগা দীর্ঘমেয়াদি রোগীদের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসেই টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

তাদের মতে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকাকে কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সুপারিশ করলেও বাংলাদেশে এ টিকার গ্রহণযোগ্যতা এখনও কম। এর পেছনে রয়েছে সচেতনতার অভাব, নীতির ঘাটতি, উচ্চ মূল্য, সরবরাহ সমস্যা এবং ক্লিনিক্যাল গাইডলাইনে অন্তর্ভুক্ত না থাকা।

কর্মশালায় আইইডিসিআর-এর পরিচালক প্রফেসর ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, ২০০৭ সাল থেকে চালু ইনফ্লুয়েঞ্জা নজরদারি কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, এ রোগটি মৌসুমি এবং প্রায় প্রতি বছরই বহু প্রাণহানি ঘটায়। অথচ সময়মতো টিকা দিলে মৃত্যু ও গুরুতর অসুস্থতা উল্লেখযোগ্য হারে প্রতিরোধ সম্ভব।

অংশগ্রহণকারীরা জানান, ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকার অপ্রাপ্যতা, উচ্চ মূল্য, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়, কোল্ড চেইন ব্যবস্থাপনার ঘাটতি, চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ ও গাইডলাইনের অভাবসহ নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গণসচেতনতা বৃদ্ধি, দেশীয় গবেষণা প্রকাশ, গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা, চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ এবং টিকাকে জাতীয় নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার ওপর জোর দেন তারা।

গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা সাধারণ জনগণের তুলনায় চারগুণ বেশি ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকেন। তবুও এই গোষ্ঠীর মধ্যে টিকা নেওয়ার হার উদ্বেগজনকভাবে কম।

কর্মশালায় অংশ নেওয়া বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশ শিগগিরই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ ঘটাবে। তখন আন্তর্জাতিক সহায়তায় বিনামূল্যে টিকা পাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। তাই এখন থেকেই টিকাদানকে নিয়মিত চিকিৎসা নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনস্বাস্থ্য উইংয়ের যুগ্ম সচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী বলেন, কর্মশালায় যে সুপারিশ এসেছে তা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও টিকাদান কর্মসূচি জোরদারের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে প্রতিবছর বহু জীবন ঝুঁকিতে পড়বে। আর সময়মতো টিকা নিশ্চিত করা গেলে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ