চট্টগ্রামে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় গুলিবিদ্ধ হওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের ১৮২ জন নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর সিদ্দিকের আদালতে মামলা দায়ের করেন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ কে এম নুরুল্লাহ (২২)। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছে।

মামলার আসামির তালিকায় শীর্ষ নেতারা:

মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক এমপি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মুজিবুর রহমান, সাইফ পাওয়ার টেকের এমডি তরফদার রুহুল আমিন, আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত, এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ এবং শেখ হাসিনার সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক।

অভিযোগের বিবরণ:

বাদীর অভিযোগ, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট চট্টগ্রামের নিউমার্কেট-সংলগ্ন রেলওয়ে জামে মসজিদের সামনে অনুষ্ঠিত জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে তিনি অংশ নেন। ওই সময় আসামিদের নির্দেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা ও অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে বাদী গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। তাঁর দুই পা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লাগে।

বাদীর আইনজীবীর দাবি, চিকিৎসাধীন থাকায় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহে সময় লাগায় মামলা দায়ের করতে দেরি হয়েছে।

গণ–অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক মামলার চিত্র:

পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ঘটনায় চট্টগ্রামে মোট ১৫১টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৯টি মামলা নগর ও জেলার নয়টি থানায় এবং বাকিগুলো আদালতে নালিশি মামলা (সিআর) হিসেবে দায়ের হয়েছে।

এসব মামলায় নাম এসেছে প্রায় ১৩ হাজার ৪৫০ জনের, আর অজ্ঞাত আসামি অন্তত ৩০ হাজার। তবে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ আসামি, যা সংখ্যা হিসেবে ১ হাজার ২০১ জন। এর মধ্যে ১৫টি হত্যা মামলাও রয়েছে।

পূর্ববর্তী অভিযোগপত্র:

এর আগে গত ২৪ জুলাই চান্দগাঁও থানার এক হত্যা মামলায় দোকান কর্মচারী শহীদুল ইসলামকে গুলি করে হত্যার অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। সে মামলায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ ২৩২ জনকে আসামি করা হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ছোড়া গুলিতে শহীদুল নিহত হন।

নতুন আলোচনার জন্ম:

শেখ হাসিনাসহ প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এই নতুন মামলা রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া আগামী দিনে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে নতুনভাবে প্রভাবিত করতে পারে।