অনলাইন ডেস্ক: সাতক্ষীরার প্রাণসায়রের খাল ঘিরে আবারো উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। পৌরসভার উদ্যোগে খালের ধারে নতুন কসাইখানা নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়ায় আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে, খালটি আবারও ভাগাড়ে পরিণত হতে পারে। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খালের পাড়ে ইতিমধ্যে কসাইখানার বর্জ্যের স্তুপ জমে পরিবেশকে দূষিত করছে।
শহরের বুক চিরে প্রবাহিত এই খাল সাতক্ষীরার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০০০ সালের ভয়াবহ বন্যায় খালটি শহরবাসীর জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দূষণ ও দখলের কারণে দীর্ঘদিন মৃতপ্রায় অবস্থায় থাকলেও জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের উদ্যোগে সম্প্রতি খালটি পুনরুজ্জীবিত হয়েছে এবং স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরে পেয়েছে।
ঐতিহাসিকভাবে ১৮৪০ সালে প্রাণনাথ রায় চৌধুরী কলকাতার সঙ্গে নৌপথে যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে এই খাল খনন করেন। খালটি শুধু জলধারাই নয়, বরং সাতক্ষীরার সৌন্দর্য, পরিবেশ ও ভারসাম্যের প্রতীক।
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, নাগরিক সমাজ ও পরিবেশ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ একে একে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু জাহিদ ডাবলু বলেছেন, “প্রাণসায়রের খাল সাতক্ষীরাবাসীর প্রাণের দাবি। খালের ধারে কসাইখানা হলে পরিবেশ ও শহরের ভারসাম্য নষ্ট হবে।” একইভাবে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন, নাগরিক অধিকার উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির নেতা ডা. আবুল কালাম বাবলা, পরিবেশ আন্দোলনের প্রতিনিধি অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহীসহ অনেকে কসাইখানাটি অন্যত্র স্থানান্তরের দাবি জানান।
তারা মনে করেন, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় পরিকল্পিত কসাইখানা নির্মাণ করা হলে পরিবেশ রক্ষা সম্ভব হবে। ইতিমধ্যে খালের দুই পাড়ে মানুষ হাঁটাহাঁটি করছে, খোলা বাতাসে সময় কাটাচ্ছে। নতুন করে কসাইখানার বর্জ্য খালে ফেলা হলে শুধু জলদূষণই নয়, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশও মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন বলছে, প্রশাসন, পৌরসভা ও নাগরিক সমাজের সমন্বিত উদ্যোগে প্রাণসায়রের খালকে রক্ষা করা সম্ভব। আধুনিক কসাইখানা স্থাপন করে বর্জ্যকে প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থা করা গেলে সেটিকে সম্পদ হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।
স্থানীয়রা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া না হলে প্রাণসায়রের খাল আবারও ভাগাড়ে পরিণত হবে। সাতক্ষীরাবাসীর প্রত্যাশা, শহরের উন্নয়ন পরিকল্পনায় খালের পরিবেশ ও সৌন্দর্য রক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, যাতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের জন্য এই খাল সংরক্ষিত থাকে।