সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সম্প্রতি ব্যাংককে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরা যেমন ব্যক্তিগত সুস্থতা অর্জনের দিক থেকে স্বস্তির বার্তা বয়ে এনেছে, তেমনি তার বিদেশযাত্রা ঘিরে ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহ রাষ্ট্রের প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও জবাবদিহির ওপর এক গুরুতর প্রশ্নচিহ্ন তুলে ধরেছে।
দেশের গুরুত্বপূর্ণ একজন নাগরিক, এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবদুল হামিদের প্রতি মানবিক সহানুভূতির জায়গা স্বাভাবিক। কিন্তু একই সঙ্গে যখন জানা যায়, তিনি একজন মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তি হিসেবে দেশের বাইরে গেছেন এবং তাতে একাধিক প্রশাসনিক কর্মকর্তার গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেছে— তখন বিষয়টি শুধু ব্যতিক্রম নয়, তা রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি ও আইনের চোখে এক উদ্বেগজনক ঘটনা।
সরকার ইতোমধ্যে দুইজন পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার ও দুইজনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে, যা পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝিয়ে দেয়। এমন ঘটনায় সরকারি অনুসন্ধান কমিটি গঠনও স্বস্তিদায়ক উদ্যোগ, তবে এর চেয়েও জরুরি হলো স্বচ্ছ তদন্ত ও দায়ীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা। প্রভাবশালী পরিচয় বা রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে আইনের শাসন যেন ব্যাহত না হয়— সেটাই হওয়া উচিত রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
এই ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার ঝড় উঠেছে, যা আবারও স্পষ্ট করে দিয়েছে— জনগণ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন ও দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করে রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরের কাছ থেকে। আদালতের মুখোমুখি হবার কথা যাঁর, তিনি কীভাবে নির্বিঘ্নে দেশ ছাড়লেন, সেই প্রশ্নের জবাব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কাছেই দিতে হবে।
আমরা মনে করি, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকারের উচিত হবে এমন একটি উদাহরণ সৃষ্টি করা, যেখানে আইনের চোখে কেউই ছাড় না পায়— সে যত বড় ব্যক্তিই হোক না কেন। কারণ, যখন আইন নির্বাচিত/নির্বাচিত নয়, প্রভাবশালী/অপ্রভাবশালী অনুযায়ী ভিন্নভাবে প্রয়োগ হয়, তখন গণতন্ত্রের ভিত নড়ে যায়।
রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে, এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে আমরা প্রত্যাশা করি, দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। গণতান্ত্রিক সমাজে জবাবদিহির বিকল্প নেই। আর আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন— সেটাই হওয়া উচিত রাষ্ট্রের মূলনীতি।