সাতক্ষীরার উপকূলীয় জনজীবন ও কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে সাতক্ষীরা জেলা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের অর্ধ-বার্ষিক সমন্বয় সভায়। সোমবার সকাল ১০টায় স্বদেশ সভাকক্ষে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ফোরামের সভাপতি প্রফেসর আ. হামিদ। সভায় জানানো হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে জেলার বিস্তীর্ণ উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষি উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে আশাশুনি উপজেলার প্রায় ৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা সংস্কারে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। ফলে ফসলি জমি লবণাক্ত হয়ে পড়ছে, জীবিকা হারাচ্ছেন কৃষক।
সভায় আরও উঠে আসে, জেলার নারীরা কৃষিকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও তারা এখনো প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত। জলবায়ুজনিত নদীভাঙন, জলাবদ্ধতা ও নদীশাসনের অভাবে হাজার হাজার মানুষ পেশা পরিবর্তন করছেন বা বাধ্য হয়ে অন্যত্র অভিবাসন করছেন।
শ্যামনগর উপজেলা ফোরামের সম্পাদক রনজিৎ বর্মন বলেন, “মরে যাওয়া যমুনা নদীর কারণে শ্যামনগরে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এই সমস্যা শুধু স্থানীয়ভাবে মোকাবিলা করে সম্ভব নয়—এটি জাতীয় পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।”
আশাশুনি উপজেলা ফোরামের সভাপতি মোঃ আব্দুল হান্নান বলেন, “নদীভাঙনের ফলে জেলেখালীর বহু পরিবার ভারতের সীমান্ত পাড়ি দিয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। জলবায়ু সংকট এখন শুধু পরিবেশ নয়, এটি মানবাধিকার ও জীবিকার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
সভায় সাংবাদিক শরিফুল্লাহ কায়সার সুমন বলেন, “কলকাতা খালের পার্শ্ববর্তী এলাকার রাস্তা দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। এই সমস্যা দ্রুত সমাধানে প্রশাসনের জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন।”
ফোরামের সদস্য অধ্যাপক ইদ্রিস আলী বলেন, “জলবায়ু সংকটে সক্রিয়ভাবে দাবি তুললে পরিবর্তন সম্ভব। কারণ এ দুর্যোগ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে আক্রান্ত করে।”
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ফারুক রহমান, লুইস রানাগাইন, আফজাল হোসেন, মফিজুল ইসলাম, আব্দুস সামাদ, একো ব্বার হোনে, আমিনা বিলকিস ময়না প্রমুখ। সভাটি পরিচালনা করেন সদস্য সচিব মাধব চন্দ্র দত্ত। আয়োজনে সহযোগিতা করে ‘স্বদেশ’ ও ‘লিডার্স’, শ্যামনগর।
উপকূলীয় কৃষি রক্ষায় জরুরি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।
টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ।
জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান।
গণসচেতনতা বৃদ্ধিতে টকশো ও মিডিয়া ক্যাম্পেইন বাস্তবায়ন।
সভা শেষে সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর আ. হামিদ সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।