• আজ- সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ১০:২২ অপরাহ্ন

হাওর উন্নয়ন অধিদপ্তরের ঘুম ভাঙার সময় এখনই

লেখক : / ৬৩ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : সোমবার, ১২ মে, ২০২৫

add 1

বাংলাদেশের হাওর ও জলাভূমি অঞ্চল একদিকে যেমন কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের আধার, অন্যদিকে তেমনি পরিবেশগত ভারসাম্যের রক্ষাকবচ। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলকে টেকসইভাবে রক্ষার লক্ষ্যে ২০০০ সালে গঠিত ‘বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড’ এবং ২০১৬ সালে অধিদপ্তরে উন্নীত প্রতিষ্ঠানটি কার্যত এক দীর্ঘ নিস্ক্রিয়তার অধ্যায় রচনা করে চলেছে।

দু’যুগের বেশি সময়েও অধিদপ্তরের চোখে পড়ার মতো কোনো বাস্তবায়িত উন্নয়ন কার্যক্রম নেই। কাজের তালিকায় যা আছে তা হলো কিছু সমীক্ষা প্রকল্প, যেগুলোর ফলাফল বাস্তবতায় প্রয়োগ হয়নি। অন্যদিকে হাওরের বুক চিরে গড়ে উঠছে অপরিকল্পিত সড়ক, রিসোর্টসহ নানা স্থাপনা। এতে পানি প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে, জমছে পলি, ভরাট হয়ে যাচ্ছে হাওর। পরিণতিতে প্রতি বছর বন্যায় ভাসছে সুনামগঞ্জ, সিলেটসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল।

সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, হাওর মহাপরিকল্পনার (২০১২-৩২) বাইরে গিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সুবিধা অনুযায়ী নির্মিত হচ্ছে নানা অবকাঠামো। অভিযোগ রয়েছে, সরকার নিজেই হাওর উন্নয়ন অধিদপ্তরকে পাশ কাটিয়ে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলমান ১১০টি প্রকল্পের মধ্যে ১২টি পরিকল্পনাবহির্ভূত। অথচ এ বিষয়ে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বারবার চিঠিপত্র প্রেরণ করা হলেও তা উপেক্ষিতই থেকেছে।

অধিদপ্তরের কাঠামোগত দুর্বলতাও অত্যন্ত স্পষ্ট। অনুমোদিত ১১৮ পদের বিপরীতে কোনো স্থায়ী কর্মকর্তা নেই। প্রেষণে আসা কয়েকজন কর্মকর্তা এবং অল্প কয়েকজন স্থায়ী কর্মচারী দিয়ে চলছে পুরো কার্যক্রম। এই কাঠামো দিয়ে কোনো বৃহৎ জনস্বার্থভিত্তিক কাজ করা সম্ভব নয়।

বর্তমান মহাপরিচালকের পদত্যাগের সময় দেয়া বক্তব্যে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন, মাঠ পর্যায়ে তেমন কিছু করা সম্ভব হয়নি। তবে কিছু নতুন নিয়োগ ও প্রকল্পের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। আমরা মনে করি, এটি শুভ লক্ষণ হতে পারে, তবে তার বাস্তব রূপ দরকার।

আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য—হাওর উন্নয়ন অধিদপ্তরের ঘুম ভাঙানোর সময় এখনই। কেবল সভা-সেমিনার কিংবা ফাইল চালাচালিতে নয়, প্রয়োজন মাঠভিত্তিক বাস্তব কাজ, প্রয়োজন দক্ষ ও দায়বদ্ধ জনবল, প্রয়োজন আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক সদিচ্ছা।

হাওরের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে হলে আজই নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। তা না হলে এক সময় হয়তো এই অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করাই অসম্ভব হয়ে উঠবে।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ