• আজ- সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪২ অপরাহ্ন

সময়োপযোগী ও বাস্তবভিত্তিক বাজেটের প্রত্যাশা

লেখক : / ১০৩ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : সোমবার, ২ জুন, ২০২৫
জাতীয় বাজেট
জাতীয় বাজেট

add 1

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এটি দেশের ৫৫তম এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাজেট ঘোষিত হচ্ছে যখন দেশ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা হারিয়ে আবার তা পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টায় রত। সুতরাং, নতুন বাজেটের উপর জনগণের দৃষ্টিও স্বাভাবিকভাবেই নিবদ্ধ।

বাজেটের মূল লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানো, স্থানীয় শিল্পকে সহজতর করা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে সহজীকরণ। এই লক্ষ্যমাত্রাগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কাঠামোতে স্থায়ী পরিবর্তন আনার সুযোগ রয়েছে। তবে, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছাই হবে মূল চাবিকাঠি।

এবারের বাজেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো — এটি সামষ্টিক অর্থনীতি ও সামাজিক বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে তৈরি করা হয়েছে। ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের ভাষায়, এটি ‘ছোট নয়, তবে বাস্তবায়নযোগ্য ও সময়োপযোগী’। এই বক্তব্য জনআস্থা তৈরিতে সহায়ক হলেও প্রকৃত বিচার হবে বাস্তবায়নের ময়দানে।

বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ, অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য প্রশিক্ষণ ও আবাসনের ব্যবস্থা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইতিবাচক পদক্ষেপ। একই সঙ্গে রাজস্ব ঘাটতি মোকাবিলায় ধনীদের ওপর বেশি কর আরোপ এবং কালো টাকা বিনিয়োগে কিছুটা ছাড় প্রদানের উদ্যোগও আর্থিক বাস্তবতা বিবেচনায় গৃহীত সিদ্ধান্ত।

তবে বাজেটের আকার গত অর্থবছরের তুলনায় কিছুটা কম — প্রায় ০.৮৭ শতাংশ। এতে উন্নয়ন বাজেট ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমানো হলেও রাজস্ব বাজেট ২৮ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। এতে বোঝা যায়, সরকার ভর্তুকি কমিয়ে বেতন, ঋণ পরিশোধ ও প্রশাসনিক ব্যয়ের দিকেই অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। অথচ টেকসই উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য উন্নয়ন ব্যয়ের দিকে নজর দেওয়া বেশি প্রয়োজন।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, নির্বাচন কমিশন যেখানে ৬ হাজার কোটি টাকা চেয়েছিল, সেখানে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৮০ কোটি টাকা। এটি নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি কালো টাকার বৈধতা ও কর মওকুফের মতো সিদ্ধান্তে একদিকে যেমন রাজস্ব আদায়ে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে, অন্যদিকে তা কর নীতি ও অর্থনৈতিক নৈতিকতার প্রশ্নও উত্থাপন করে।

পরিশেষে বলতেই হয়, বাজেট কেবল সংখ্যা নয় — এটি সরকারের অগ্রাধিকার, পরিকল্পনা ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। তাই ঘোষিত বাজেট বাস্তবায়নে যতটা গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা, তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সুশাসন, দক্ষতা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা। জনগণের প্রত্যাশা হলো, এই বাজেট যেন শুধু কাগজে সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করায় এবং সাধারণ মানুষের জীবনে প্রত্যক্ষ ইতিবাচক পরিবর্তন আনে।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ