বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংলাপের প্রস্তাব বরাবরই এক আশাবাদের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বর্তমান সংকট উত্তরণে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের প্রতি সর্বদলীয় বৈঠক আহ্বানের যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক এবং সময়োপযোগী।
২২ মে বিকেলে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের জরুরি বৈঠকে ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে এই আহ্বান জানানো হয়। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অস্থিরতা, নির্বাচনী অনিশ্চয়তা এবং জাতীয় ঐক্যের অভাবের পটভূমিতে এই প্রস্তাব রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচায়ক।
আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশের রাজনীতি এখন গভীর মেরুকরণ ও অবিশ্বাসের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। একে অপরকে উপেক্ষা করে, অস্বীকার করে কিংবা পরাজিত করার প্রয়াসে যে অবরুদ্ধ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে উত্তরণে সর্বদলীয় সংলাপই হতে পারে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান।
জামায়াতের আমীরের এই আহ্বান অবশ্যই রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরে আলোচনার দাবি রাখে। কারণ, ইতিহাস সাক্ষী—সংলাপ ও সমঝোতার পথ ধরেই বহু সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন, জনগণের আস্থা পুনর্গঠন এবং জাতীয় স্বার্থে একমত হতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ও আলোচনার কোনো বিকল্প নেই।
এখানে প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু তিনি একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ ও শান্তির পক্ষে সুপরিচিত ব্যক্তি, তাই তার নেতৃত্বে এমন একটি সংলাপ আয়োজন রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়নেও ভূমিকা রাখতে পারে।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে—এই আহ্বানে রাজনৈতিক দলগুলো কতটা সাড়া দেবে? একে শুধুই রাজনৈতিক চাল হিসেবে বিবেচনা না করে সত্যিকারের সংকট উত্তরণের একটি উদ্যোগ হিসেবে দেখতে পারলেই এই ডাকে প্রাণসঞ্চার হতে পারে।
আমরা বিশ্বাস করি, মতপার্থক্য থাকলেও সংবিধান, নির্বাচন এবং জাতীয় স্বার্থে একটি অন্তত ন্যূনতম ঐক্য গড়ে তোলা আজ সময়ের দাবি। আর এই সংলাপ হতে পারে সেই ঐক্যের ভিত্তি।