গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে সাবেক মন্ত্রী, আমলা ও রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার অন্তত ১০ জন সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগ অনুযায়ী অনেকেই ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ গ্রহণ, রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ এবং বিদেশে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। কিছু ঘটনায় মামলা দায়ের, সম্পদ জব্দ এবং বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, “যেসব অভিযোগ এখন অনুসন্ধানাধীন, সেগুলোর কার্যক্রম নিয়ম মাফিক এগোচ্ছে। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করছেন। যাদের জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করছেন।”
অভিযুক্ত সাবেক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ
২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সেনাপ্রধানের দায়িত্বে থাকা জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে অনুসন্ধান করছে দুদক। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তার ও তার পরিবারের নামে শত কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তিনি বর্তমানে নিখোঁজ এবং তার ব্যবহৃত নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান শেখ আব্দুল হান্নান
২০২১-২০২৪ মেয়াদে বিমানবাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পালনকারী এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে ঘুষ, অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে তার সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে এবং বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি টি এম জোবায়ের
২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এনএসআইয়ের ডিজির দায়িত্বে থাকা মেজর জেনারেল টি এম জোবায়েরের বিরুদ্ধে চাকরির বিনিময়ে ঘুষ গ্রহণ এবং ২৯ লাখ পাউন্ড লন্ডনে পাচারের অভিযোগ উঠেছে। তার ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে এবং তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান সরকার
পূর্বাচলসহ বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধানে রয়েছেন রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান। তার ও স্ত্রীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সামরিক সচিব সালাউদ্দিন মিয়াজী
ভূমি দখল ও অনিয়মের অভিযোগে সাবেক সামরিক সচিব সালাউদ্দিন মিয়াজীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে। তাকে ইতোমধ্যে এক মামলায় গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান হামিদুল হক
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুদক। তার ও স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এসএসএফের সাবেক ডিজি মুজিবুর রহমান
দুদক অনুসন্ধানে জানতে পেরেছে, এসএসএফের সাবেক মহাপরিচালক মো. মজিবুর রহমান ও তার স্ত্রীর নামে ফ্ল্যাট, প্লট ও বাড়ি রয়েছে। তাদের ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক এমপি ও সেনা কর্মকর্তা মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা হয়েছে।
এনটিএমসির সাবেক ডিজি জিয়াউল আহসান
৪০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ এবং ৩৪২ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে বরখাস্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
তদন্ত অব্যাহত
দুদক বলছে, প্রতিটি মামলায় নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। যারা দোষী প্রমাণিত হবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এখন পর্যন্ত এসব মামলার কোনো আসামি গণমাধ্যমে তাদের বক্তব্য দেননি।