• আজ- সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ০৯:৩৫ অপরাহ্ন

রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে নৈতিকতা ও জবাবদিহিতার সংকট

লেখক : / ৫২ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫

add 1

একজন উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বারবার অনৈতিক আচরণের অভিযোগ উঠলে তা কেবল ব্যক্তির নয়, পুরো রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ওপরই প্রশ্ন তোলে। সম্প্রতি জনপ্রশাসন সচিব ড. মোখলেস উর রহমানের বিরুদ্ধে যেসব গুরুতর অভিযোগ প্রকাশ পেয়েছে, তা আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার নৈতিক দিক ও জবাবদিহিতা সম্পর্কে গভীর উদ্বেগের জন্ম দেয়।

দীর্ঘ চাকরিজীবনে বিভিন্ন কর্মস্থলে নারী সহকর্মীদের প্রতি অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং পেশাগত পরিবেশে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যদি ধারাবাহিকভাবে উঠে আসে, তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। অভিযোগগুলো যদি সত্য হয়, তবে শুধু প্রশাসনের শৃঙ্খলাই বিঘ্নিত হয় না, নারী কর্মকর্তাদের নিরাপদ কর্মপরিবেশও চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।

যতবারই এমন অভিযোগ উঠেছে, ততবারই আমরা দেখেছি নীরবতা, দায় এড়ানোর প্রবণতা, কিংবা ক্ষমতার বলয়ে তাকে রক্ষা করার চেষ্টা। অভিযোগের মাত্রা যখন এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে একজন কর্মকর্তাকে “ইভ-টিজার সচিব” আখ্যা দেওয়া হয়, তখন বিষয়টি শুধুই ব্যক্তিগত নয়, বরং রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠে।

অভিযোগের মধ্যে আরও রয়েছে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার সন্দেহ, যা যদি সত্য হয়, তবে তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে, প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে থাকা কোনো ব্যক্তি যদি বাইরের শক্তির স্বার্থে কাজ করে, তবে সেটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।

এখানে প্রশ্ন উঠেছে: কেন এই ধরনের অভিযোগ সত্ত্বেও তাকে বারবার গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে? কেন বারবার তদন্ত, জবাবদিহিতা কিংবা শাস্তির বদলে গা-ছাড়া নীতির আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে?

সরকারের উচিত এই বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে সকল অভিযোগের যথাযথ যাচাই করা। একজন কর্মকর্তা কতটা দক্ষ বা অভিজ্ঞ, সেটি বিবেচনার হলেও নৈতিকতা ও পেশাদারিত্বে কোনো রকম আপস করা যায় না। শৃঙ্খলা, নৈতিকতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে প্রশাসনকে বিশ্বাসযোগ্য ও কর্মদক্ষ করতে না পারলে জনআস্থা হারানোর পাশাপাশি রাষ্ট্রব্যবস্থাও দুর্বল হয়ে পড়বে।

এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে—প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান চালানো, দুর্বৃত্তায়নের পথ বন্ধ করা এবং কর্মস্থলগুলোকে নারী ও সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য নিরাপদ রাখা। তা না হলে এমন অনিয়ম ও অনৈতিকতার দায় শুধু একজন ব্যক্তির নয়, পুরো শাসনব্যবস্থার ওপরই বর্তাবে।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ