বাংলাদেশের গণমাধ্যম এবং বিচার ব্যবস্থা বর্তমানে এক নতুন বিতর্কের সম্মুখীন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় দণ্ডিত আমার দেশ পত্রিকার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত। দীর্ঘ সময় ধরে পলাতক থাকা মাহমুদুর রহমান আজ আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলেও তা আদালত নামঞ্জুর করেছে। বিষয়টি জনমনে নানান প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
মামলার সূত্রপাত হয় ২০১১ সালে, যখন সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয় বিএনপি এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে। তবে মামলার প্রক্রিয়া, বিচারের গতিপ্রকৃতি, এবং দণ্ডিতদের প্রতি আইনি ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। মাহমুদুর রহমানের আইনজীবীর অভিযোগ অনুযায়ী, তাকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে এবং বিচারিক প্রক্রিয়াকে প্রহসন আখ্যা দিয়েছেন। এমনকি বিচারক ও বিচারপ্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তারা।
এই ধরনের মামলার প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে: গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কি হুমকির সম্মুখীন? মাহমুদুর রহমান, একজন প্রভাবশালী সাংবাদিক ও সম্পাদক, ফ্যাসিবাদী সরকারের সমালোচনা করার কারণে পূর্বেও শাসনযন্ত্রের রোষানলে পড়েছিলেন। আজ আবারও তিনি কারাগারের দ্বারপ্রান্তে। গণতান্ত্রিক সমাজে স্বাধীন মতপ্রকাশ এবং সুষ্ঠু বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। যদি এই বিচারিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা না থাকে, তবে তা শুধু এক ব্যক্তির জন্যই নয়, দেশের সমগ্র গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্যও বিপদজনক হতে পারে।
বিচার ব্যবস্থা এবং আইনের প্রতি সকলের শ্রদ্ধা থাকা উচিত। কিন্তু সেই আইন ও বিচারব্যবস্থার শুদ্ধতা ও স্বচ্ছতাও নিশ্চিত করা জরুরি। এর ব্যতিক্রম হলে জনগণের মনে যে অবিশ্বাসের জন্ম হবে, তা দেশের ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
সত্যিকার ন্যায়বিচারের পথেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে, যেখানে প্রতিটি ব্যক্তির অধিকার এবং সম্মান রক্ষা পায়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের প্রশ্নে আমাদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকতে হবে, তা না হলে জাতির গণতান্ত্রিক চেতনাই হুমকির সম্মুখীন হবে।