
স্বজনদের সঙ্গে মেলবন্ধন গড়তে বছরের নির্দিষ্ট মৌসুমে আমরা একত্রিত হই। দর্শনীয় স্থান ঘুরে ভ্রমণপিপাসা মেটাতে এবারে স্বল্প সময়ে পরিকল্পনা করে রওনা হলাম কক্সবাজারের উদ্দেশে। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ থেকে আগের দিন ভোররাতে নিজস্ব পরিচিত গাড়িতে যাতায়াতের হিসাব করে বেরিয়ে পড়া। সৌহার্দ্যপূর্ণ ‘মিয়া বাড়ির’ সদস্যরা ঘুরতে ভালোবাসে। বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রেরণায় উল্লসিত হয়ে উষ্ণ আবহাওয়ায় ছোট্ট সদস্য শুকরিয়া, ইভা, ইফাতদের সঙ্গে গল্প আর খুনসুটিতে পৌঁছে গেলাম ভোরে। মোটেলে উঠে হাত-মুখ ধুয়ে সকালের নাশতা করার সময় জানালা দিয়ে কমলা রঙের সূর্য দেখছি। বিশ্রাম নেওয়ার পর রৌদ্র-ছায়ার লুকোচুরির মধ্যে ডালমুঠ খাচ্ছি আর চিকচিক করা বালি খালি পায়ে মেখে মনে হচ্ছে, যেন শৈশবে ফিরে গেছি।
হঠাৎ চোখে পড়ল সবুজের সমারোহের মধ্যে কিছু ফড়িং, আমায়িক একটি পেখম তোলা ময়ূর আর অপরাজিতার লতায় ঘেরা দারুণ শোভাময় পরিবেশ। কিছু ফলের গাছে ডালিমের ফুল, কুঁড়ি এসেছে দেখতে সত্যিই মনোমুগ্ধকর।
একটা বেলিফুলের ভারি মিষ্টি ঝাঁকড়া গাছে সাদা থোকা থোকা ফুল নুয়ে পড়ছে, যেমন নুইয়ে পড়ে পনেরো বছর বয়সী কোমল মেরুদণ্ডের মা তার শিশুকে কোলে নিয়ে।
দুপুরের সময় রেস্তোরাঁয় বহু বিদেশি পর্যটকের উপস্থিতি চোখে পড়ল।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে কেবল কক্সবাজারেই বহুমাত্রিক পর্যটন শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পে আদর্শ হতে পারে। বর্তমানে এই খাত থেকে বছরে প্রায় ৭৬.১৯ মিলিয়ন ডলার আয় হয়। দুপুরে সাদা ভাত, ডাল, মুরগির মাংস খেয়ে বিকেলে ঘোরাঘুরি শেষে পরদিন সকলে হোটেল-মোটেল আর রেস্তোরাঁর অভিজ্ঞতা ছেড়ে ‘সি পার্ল ওয়াটার পার্কে’ যেতে চাইলেও প্রবেশমূল্যের দিকে নজর দিতেই চোখ কপালে উঠল বাজেটের বাইরে খরচ হবে। তাই আমরা মেরিন ড্রাইভের পথে কিছু সময় ইনানী বিচ ও ‘সোনার পাড় বিচে’ কাটালাম, চমৎকার সময় উপভোগ করলাম। এক পাশে পাহাড়, আরেক পাশে সমুদ্র এই সৌন্দর্যের গভীরতা স্মৃতিময় করে তুলল দুটি দূরন্ত বালকের আগমন। হাসিমাখা মুখের ‘হোসাইন’ আর ‘শফিক’ পরিচিত হলো, জানলাম ওরা আশপাশেই থাকে। মুখে হাসি থাকলেও জীবনের বাস্তবতা অনিশ্চিত। দর্শনার্থী ভেবে ছবি তুলে দিল।
আমরা খুশি হয়ে ওদের কিছু বকশিশ দিতে চাইলেও কোনোভাবেই তা নেয়নি, বরং একটাই আবদার ছবি তুলে দিক আমাদের স্মার্টফোনে। স্মৃতিবন্দি করলাম জীবন ও জীবিকার কিছু স্থিরচিত্র। লবণচাষিদেরও দেখতে পেলাম।দুপুরে আজ রাঁধুনি রান্না করলেন গরুর মাংস, শাহী পোলাও আর ডিমের কারি। খেয়ে বিশ্রাম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে প্রিয়তমাকে মুঠোফোনে সমুদ্রের ঢেউ দেখাতে গেলাম, কিন্তু নেটওয়ার্ক ছিল ভীষণ দুর্বল। পড়ন্ত বিকেলে ঠোঁটে ভাপ ওঠা গরম চা, আর প্রিয় ‘জবা ফুলটা’ বাস্তবে সঙ্গে ছিল না। ভ্রমণে তৃপ্ত হলেও বুকের মাঝে এক অপূর্ণতা হুহু করে উঠল,বাকি রইল চিৎকার করে বলা: আমি তোমায় সমুদ্রের চেয়েও বেশি ভালোবাসি, তোমার চোখ দুটি সমুদ্রের মতোই গভীর ও শান্ত তুমি আমার অমরাবতী। তুমি আকাশের বুকে বিশালতার উপমা,এই গান গাইতেই সূর্যের মতো রক্তিম হয়ে চোখ ভিজে উঠল, যেন সমুদ্রের ঢেউ বুক ছুঁয়ে গেল। তাঁর অনুপস্থিতি বিদায়লগ্নকে আরও বিষণ্ণ সুন্দর করে তুলল। স্মৃতি জমা হলো কর্ণকুহরে, প্রতিধ্বনিত হলো, একসঙ্গে আমাদের পুরোটা পথ চলা এখনো বাকি।
লেখক: শিক্ষার্থী, ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি, চট্টগ্রাম
ঠিকানা: আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম
ফোন: ০১৫৪০-৫৯১৮০১