কতই না বৈচিত্র্য এই পৃথিবীতে! প্রাণের বৈচিত্র্যও তেমনই বিস্ময়কর—প্রকৃতির কোলে ছড়িয়ে আছে লক্ষ লক্ষ প্রাণী ও উদ্ভিদ। প্রতিটি প্রাণের রয়েছে আলাদা স্বভাব, বৈশিষ্ট্য ও জীবনযাপনের ধরন। কিন্তু তাদের সম্পর্কে আমাদের জানাশোনাই বা কতটুকু?
চলুন, আজ জেনে নিই এমনই এক অদ্ভুত সুন্দর পাখি—হামিংবার্ড—সম্পর্কে কিছু চমকপ্রদ তথ্য।
পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট পাখিটির নাম হামিংবার্ড। উড়ার সময় এত ঘন ঘন ডানা ঝাপটায় যে, আকাশে যেন সুরেলা এক গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়। এই ‘হাম’ বা গুঞ্জন থেকেই এসেছে এদের নাম—হামিংবার্ড।
সবচেয়ে ছোট হামিংবার্ডের দৈর্ঘ্য মাত্র ২ ইঞ্চি (প্রায় ৫-৬ সেন্টিমিটার)। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এদের ওজন গড়ে ২ গ্রাম—যেটা অনেক সময় অন্য একটি পাখির একটিমাত্র পালকের সমান!
উড়ার সময় সেকেন্ডে ৪০ থেকে ৫০ বার ডানা ঝাপটায় এরা, যেন প্রকৃতির মায়াবী হেলিকপ্টার!
বিশ্বজুড়ে হামিংবার্ডের প্রায় ৩৬০টি প্রজাতি রয়েছে, তবে তারা দেখা যায় কেবল আমেরিকা মহাদেশের ট্রপিক্যাল অঞ্চলজুড়ে। বিস্ময়ের বিষয় হলো, এই ক্ষুদে পাখিরা একটানা কোথাও না থেমে মেক্সিকো উপসাগর পাড়ি দিয়ে প্রায় ৯৫০ কিলোমিটার দূরের পূর্ব-উত্তর আমেরিকায় চলে যেতে পারে!
হামিংবার্ডের হার্টবিট প্রতি মিনিটে প্রায় ১২০০ বার! তুলনায়, মানুষের হার্টবিট হয় মাত্র ৬০ থেকে ১০০ বার। এদের খাদ্যগ্রহণের হারও শরীরের আকারের তুলনায় অসাধারণভাবে বেশি। দিনে ৩.১৪ থেকে ৭.৬ ক্যালরি পর্যন্ত খাদ্য গ্রহণ করে তারা—যা একটি পাখির জন্য বিশাল পরিমাণ।
ঘণ্টায় গড়ে ৪৫ কিলোমিটার গতিতে উড়তে সক্ষম হামিংবার্ড, আর তার সবচেয়ে চমৎকার ক্ষমতা—এরা শুধু সামনে নয়, পেছনে, উপরে এবং নিচেও সমান দক্ষতায় উড়তে পারে। এই ক্ষমতা পৃথিবীর আর কোনো পাখির নেই।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, কথিত আছে হামিংবার্ড ডিম পাড়ে উড়ন্ত অবস্থায়! এবং সেই ডিম মাটিতে পড়ার আগেই ফুটে যায় বাচ্চা। যদিও এটি মূলত এক ধরনের লোককথা, তবুও এ পাখির আশ্চর্য গতিবিধি ও রহস্যময় আচরণ একে সত্যিকারের রূপকথার পাখিতে পরিণত করেছে।
প্রকৃতির এই রঙিন বিস্ময় হামিংবার্ড আমাদের শেখায়—ক্ষুদ্র হলেও শক্তিশালী হওয়া যায়, আর গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য শুধু ডানা নয়, থাকতে হয় সাহস আর অসম্ভবের প্রতি বিশ্বাস।