(এক) প্রেম–ভালোবাসা। অদ্ভুত একটি জিনিস। জিনিসটি সুন্দর। ভীষণ সুন্দর। দুনিয়ার সব সুন্দরের মেহফিল থেকে যে সৌন্দর্য প্রকাশ পায়, ফুটে ওঠে— তার চেয়েও বেশী সুন্দর। এই একটি জিনিসে যখন আপনি সঠিক পথে থেকে নিমজ্জিত হবেন, তার রঙ মাখবেন, তখন আপনি প্রকৃত সফলতার চেয়েও বেশী কিছু অর্জনে সক্ষম হবেন। আপনার জীবন হয়ে ওঠবে প্রভাতের সূর্যের ঝিকিমিকি আলোর চেয়েও সুন্দর। ভরা পূর্ণিমা রাতের ফকফকা–ঝকঝকা প্রকৃতির মতো শোভামাখা।
অপর দিকে যখন আপনি ভুল রাহের রাহী হয়ে জিনিসটির উপভোগ বা অনুভূতির শহরে হাঁটবেন, তখন আপনার জীবনে নেমে আসবে অমাবস্যা রাতের আঁধারের চেয়েও কালো আঁধার। আপনি বুঝতেই পারবেন না আপনার জীবন কোন গাঙ্গে ভাসছে। সুস্পষ্ট শত্রু শয়তান আপনাকে তার একান্ত মায়া জালে আটক করে নিবে। আপনি ভাববেন, এটাতো খারাপ কিছু না; ভালো জিনিস। এটাতো পবিত্র। প্রথমাবস্থায় হয়তো এমনটি হবে না; কিন্তু একদিন আপনার মাথায় এ-ভাবনাটাই বন্দী হয়ে যাবে। আপনি ভাবার আর কোন ফুরসত পাবেন না যে, কোনটি পবিত্র আর কোনটি অপবিত্র। কোনটিতে ঝুড়ি ভর্তি পবিত্র সব ফুলের রূপ-ঘ্রাণে ভালো লাগা খুঁজে পাওয়ার মতো, ভালো লাগা খুঁজে পাওয়া যায়। আর কোনটি অচেনা–অজানা বিষাদদের কালো রশি দিয়ে টেনে আনে।
(দুই) এবার দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক ঐ ভালোবাসার, যে ভালোবাসার পরশে জীবন হয়ে ওঠে খাদহীন সব সুন্দরতম রঙে রঙিন। দেখেন— আপনি যখন রবের প্রেমের রাজ্যে ডুব দিবেন, তখন আপনার জন্য প্রশান্তিদায়ক হয়ে যাবে তার সব বিধি-নিষেধ মেনে চলা। তার হুকুম সালাত আদায় করা। যে সালাত সম্পর্কে স্বয়ং রাব্বে কারীম বলেন— ❝ সে সব মূমিন সফলকাম হয়ে গেছে, যারা তাদের সালাতে বিনয়ী। ❞(১) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন— ❝ কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম সালাতের হিসেব নেওয়া হবে।❞ (২)
শুধু সালাতই না, বরং তখন সালাতের মতো প্রতিটি ফরয বা আবশ্যকীয় কাজই আপনি খুউব ভালো-লাগার বুক জুড়ে বিচরণ করে পালন করতে পারবেন। আর এ-সব কাজই তো আপনার জীবনকে রঙধনুর রঙসমূহের মতো রঙয়ে রঙিন করতে পারগ হবে,‘যদি রব চান’!
এমনইভাবে যখন রাসূল সাঃ-এর প্রেমে হাবুডুবু খাবেন, তখন আপনি তাঁর নাম যবানে আনবেন খুউব শ্রদ্ধার সাথে। তাঁর প্রতি দুরূদ পড়বেন, হৃদয়ের সবটুকু মাখিয়ে।তাঁর মুখখানি স্বপ্নে একটিবার দেখার জন্য, তাকে নিয়ে ভাবতে থাকবেন হাজারও দিবায় এবং নিশিতে। এই সব ভাবনা আর কল্পনাদের আঁকবেন, কবিতার প্রতিটি সারিতে অথবা সুরের অরণ্যে হারাতে–হারাতে।আচ্ছা, এই সব কাজও কী জীবনে বসন্ত আনার জন্য যথেষ্ট নয়? নিশ্চয়ই যথেষ্ট। এবার দেওয়া যাক ঐ ভালোবাসার দৃষ্টান্ত, যে ভালোবাসা জীবন ডুবিয়ে দেয় কলুষিত এক আঁধার সাগরের অতলে। এটা তো ঐ ভালোবাসাই, যে ভালোবাসা প্রকৃতপক্ষে নিরেট নষ্টামী বৈ কিছু নয়। এই কাজটিতে যখন আপনি জড়াবেন, নিত্যই তখন আপনি হাঁটবেন পাপের সড়ক ধরে। রব আর আপনার মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকবে প্রতি মুহূর্ত। কীভাবে বাড়বে?— বাড়বে যখন আপনি এমন একজন ‘নারী’র চিন্তায় ডুবে থাকবেন প্রতি মুহূর্ত, যার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার ক্ষণটায় তার শরীরের ঘ্রাণ শুঁকাটাও আপনার জন্য নিষেধ। যেখানে ঘ্রাণ শুঁকাটা নিষেধ— সেখানে আপনি তার সাথে আড্ডায় মেতে থাকবেন, তার মিষ্টি কথায় প্রান জুড়াবেন, আরেকটু এগিয়ে বললে— পার্কে তার হাত ধরে নিশ্চিন্তে হাঁটবেন, রবের সাথে দূরুত্ব তো বাড়বেই। রব বলেন—❝ আপনি মূমিন ব্যক্তিদের বলে দিন, তারা যেনো তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাযত করে।❞(৩)
যখন আপনি পার্কে বা যে কোন জায়গায় গায়রে মাহরাম কারোর হাত ধরে হাঁটছেন, বা তাকে দেখছেনই— তখন কি আপনার দৃষ্টি সংযত থাকছে? থাকবে কীভাবে? আপনি তো একজন পুরুষ, এই একই কারণে উল্লেখিত আয়াতটিতে রবের দ্বিতীয় নিষেধাজ্ঞার বিপরীত কাজ করার প্রতিও, তখন আপনি শয়তান থেকে প্ররোচনা পাবেন। তো আপনার রব থেকে কি দূরুত্ব বাড়ছে না? আপনি কি হাঁটছেন না শয়তানের দেখনো পিচ্ছিল কালো পথে? আপনার কি হারানো হচ্ছে না ঐ পথে, যে পথ আপনাকে সর্ব নিকৃষ্ট স্থান জাহান্নাম পর্যন্ত পৌঁছার তাগিদ দিচ্ছে? জি, বিষয়টি এমনই। শয়তান যখন তার মায়া জালে আপনাকে আটক করে নিবে খুব শক্ত ভাবে, তখন আপনার আস্তে-ধীরে ঐ পথেরই পথিক হওয়া স্বাভাবিক, যে পথ জাহান্নামের দিকে টেনে নেয় ক্রমে-ক্রমে। আর এ-পথের পথিক যখন আপনি হয়ে যাবেন, তখন আপনার জীবন বিষাদদের কালো ছায়ায় ঢেকে যাবে, এটাই স্বাভাবিক।
উল্লেখ্য— আপনি হয়তো অবৈধ এই কাজটির পরিণাম যে এতোটা গভীর আঁধারেও পৌঁছে যায়, সেটা ভাবেবনি কখনো; কিন্তু ভাবনার দ্বারে একটু গভীরভাবে কড়া নাড়লে, আপনার জন্যও বিষয়টি আঁচ করতে পারা অসম্ভব কিছু নয়। ভাবুন, একটু ভাবুন! ফিরে আসুন মুক্ত বাতাসের খোঁজে।
সূত্র:
১. সুরা মুমিনূন, আয়াত:১-২
২.তিরমীযি, হাদীস নং: ৪১৩
৩. সুরা নূর, আয়াত: ৩০