বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সাম্প্রতিক বক্তব্য সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন—দেশের ভবিষ্যৎ পথ নির্ধারণের অধিকার কেবল একটি নির্বাচিত সরকারেরই রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত—এমন মন্তব্যে তিনি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
ঢাকা সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত অফিসার্স অ্যাড্রেস অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান নির্বাচনের পাশাপাশি করিডর, চট্টগ্রাম বন্দর এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মানবিক করিডরসহ সমসাময়িক নানা বিষয়ে মত প্রকাশ করেন। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট—সেনাবাহিনী কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে চায় না, বরং জাতীয় স্বার্থ রক্ষার প্রশ্নে সতর্ক ও ন্যায্য ভূমিকা রাখবে।
বিশেষ করে রাখাইন ইস্যুতে তিনি বলেছেন, মানবিক করিডর সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত অবশ্যই একটি নির্বাচিত সরকার থেকে আসতে হবে, এবং তা হতে হবে বৈধ ও সর্বসম্মত প্রক্রিয়ায়। এই বক্তব্য কেবল কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে নয়, দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতাকেও গুরুত্ব দেওয়ার প্রতিচ্ছবি।
‘মব ভায়োলেন্স’ প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান যে কঠোর বার্তা দিয়েছেন, তা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় সেনাবাহিনীর সক্রিয় মনোভাবেরই পরিচায়ক। তিনি স্পষ্ট করেছেন, সংঘবদ্ধ জনতার নামে সহিংসতা বরদাশত করা হবে না। একইসঙ্গে, ঈদুল আজহার প্রাক্কালে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথাও বলেছেন, যা তাঁর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন।
চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি পরিচালনায় বিদেশি অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেছেন, স্থানীয় জনগণ ও রাজনৈতিক নেতাদের মতামত গ্রহণ করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এতে বোঝা যায়, কৌশলগত সম্পদ ব্যবস্থাপনায়ও তাঁর অবস্থান জাতীয় স্বার্থকেই প্রাধান্য দেয়।
সংস্কার ইস্যুতে তাঁর বক্তব্য ছিল আরও স্পষ্ট—এই বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কোনো পরামর্শ হয়নি। এটি একটি প্রশাসনিক দৃষ্টান্ত, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণে অন্তর্ভুক্তিমূলকতা কতটা জরুরি তা মনে করিয়ে দেয়।
সবশেষে, তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষতা এবং আগত নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের সময় সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার আহ্বান। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার আশ্বাসও দেন তিনি।
এই বক্তব্যগুলো শুধু সেনাবাহিনীর দৃষ্টিভঙ্গিই নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক যাত্রার পথে একটি শক্তিশালী বার্তাও। জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের স্পষ্ট ও সংযত ভাষ্য আমাদেরকে আশ্বস্ত করে যে, একটি পেশাদার, নিরপেক্ষ এবং দায়িত্বশীল সেনাবাহিনীই আমাদের জাতিগত অগ্রযাত্রার সহযাত্রী।