বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট দীর্ঘদিন ধরেই অস্থিরতা, দ্বন্দ্ব ও বিভাজনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে। স্বাধীনতার পর থেকে কাঙ্ক্ষিত শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে ওঠেনি—এমন মন্তব্য আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বাস্তবতাকেই তুলে ধরে। সম্প্রতি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা এ প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হতে পারে। সোমবার (১২ মে) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি দলের নেতাকর্মীদের প্রতি উসকানি বা অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার সঙ্গে না জড়ানোর আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি ধৈর্য, সহনশীলতা, ইনসাফ এবং মহান আল্লাহর ওপর নির্ভরতা বজায় রাখার কথা বলেন। এই বার্তায় কেবল দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিই নয়, বরং সামগ্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতি একটি দায়িত্বশীল দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ রয়েছে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবেই, কিন্তু তা যেন সংঘাতের পথে না গড়ায়, সে বিষয়েও সচেতনতা দরকার। ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, তিনি এমন একটি পরিবেশ চান, যেখানে ভিন্নমত থাকবে, কিন্তু তা হবে শান্তিপূর্ণ ও শালীন।
এ কথা অনস্বীকার্য, যে কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতৃত্বের দায়িত্ব হলো তাদের অনুসারীদের সংযত রাখা, বিশেষ করে যখন সমাজে উত্তেজনা বা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। এ প্রেক্ষাপটে জামায়াত আমিরের এই বার্তা একটি ইতিবাচক উদাহরণ হতে পারে, যদি তা বাস্তবে প্রতিফলিত হয়।
ধর্মীয় আবেগ ও দোয়ার মাধ্যমে একটি বার্তা শেষ করা তাঁর বক্তব্যকে আরও মানবিক ও আত্মিক আবহ দিয়েছে। তিনি যে দোয়া পাঠ করেছেন, তা—”হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি‘মাল ওয়াকিল, নি‘মাল মাওলা ওয়া নি‘মান নাসির”—সঙ্কটকালে আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠে।
আমরা আশা করি, শুধু জামায়াত নয়, দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও নাগরিক সমাজ এ ধরনের দায়িত্বশীল ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক চর্চার প্রতি উৎসাহিত হবে। কারণ, গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো মত প্রকাশের স্বাধীনতা, তবে তা যেন সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলার জন্ম না দেয়—এটাও মনে রাখা জরুরি।