এই ঈদ ঘিরে আমাদের স্মরণে আসে মহান ত্যাগের অবিস্মরণীয় ইতিহাস। আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় পুত্র ইসমাইল আ.-এর গলায় ছুরি চালাতে পিছপা হননি হযরত ইবরাহিম আ.। সেই আত্মত্যাগের চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি পেলেন ‘খলিলুল্লাহ’ বা আল্লাহর বন্ধু উপাধি। এই ঘটনা শুধুই ইতিহাস নয়, বরং প্রতিটি মুসলমানের জীবনে আত্মত্যাগ ও আত্মনিয়োগের এক অনন্য অনুশীলন।
কুরবানি মানে কেবল পশু জবাই নয়—এটি এক গভীর আত্মজিজ্ঞাসার সময়। ঈদের আনন্দ তখনই অর্থবহ হয়ে ওঠে, যখন আমরা নিজেদের ভেতরের পশুত্ব—লোভ, অহংকার, স্বার্থপরতা, হীনমন্যতা ও অন্যায় প্রবৃত্তিকে কুরবানি করি। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন, ‘তোমাদের কুরবানিকৃত পশুর গোশত কিংবা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, পৌঁছে কেবল তোমাদের তাকওয়া।’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়—
“ওরে সত্য মুক্তি স্বাধীনতা দেবে এ সে খুন-মোচন!
ওরে হত্যা নয় আজ সত্যাগ্রহ, শক্তির উদ্বোধন।”
এই ঈদ আমাদের সেই শক্তির উৎস হয়ে উঠুক, যা অন্যায়-অনাচার, শোষণ-ফ্যাসিবাদ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সাহস জোগায়। বিগত বছরের রাজনৈতিক বাঁকবদলে আমরা নতুন প্রত্যাশার মুখোমুখি হয়েছি। এখন প্রয়োজন এই আশাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার। রাষ্ট্রব্যবস্থার শুদ্ধি ও পুনর্গঠন, খুন-গুম ও নির্যাতনের বিচার এবং গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা—এই ঈদের ত্যাগের অনুপ্রেরণায় আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
আসুন, ঈদুল আজহার আত্মত্যাগ ও ন্যায়চেতনার আলোকে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র—তিন স্তরেই সত্য ও কল্যাণের প্রতিষ্ঠায় নিজেকে নিয়োজিত করি।
ধনী-গরিব, উচ্চ-নিম্ন, বর্ণ ও শ্রেণিভেদের ঊর্ধ্বে উঠে গড়ে তুলি একটি সাম্যভিত্তিক সমাজ।
ঈদের এই পবিত্র দিনে আমাদের প্রার্থনা—
আল্লাহ আমাদের সালাত, কুরবানি ও সব সৎকর্ম কবুল করুন। আমীন।
সাহিত্যপাতার পক্ষ থেকে আমাদের সম্মানিত পাঠক, লেখক, গ্রাহক, শুভানুধ্যায়ী, সাংবাদিক ও সহকর্মীদের জানাই পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা—
ঈদ মোবারক!
তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম।