সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের নবঘোষিত কমিটিতে একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতার নাম সভাপতি হিসেবে অন্তর্ভুক্তির গুঞ্জন ছাত্র রাজনীতিতে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন নয়—ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যাদের ‘জামায়াত-শিবির’ বলে প্রচার করে চরিত্র হনন করা হতো, আজ তারাই কি বিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে আসছেন?
যদি সত্যিই একজন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কমিটির সাবেক সহসভাপতি ছাত্রদলের সভাপতি হন, তবে তা শুধু একটি নামের বিষয় নয়, বরং একটি গভীর আদর্শিক সংকটের প্রতিচ্ছবি। ছাত্রদল বরাবরই নিজেকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও বিএনপির রাজনৈতিক আদর্শে পরিচালিত সংগঠন হিসেবে উপস্থাপন করে এসেছে। অথচ আজ সেই সংগঠনের অভ্যন্তরেই প্রশ্ন উঠছে—ছাত্রলীগ থেকে আসা ব্যক্তিকে কি ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাথায় বসানো হবে?
এ নিয়ে ছাত্রদলের একাধিক নেতা-কর্মীর ক্ষোভ বিস্ফোরণ অনিবার্যই ছিল। অনেকেই সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন—ছাত্রদল কি এখন ছাত্রলীগ নেতাদের পুনর্বাসনের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে? ত্যাগ, নির্যাতন ও আদর্শের রাজনীতি কোথায় হারিয়ে গেল?
যদিও বিতর্কিত ব্যক্তি আরাফাত হোসেন (যিনি নিজেকে আরাফাত রহমান বলে দাবি করেন) বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি দাবি করেছেন, ছাত্রলীগের যে তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে, তা এডিট করে বানানো হয়েছে। তাঁর বক্তব্য যদি সত্য হয়, তাহলে সেটিও অত্যন্ত গুরুতর ও তদন্তসাপেক্ষ বিষয়।
তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—ছাত্রদলের মতো রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি সংগঠনের কমিটিতে একজন নেতার অতীত পরিচয়, রাজনৈতিক ইতিহাস ও আদর্শ নিয়ে এত দ্বন্দ্ব কেন? যাচাই-বাছাই ছাড়া দায়িত্ব প্রদান করা হলে, সংগঠনের আদর্শ ও শৃঙ্খলা দুটোই প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
আজ যারা ‘জামায়াত-শিবির’ তকমায় নিপীড়িত হচ্ছেন, কাল তারা যদি ‘ছাত্রলীগ নেতা’ হয়ে ছাত্রদলে জায়গা পান, তাহলে রাজনীতির চরিত্র বদলে যায়, কিন্তু মানুষের আস্থার জায়গা ভেঙে পড়ে। আদর্শহীন রাজনীতি দলকে দুর্বল করে, আর নেতৃত্বহীনতা তা আরও গভীর সংকটে ফেলে।
অতএব, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উচিত দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্ত করে প্রকৃত তথ্য জাতির সামনে তুলে ধরা। প্রয়োজন হলে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে—সংগঠনের আদর্শ, ত্যাগী নেতাকর্মী ও ভবিষ্যতের স্বার্থে।
সংগৃতি: ক্রাইমবার্তা