বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোর কেন্দ্রে যখন সচিবালয়, তখন তার কর্মচারীদের আন্দোলন একটি বড় বার্তা দেয়—এটি কেবল একটি খসড়া আইনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ নয়, বরং সুশাসনের ভিত্তি প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার ইঙ্গিত।
‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ায় ১৯৭৯ সালের নিবর্তনমূলক ধারাগুলো যুক্ত করার উদ্যোগ প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এই আইনটি শুধু দমনমূলক বিধান বলেই দেখা হচ্ছে না—এটি দীর্ঘদিনের অর্জিত অধিকার, যেমন সচিবালয় ভাতা ও রেশন সুবিধা, সেগুলো থেকেও বঞ্চিত করার পূর্বাভাস দিচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
দুই দিনের টানা প্রতিবাদ, মৌন মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি এটাই প্রমাণ করে যে, মাঠ প্রশাসন থেকে মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তর—সর্বত্রই অস্থিরতা বাড়ছে। যদি রাষ্ট্র তার নিজস্ব কর্মচারীদের কথা শুনতে অনাগ্রহী হয়, তবে সাধারণ জনগণের জন্য সে কতটা দায়বদ্ধ থাকবে—এ প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া নিয়েও প্রশ্ন থাকছে। একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের ভূমিকা হওয়া উচিত সুষ্ঠু নির্বাচন ও দৈনন্দিন রুটিন প্রশাসন চালানো।
আমরা মনে করি, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় বসা এবং আইন প্রণয়নের আগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্বেগ ও পরামর্শ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা। অন্যথায়, প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ সংকট রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা শুধু শাসনের মাধ্যমে নয়, বরং বিশ্বাস, স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতার মাধ্যমে গড়ে উঠে। সরকারি চাকরি আইন সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অন্ধকারে রাখা কোনো পক্ষই গ্রহণযোগ্য নয়।