একজন গর্ভবতী নারী শুধুই একটি নতুন প্রাণের বাহক নন, তিনি নিজেই এক অনন্য জীবনের অধ্যায়। এই সময় তার শরীর ও মন—দুটোই চলে ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। শারীরিক জটিলতা, মানসিক চাপ ও ভবিষ্যৎ নিয়ে অজানা ভয়ের সঙ্গে তাকে লড়াই করতে হয় প্রতিনিয়ত। এই পরিস্থিতিতে পরিবারের সহানুভূতি, সঠিক চিকিৎসা, পুষ্টিকর খাদ্য এবং মানসিক প্রশান্তি তার জন্য অত্যন্ত জরুরি হয়ে ওঠে।
গর্ভকালীন সময়ে পর্যাপ্ত সুষম খাবারের অভাব, বিশেষ করে আয়রনের ঘাটতি, রক্তস্বল্পতা এবং অপুষ্টিজনিত জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, যা গর্ভের শিশুর স্বাভাবিক বেড়ে ওঠাকে বাধাগ্রস্ত করে। অনেক সময় চিকিৎসা সেবা গ্রহণে গাফিলতি মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনে। তাই গর্ভবতী নারীর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সঠিক পরামর্শ গ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। বিশেষ করে কর্মজীবী নারীদের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও অক্সিজেনের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
তবে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার চেয়ে বড় একটি সমস্যা আমাদের সমাজে বিদ্যমান—তা হলো লিঙ্গবৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি। আজো অনেক পরিবারে গর্ভে কন্যা সন্তান বহন করায় একজন নারীকে কষ্টকর, অবমাননাকর আচরণের শিকার হতে হয়। এই মানসিক চাপ অনেক সময় তার শরীরের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে। অথচ কন্যা সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ নিয়ামত—যা সবাইকে প্রদান করা হয় না। অথচ আমরা সেই নিয়ামত পাওয়ার পরেও অসন্তুষ্ট থাকি, যা এক ধরনের সামাজিক বর্বরতারই নামান্তর।
এমতাবস্থায় সরকারের মাতৃত্বকালীন ভাতা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। এটি গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসা, পুষ্টি ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। তবে শুধুমাত্র ভাতা বা চিকিৎসা নয়—এই সময়ে একজন নারীকে প্রয়োজন হয় ভালোবাসা, সম্মান, ও মনোবল বৃদ্ধিকারী পারিবারিক সহানুভূতির। তার প্রতি সহানুভূতি নয়, সম্মান থাকা উচিত।
অতএব, একজন গর্ভবতী নারীর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। তাকে কেবল একজন সন্তান প্রসবকারী নারী হিসেবে নয়, বরং একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে, যার অনুভূতি, প্রয়োজন ও অধিকার রয়েছে। আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক কাঠামোতে এই মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে শুধু নারী নয়—আমরা পুরো সমাজই একটি অসুস্থ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাব।