• আজ- সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ০৯:০৯ অপরাহ্ন

করোনা আবার বাড়ছে: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১১ দফা নির্দেশনা জেনে নিন

আব্দুর রহমান / ১০৬ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১২ জুন, ২০২৫
covid-19
করোনা

add 1

দেশে আবারও করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে। মে মাসে কোভিড-১৯ পজিটিভ হার ৯.৫১ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ২০২৩ সালের জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। এমন প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সতর্কতা ও পদক্ষেপ সময়োপযোগী এবং গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে আমরা এই ভাইরাসের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেছি। তাই নতুন করে যেন পুরনো বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে বিষয়ে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সম্প্রতি ১১ দফা নির্দেশনা জারি করেছে, যা জনসাধারণের করণীয় ও সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে করণীয় হিসেবে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসাধারণের করণীয়:

১. জনসমাগম যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে এবং উপস্থিত হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
২. শ্বাসতন্ত্রের রোগ থেকে রক্ষার জন্য সর্বদা মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।
৩. হাঁচি বা কাশির সময় বাহু বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখা জরুরি।
৪. ব্যবহৃত টিস্যু অবিলম্বে ঢাকনাযুক্ত ময়লার ঝুড়িতে ফেলতে হবে।
৫. ঘনঘন অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান ও পানি বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া আবশ্যক।
৬. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৭. আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন এবং কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন।

সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে করণীয়:

১. জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট থাকলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকুন।
২. রোগীকে মাস্ক পরার জন্য উদ্বুদ্ধ করুন।
৩. রোগীর সেবাদানকারীদের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
৪. প্রয়োজনে নিকটস্থ হাসপাতাল, আইইডিসিআর (০১৪০১-১৯৬২৯৩) অথবা স্বাস্থ্য বাতায়ন (১৬২৬৩)-এ যোগাযোগ করুন।

এই নির্দেশনাগুলোর কার্যকর বাস্তবায়নই পারে সংক্রমণ রোধে বড় ভূমিকা রাখতে। পাশাপাশি, সরকার শুধুমাত্র উপসর্গযুক্ত ও জটিল রোগীদের করোনা পরীক্ষা করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বাস্তবতাকে গুরুত্ব দেয়। তবে সেই সঙ্গে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, হাসপাতাল প্রস্তুতি, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের পর্যাপ্ততা নিশ্চিতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রশংসনীয় বিষয় হলো, আবারও আরটি-পিসিআর ও র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা সরঞ্জাম নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—আমরা কি আগের অভিজ্ঞতা থেকে যথাযথ শিক্ষা নিয়েছি? অক্সিজেন সংকট, আইসিইউ ঘাটতি কিংবা টিকার অপর্যাপ্ততা যেন আবার ফিরে না আসে, সে বিষয়েও প্রস্তুত থাকতে হবে।

নতুন ভ্যারিয়েন্টের সম্ভাবনা, ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে সংক্রমণ বিস্তার, মাস্ক ব্যবহারে জনগণের অনীহা এবং স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষার প্রবণতা করোনা সংক্রমণকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। তাই এসব বিষয়ে কড়া নজরদারি, সচেতনতামূলক প্রচারণা এবং আইনি প্রয়োগও বিবেচনায় নিতে হবে।

স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের বক্তব্য—“আতঙ্ক নয়, সচেতনতা জরুরি”—এই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক। তবে এই সচেতনতা গড়ে তুলতে হলে সরকারের পাশাপাশি নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সকল পক্ষকে একসাথে কাজ করতে হবে।

আমাদের প্রত্যাশা—সরকার কেবল মুখে নয়, বাস্তব প্রস্তুতির দিকেও সমান গুরুত্ব দেবে। করোনা মোকাবিলায় অতীতের সাফল্য ধরে রাখতে এখনই সময় সঠিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণের। আর নাগরিকদের উদ্দেশে বার্তা একটাই—সতর্ক হোন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, এবং দায়িত্বশীল আচরণ করুন। কারণ এই লড়াই কেবল সরকারের নয়, আমাদের সবার।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ