• আজ- বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৪ অপরাহ্ন

একদিন অপরাহ্নে

লেখক : / ১৬৩ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০২৩

add 1

অনিতা সরকার অণু

সেদিন বসন্তের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে গাছের পুরোনো পাতাগুলো বিবর্ণ ধূসর রঙের হয়ে আসছে।কিছু গাছের শীর্ণ নগ্ন শরীর। একটিও পাতা নেই তার কোন শাখায়। তখনও হালকা কুয়াশার চাদর বিছিয়ে প্রকৃতি সূর্যকে ক্ষণকালের জন্য আড়াল করে। হিমেল হাওয়া বয়ে যায় প্রকৃতির শরীর ছুঁয়ে। মোনা এমনই এক ভোর বেলায়, স্বপ্ন দেখে। আবীর তাকে ডাকছে। ও কোন কিছু না ভেবেই বলে দেয়। আমি আসব। কিন্তু কীভাবে আসব আমার তো পথ জানা নেই? আবীর অভিমানের গলায় বলে, তুমি আমাকে একটুও চাও না। তাই এমন করে বলছো। গাড়িতে চড়বে। আমি তোমার জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় অপেক্ষা করব! মোনা আর কিছু না ভেবে বলে আমি আসছি। ও তৈরি হয়ে বেরিয়ে পরে বাসা থেকে। ভোরের শিশির ভেজা ধান গাছের কচি সবুজ পাতায় ভোরের শিশির বিন্দুগুলো নুয়ে পড়ছে। পাখিরা গাছের পাতার আড়ালে বসে কিচিরমিচির করছে। আমের শাখায় শাখায় মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে। গাছগুলোর পাতা আর দেখা যাচ্ছে না। শিমুলের ডালে ডালে কুড়িগুলো ফোটার প্রতীক্ষায় উঁকিঝুঁকি মারছে। যেদিকে দৃষ্টি যায়,শুধু সবুজ আর সবুজ ধানের সমারোহ। মোনা সবকিছুকে পিছনে ফেলে, নদীর স্রোতের মতো এগিয়ে যাচ্ছে। অচেনা অজানার উদ্দেশ্যে! গাড়িতে বসে, আবীর কে মুঠোফোনে কল দেয়। কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।কুয়াশার ধোঁয়া ভেদ করে গাড়ি দ্রুত গতিতে চলতে শুরু করেছে। চেনা সব দৃশ্য ধীরে ধীরে উধাও হয়ে যাচ্ছে দৃষ্টির সীমানা থেকে। মোনা মুঠোফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। কখন আবীরের কল আসবে। অজানা একটা শংঙ্কায় তার মন অস্থির হয়ে আছে। নানা দুশ্চিন্তা এসে ঘিরে ধরছে চারপাশ থেকে। যদি পথে গাড়ি খারাপ হয়ে যায়। যদি সে আর ওখানে পৌঁছাতে না পারে।সাত-পাঁচ ভেবে ভেবে যখন মন বিষণœতার আঁধারে তলিয়ে যাচ্ছে।ঠিক তখনই আবীরের কল আসে। আমি দু:খিত। সারারাত ঘুমোতে পারিনি। ভোরের দিকে কখন যে ঘুমিয়েছি, তাই তোমার কলের শব্দেও আমার ঘুম ভাঙেনি। তোমার কল শুনতে পাইনি। রাগ করো না লক্ষ্মীটি। তুমি এখন কোন জায়গায় আছো? মোনা জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখে কোনকিছু দেখতে পায় কি না।ও বলতে পারে না কিছু। আবীর বলে ঠিক আছে। তুমি চিন্তা করো না। আমি তোমাকে কল করবো।আমি নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই পৌঁছে যাব। মোনা একটু স্বস্তি পায়।রাতে ঠিক মতো ঘুমোতে না পারার জন্য, ওর একটু তন্দ্রা এসে যায়।ও ঘুমিয়ে পরে। আবীরের কলে ও জেগে ওঠে। এখন নিজেকে একটু হালকা লাগছে। আবীর বলছে, এখন কোন জায়গায় আছো? মোনা বলে দেয়। আর বেশি সময় লাগবে না। তুমি চলে এসেছো।ওপাশ থেকে আবীর বলে, আমি অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি। মোনার ভেতরে এখন অন্য রকম একটা অনুভূতি কাজ করতে শুরু করছে।গাড়ি নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছল। মোনা গাড়ি থেকে নেমে চারপাশে তাকিয়ে দেখে। কিন্তু আবীর কে সে কোথাও দেখতে পায় না। আবীর মোনার ভেতরের অবস্থাটা দেখার জন্য আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিল! সামান্য সময়। কিন্তু মোনার যেন মনে হচ্ছিল, অনন্তকাল ধরে সে দাঁড়িয়ে আছে। সময় যেন থমকে গেছে। আবীর সামনে আসে।ও আজ পরেছিল কালো রঙের পাঞ্জাবি আর ব্লু জিন্স প্যান্ট। মোনা সকল অভিমান-অনুযোগ ভুলে অপলক তাকিয়ে রইল কয়েকমুহূর্ত। আবীরের ডাকে ওর সম্বিত ফিরল। কোথায় যাবে, মোনা বলল, যেখানে নিয়ে যাবে। ওরা অটোরিকশা নিল। আবীর বারবার মোনার দিকে তাকাচ্ছে। কি দেখছো বারবার ওমন করে? আবীর বলে, এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। এটা স্বপ্ন না সত্যি। তুমি সত্যিই আসবে আমার বিশ্বাস হয়নি।মোনা কিছু বলে না। শুধু অপলক তাকিয়ে দেখে। আর মুগ্ধতা ছেয়ে যায় তার মন। কী করে এত সুন্দর হতে পারে মানুষ। আবীর বলে, এই তোমার কী হলো? হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেলে? তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না আমি আসতে পারি কী না? আমার ও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, আমি তোমাকে সত্যি সত্যি পেয়েছি? মোনার চোখের কোল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরল দু’ফোটা। আবীর ওর হাতের আঙুল দিয়ে মুছে দিল। আবীর বলে, কী হচ্ছে এসব? আগে বাসায় চলো, পরে সব শোনব। এখন একটু রেস্ট নাও। চোখ বন্ধ করে মোনা আবীরের কাঁধে মাথা রাখে। ওর মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে স্বস্তির স্থানে আজ সে পৌঁছে গেছে। বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে সূর্য ঠিক মাথার উপর ওঠে গেছে। আবীর বলে, ওঠো আমরা এসে গেছি। মোনা চোখ খোলে দেখে। সবুজেঘেরা ছোট্ট দুতলা বাড়ি। সামনে আবীরের পছন্দের সব পাতাবাহারের সারি। ছোটো গোলাপি রঙের গোলাপের বাগান। বাড়ির প্রবেশ পথে দুটো কৃষ্ণ চূঁড়া গাছ। ছাতার মতো দাঁড়িয়ে আছে। আবীরের অরণ্য খুব পছন্দ। তাই তার ছোট্ট বাড়িটাকে সবুজের সমারোহে সমৃদ্ধ করেছে। মোনা কে নিয়ে আবীর সোজা ওঠে এলো দু’তলায় ওর রুমে। এত পরিপাটি করে সাজানো ওর রুম। কেউ বলবে না। এটা কোন ছেলের রুম। ছোটো একটা বইয়ের আলমারি, টেবিলের ওপর সদ্য ফোটা দোলনচাঁপার গুচ্ছ। ওর বিছানাটা কচি সবুজ এর ওপরে একগুচ্ছ রজনী গন্ধার ঝাড়। বিশাল জানালার পর্দা সরালে শুধু সবুজ বৃক্ষ আর পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত চারপাশ। আবীর এতক্ষণ একটিও কথা বলেনি। পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল, তুমি কী চেঞ্জ করবে না? মোনা আঁতকে উঠল। এই এই কী করছো? কী করলাম! তুমি আমার শুধুই আমার। ছাড় বলছি। আবীর বলে, ঠিক আছে এই ছেড়ে দিলাম। তুমি চেঞ্জ করে নাও। মোনা বলে, আমি তো কোন ড্রেস আনিনি! আবীর আলমারি থেকে ওর টিশার্ট আর টাউজান বের করে দিয়ে বলে, তুমি ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি খাবারের ব্যবস্থা করছি। তাড়াহুড়োয় আমারও খাওয়া হয়নি। আবীর বেরিয়ে যায়। মোনা ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসতে আসতে, এর মধ্যে আবীর খাবার নিয়ে চলে আসে। ওরা দু’জনে খাবার টেবিলে বসে। কারোর চোখের দিকে তাকায় না। আবীর বলে, কী হলো তোমার? একেবারে চুপ হয়ে গেছো যে? মোনা বলে, তুমি আমাকে ভুলে যাবে না তো? আবীর একদমই কম কথা বলে। আজ হঠাৎ বলতে শুরু করে। তুমি বারবার এমন কথা বলো কেন? এসব অর্থহীন অবান্তর কথা আর কখনও বলবে না। আবীর মোনার পাশে এসে বসে।ওর মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে বলে, তোমাকে ভুলে যাব, এটা আমার পক্ষে এ জীবনে আর কোনদিন সম্ভব নয়। আমি একটা মুহূর্তও তুমিহীন নই কোথাও। শত ব্যস্ততায়ও তুমি আছ আমার সঙ্গে। ওরা খাওয়া শেষ করে রুমে আসে। আবীর এই প্রথম মোনা কে তার বুকে জড়িয়ে ধরে। মোনাও বাঁধা দেয় না। আবীরের শরীর থেকে মিষ্টি একটা ঘ্রাণ মোনা কে মোহিত করে দেয়। ভালোবাসার স্পর্শের উষ্ণতায় শরীরের প্রতি রক্ত কণিকায় এক অদম্য ভালোলাগায় আচ্ছন্ন হয়ে রয়। আবীর বলে, আমি ভেবে ছিলাম। তুমি আসবে না। ফিফটি পার্সেন্ট বিশ্বাস হচ্ছিল। আর ফিফটি পার্সেন্ট…।
মোনা বলে, আমি জানি তো, তুমি আমাকে চাও না। আমার অনুভূতিগুলো কে তুমি অনুভব করতে পার না। কখনও আমাকে…। আবীর মোনার মুখে হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়। বলে, আমি তোমার মতো এত গুছিয়ে বলতে পারি না। তাই তোমাকে বুঝাতেও পারি না। তুমি আমাকে সবসময়ই ভুল বোঝ। আবীর মোনা কে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে ঠোঁট রেখে…। মোনা কোন কথা বলার শক্তি যেন হারিয়ে ফেলে। আবীর বলে, তোমাকে ভালো না বাসলে আমি তোমার কাছে আসতাম? তোমাকে ভালো না লাগলে আমার সমস্ত কাজ ফেলে তোমাকে নিয়ে ভাবতাম? কেন বুঝতে চাও না? আমিও ভালো নেই, থাকা সম্ভব নয় তোমাকে ছাড়া। হঠাৎ একটা বিকট শব্দে মোনার ঘুম ভেঙে যায়। চোখ খোলে দেখে। কোথায় আবীর? কোথায় সেই রঙিন, ভীষণ রঙিন ভালোবাসায় মোড়ানো স্বপ্ন।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ

আজকের দিন-তারিখ

  • বুধবার (রাত ৮:৫৪)
  • ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬
  • ১৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ (হেমন্তকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Sundarban IT