• আজ- সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫৭ অপরাহ্ন

আত্মশুদ্ধি, ত্যাগ ও সাম্যের শিক্ষা

আব্দুর রহমান / ৯৪ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : শুক্রবার, ৬ জুন, ২০২৫
ঈদ মোবারক

add 1

মুসলমানদের জীবনে দুটি বৃহত্তম আনন্দ-উৎসব হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। ঈদ—শব্দটির মধ্যেই নিহিত রয়েছে খুশি, উদযাপন ও আত্মিক প্রশান্তি। তবে এ খুশি কেবল বাহ্যিক সাজ-পোশাকে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর গভীরে রয়েছে আত্মশুদ্ধি, ত্যাগ ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক চিরন্তন শিক্ষা।

অন্য ধর্মীয় উৎসবগুলো সাধারণত কোনো ধর্মগুরুর জন্ম বা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার স্মরণে পালিত হয়। কিন্তু ইসলামি উৎসব দুটি নির্দিষ্ট কোনো নবী বা ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকেন্দ্রিক নয়। ঈদুল ফিতর আসে দীর্ঘ এক আত্মশুদ্ধিমূলক সিয়াম সাধনার পর—যেখানে বান্দা তার প্রবৃত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে আল্লাহর ভয় ও আনুগত্য অর্জনের চর্চা করে। অপরদিকে ঈদুল আজহা আমাদের মনে করিয়ে দেয় হজরত ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পরিবারবর্গের অতুলনীয় ত্যাগ ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিঃস্বার্থ আত্মনিবেদনের গল্প।

ঈদ মুসলমানদের কাছে শুধুই উৎসব নয়, এটি ইবাদতের একটি রূপ। এ আনন্দের শুরু হয় তাকবির পাঠের মাধ্যমে, আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহিমা ঘোষণার মাধ্যমে। ঈদুল আজহার সময় পাঁচ দিনব্যাপী তাকবিরে তাশরিক পড়ার বিধান মুসলমানদের স্মরণ করিয়ে দেয়, এ আনন্দের কেন্দ্রবিন্দু আল্লাহর সন্তুষ্টি। এই নিরন্তর আল্লাহস্মরণ যেন ঈদের আধ্যাত্মিকতা ও মানবিক মূল্যবোধকে প্রতিষ্ঠিত করে।

ঈদকে কেন্দ্র করে সমাজে এক অপূর্ব ভ্রাতৃত্বের দৃশ্য ফুটে ওঠে। ধনী-দরিদ্র, শিশু-বৃদ্ধ, শহর-গ্রাম নির্বিশেষে সবাই একই কাতারে নামাজে শরিক হয়ে ঘোষণা করে—আমরা সবাই আল্লাহর বান্দা, আমাদের ধর্ম এক, কিবলা এক, গন্তব্যও এক। ঈদের আনন্দ ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, বরং তা সবার জন্য। তাই ঈদুল ফিতরের সাদকাতুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার কুরবানি—উভয় ক্ষেত্রেই রয়েছে অন্যকে অংশীদার করার সুস্পষ্ট নির্দেশনা।

বিশ্ব ইতিহাসে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর কুরবানির ঘটনা এক অতুলনীয় দৃষ্টান্ত। যখন তিনি আদরের সন্তান হজরত ইসমাঈল (আ.)-কে আল্লাহর আদেশে উৎসর্গ করতে উদ্যত হন, তখন তা নিছক পশু কুরবানি ছিল না, ছিল ঈমান ও আত্মত্যাগের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। সেই ঘটনার প্রতীকী অনুরণনই আজকের মুসলিম বিশ্বে পশু কুরবানির মাধ্যমে পালিত হয়।

এখানে মনে রাখতে হবে, কুরবানি কেবল পশু জবাই নয়—বরং অন্তরের অহংকার, হিংসা, লোভ, ঈর্ষা ইত্যাদি কোরে ফেলা। আত্মাকে শুদ্ধ করে আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করার এক মহৎ অনুশীলন হলো এই উৎসব। সমাজ, পরিবার ও মানবিক সম্পর্কেও ত্যাগের এ মূল্যবোধ গভীরভাবে প্রাসঙ্গিক।

আজকের সময়ে যখন ব্যক্তি-উপাসনা, আত্মপ্রচারণা ও ভোগবাদের ঢেউ বিশ্বজুড়ে প্রবল হয়ে উঠেছে, তখন ঈদের বার্তা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই সবকিছু। নবী করিম (সা.) এর জীবন ছিল এই দর্শনের প্রতিফলন। তিনি শিখিয়েছেন আল্লাহরই প্রশংসা করো, তাঁরই শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো, জীবনব্যাপী তাঁর গোলামি করো।

তাই ঈদের উৎসব হোক বাহ্যিক আনন্দের পাশাপাশি একটি আত্মিক জাগরণের উপলক্ষ। হোক তা ঈমান, তাকওয়া, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের এক অনন্য প্রকাশ। হোক ঈদ এক উপলক্ষ, যেখানে আমরা সবাই মিলে বলতে পারি—আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও মৃত্যু—all are for Allah, the Lord of the Worlds। আসুন, ঈদুল আজহার ত্যাগের শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করে আমরা নিজেরা বদলাই, সমাজকে বদলাই। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফিক দান করুন।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ