• আজ- বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১২ পূর্বাহ্ন

অর্ণবতরি

সাজ্জাদ ফাহাদ / ৪৮৫ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৩

add 1
  • সাজ্জাদ ফাহাদ

জমির সাহেব ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে। কর্ম জীবনে তিনি ছিলেন একজন দক্ষ ও নামকরা উকিল। দীর্ঘ সাতাশ বছর ধরে কোর্টে প্রকটিস করেছেন। গত তিন বছর ধরে কোর্টের প্রেকটিস বাদ দিয়েছেন। শেষ বয়সে এসে তাকে এক প্রকার নিসঙ্গ বলা যায়। বাসায় তার সঙ্গি হিসাবে আছে রুবিবা খানম। রুবিবা খানম তার দ্বিতীয় স্ত্রী। রুবিবা খানমের ঘরে কোনো সন্তান হয়নি। তাকে তার আগের স্বামী মূলত সন্তান না হবার দায়েই তালাক দিয়েছেন। শেষ বয়সের বিয়েসাদীর জন্য অবশ্য বন্ধা মহিলাই শোভন। জমির সাহেবের প্রথম স্ত্রীর তিন সন্তান- এশা, ইশা ও ইমন। ছেলে-মেয়েরা বিদেশে পড়াশোনা করে। জমির সাহেব তার দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে ছেলে-মেয়েদেরকে কিছু জানাননি। জমির সাহেব কথা বলার মতো লোক খুঁজে পান না। সারাক্ষণ বসে দেশের ফালতু বিষয়াদি নিয়ে মাতামাতি করে। পয়ষট্টি বছরের মতো জীবন পার করে দিয়েছে। কতো বছর কোর্টে প্রেকটিস করে কাটিয়েছে, কতো অদ্ভুত অদ্ভুত মামলার সমাধান করেছে, কতো মিথ্যাকে সত্য প্রমাণ করেছে আবার কতো সত্যকেও মিথ্যা প্রমাণ করেছে, কতো জায়গায় ঘুরাঘুরি করেছে, কতো মানুষের সাথে মিশেছে, কতো জনের রঙ-ঢঙ দেখেছে এর-ই মধ্যে ; এসব নিয়ে একটা আত্মজীবনী লিখলেও মন্দ হয় না। কিন্তু তার ধারেকাছে না গিয়ে সারাক্ষণ ঘরে বসে করে ফালতু পেনপেন ।

জমির সাহেব আমাদের গ্রামেই ছেলে। সপ্তাহ খানিকের জন্য এসেছে গ্রামে। শুনেছি গ্রামে এসেছে সবার সাথে একটু দেখা সাক্ষাৎ করতে। গ্রাম থেকে ফিরে গিয়ে মক্কা-মদিনাটা ঘুরে আসবে৷ হজ তো ফরজ হয়েছে৷ হজ শেষে চলে যাবে আমেরিকাতে ছেলে-মেয়েদের কাছে। বাকি জীবন সেখানেই কাটাবে। তার সাথে আমাদের পারিবারিক ভাবেই খুব ভালো সম্পর্ক। আমি নিতুকে নিয়ে তার সাথে দেখা করতে গেলাম। নিতু ভেতরের রুমে চলে গেছে। আমি আর জমির সাহেব ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে কথা বলছি।

: জমির সাহেব, গ্রামে কেমন লাগছে?’

: ভালো। কিছু বিষয় খুব হাস্যকর লাগে আবার কিছু বিষয় মেজাজ খারাপ করার মতো ৷’
: যেমন ?’
: যেমন ধরো শামসু। শালা তুই পড়াশোনা করছিস ক্লাস নাইন পর্যন্ত, মেট্রিক পাশ করতে পারছ নাই। কিছু টাকা হইছে এখন, লুঙ্গি ছাইড়া প্যান্ট ধরছছ। আজীবন চেয়ারম্যানের পা চাইটা এখন হইছছ মেম্বার ; তুই আইসা আমার সাথে করছ বিশ্ব রাজনীতির আলাপ। তুই রাজনীতির কি বুঝছ! মুর্খের বাচ্চা বলে, বর্তমান বিশ্বের সব বোমা নাকি এলকোহল দিয়ে বানায়। ‘

মিলন মিয়া মারা গেছে আরো বিশ বছর আগে৷ তাকে নিয়ে মহল্লা জুড়ে এখন নতুন খবরের পয়দা হয়েছে। তাকে নাকি ফজরের আজানের আগ মুহূর্তে মান্দার গাছের নিচে কিছু একটা খুঁজাখুঁজি করতে দেখা যায়। কদবানের মা’র চোখে নাকি এ দৃশ্য দু’বার ধরা পরেছে। আমার জন্মের পর থেকে কদবানের মাকে দেখে আসলাম দু’চক্ষে অন্ধ। সে কি করে এ দৃশ্য দেখে! তবে কান আর চোখ যদি একই রকম হয় তাহলে দেখতেও পারে। অনেক আগের ঘটনা৷ আমি, মাহিন আর সাজিদ বসে আছি পুকুরের দক্ষিণ পাড়ে৷ পুকুরের উত্তর পাড়ের ঘাটে তখন মিজান মিয়া গোসল করছিল। সে গায়ে সাবান মেখে পানিতে ধপাস করে ঝাপ দিয়ে পরে। সাথে সাথে সাজিদ বলে উঠে,’ ঐ দেখ মুডা খাসি করে কি !’ কি আশ্চর্য কান্ড! যেই মিজানকে কানের দু’হাত দূর থেকে কিছু একটা বললেও আরো এগিয়ে গিয়ে বলতে হয়। সে সেদিন পুকুরের ঐ পাড় থেকে সাজিদের চুপিচুপি বলা কথাটা শুনে ফেলে। মিজান মিয়া আর কদবানের মা তো এক না। মিজান মিয়া বয়রা সেজে সরকারের থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা নেয় ; চেয়ারম্যান তাকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কার্ড করে দিয়েছে। কদবানের মা’র তো কোনো কিছুর কমতি নেই ; প্রতিবন্ধী ভাতা ও পায় না, তার কোনো প্রয়োজন ও নেই। সে কেনো অন্ধ সেজে থাকবে! তাতে তো তার কোনো ফয়দা নেই। মারাত্মক চিন্তার বিষয়! সে কি সত্যিই মিলন মিয়াকে কিছু একটা খুঁজাখুঁজি করতে দেখেছে?

সকালে নেত্রকোনা থেকে নিতুর আব্বা-আম্মা এসেছে। দেড় হাত লম্বা মাগুর মাছ, মিষ্টি, দেশি মুরগি আরো অনেক কিছুই সাথে করে নিয়ে এসেছে। এবারে আসার সময় সাথে করে ঘাওঘাও টাকে নিয়ে আসেনি৷ এর আগে যতোবারই এসেছে তাকেও সঙ্গে এনেছে। ভাবলাম কুত্তাটার কথা একবার জিজ্ঞেস করি, মারা গেলো নাকি আবার! কিন্তু জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন হয়নি। শ্বশুর সাহেব নিজেই হাটতে হাটতে বললেন, ”নাস্তিকরা কথা বলেন যুক্তি দেখিয়ে, তাদের চিন্তা থাকে নিখুঁত। হুমায়ুন আজাদ তার একটি বইতে লিখেছিলেন, ‘ আবর্জনাকে রবীন্দ্রনাথ প্রশংসা করলেও আবর্জনাই থাকে।’ যতোই বড় লোকের কোলে থাক কুকুর কিন্তু কুকুর-ই। তাই এই শুভ সময়ে কুকুরের মতো একটা অশুভ প্রাণীকে সঙ্গে আনিনি ।” ঘাওঘাও কে না আনার কারণটা তার কথায় পরিষ্কার হলো। তার বড় মেয়ের প্রথম সন্তান হতে যাচ্ছে। কিছুদিন পর সে নাতি-নাতনির মুখ দেখবে, এমন একটা বিশেষ মূহুর্তে সে চাচ্ছে না একটা কুকুর সেখানে উপস্থিত থাক।
নেত্রকোনা থেকে আমার শ্বশুর-শাশুড়ির উপস্থিতির কথা শুনে জমির সাহেব রুবিবা খানমকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসে। জমির সাহেব তার দ্বিতীয় বিয়েটা নেত্রকোনাতেই করেছেন। শ্বশুর এলাকার থেকে মেহমান এসেছে বলে যে সে দেখা করতে এসেছে বিষয়টা তা না আবার আমার শ্বশুর হিসাবে তার প্রতি জমির সাহেবের অতিরিক্ত মনের টান আছে ব্যাপারটা সেরকমও না। আসলে জমির সাহেব এসেছে মাফ চাইতে আর দোয়া নিতে। হজ করতে যাবে বলে কথা। আল্লাহর পাক জায়গায় যাচ্ছে। আমার শ্বশুরের সাথে তার প্রথম সাক্ষাৎ। তার সাথে সে ভালো-মন্দ কোনটাই করেনি৷ অথচ যাওয়ার সময় তার কাছে ও দোয়া চেয়ে মাফ চেয়ে যায়। আজীবন যে কোর্টে সত্যকে মিথ্যা প্রমাণ করে নির্দোষ মানুষগুলোকে সাজা খাটিয়েছে তার কোনো খবর নাই। মাফ তো মূলত তাদের কাছে চাওয়ার কথা ছিল।
শ্বশুর সাহেব মূলত নিতুকে নিতে এসেছে। তিনি চান তার প্রথম নাতি-নাতনির জন্ম তার ভিটাতেই হোক৷ তার বাড়ির মাটিতে পোতা হোক আর প্রথম নাতি-নাতনির নারি। তিনি আমার কাছে নিতুকে নিয়ে যাবার ইচ্ছা পোষন করলে আমার ভেতর কেঁদে উঠে আব্বার জন্য৷ আব্বা বেঁচে থাকলে হয়তো তিনিও এমনি একটা ইচ্ছা তার ভেতরে লালন করতেন। তার সামনে আমার শ্বশুর সাহেব এমন ইচ্ছা পোষন করলে তিনি হয়তো তাকে মুখের উপর না করে দিতেন । আমি শ্বশুর সাহেবকে না বলতে পারলাম না। নিতুকে তার বাবার হাতে তুলে দিলাম। আমাকে তাদের সাথে যেতে বলেছিল কিন্তু যাইনি৷ বলেছি কয়েকদিন পরে যাবো৷ হাতে বেশ কিছু কাজ জমে আছে, এগুলো শেষ করতে পারলেই নেত্রকোনার উদ্দেশ্যে রওনা হবো৷

রাত এগারোটা; একা একা ঘরে শুয়ে আছি। চোখ বন্ধ করছি আবার খুলছি। ঘুম হচ্ছে না। হটাৎ একটা কল বেজে উঠে। কল রিসিভ করলে ওপার থেকে অদ্ভুত একটা কন্ঠ ভেসে আসে। সে অদ্ভুত কন্ঠে ফোনের ওপার থেকে একজন বলে উঠে :
‘এখন এগারোটা সত্তর বাজে। যার মানে এখন সময় বারোটা দশ মিনিট। আপনার অনেক কিছুই আমার জানা৷ আমি আপনার এমন অনেক কিছুই জানি যেটা পৃথিবীর কেউ জানে না, কেবল আপনি ছাড়া। আমার কথা শুনে ভয় পাবেন না। আমি ভূত-প্রেত কিছুই না। মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব। আপনাকে একটা বিষয়ে আমি সতর্ক করার জন্য কল করেছি৷ আচ্ছা তার আগে একটা গল্প শুনাই।’
আমি লোকটার কাছে অনেক বার তার পরিচয় জানতে চেয়েছি কিন্তু সে তা বারবার আড়াল করেছে। যতোবার পরিচয় জানতে চেয়েছি ততোবার সে বলেছে, ‘আমি মানুষ।’ তার এমন অদ্ভুত জবাবে আমি তাকে বলেছি, ‘গরু-ছাগল তো আর ফোনে কথা বলতে পারে না৷ আপনি যে মানুষ তা তো জানিই। আপনার নাম, বাড়ি কোথায় এসব কিছু বলেন।’ তাতেও কাজ হয়নি। তারপর লোকটা বলল:
‘ শোনেন গল্প শোনেন।
খুব সুন্দর একটা দেশ, দেশের নামটা আমার জানা কিন্তু বলবো না। দেশের মানুষ গুলোকে উপর থেকে দেখে ধূর্ত মনে হলেও আসলে তারা বোকা এবং সরল। দেশের মধ্যে অনেকেই শিক্ষিত আছে। তবে তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ লোকের জ্ঞান-ই হলো পুস্তকে সীমাবদ্ধ। বাকি যেই ১০ শতাংশ আছে, তাদের ৮ শতাংশ-ই মূলত সে দেশটাকে ছিরেছুরে খায়।
দেশটার শিক্ষা ব্যবস্থায় আছে বহুমুখী সুবিধা। পড়াশোনার জন্য বাহিরের রাষ্ট্রে যাওয়ার ও অনেক সুযোগ-সুবিধা আছে। দেশে ধীরেধীরে বারতে থাকে শিক্ষার হার। কিন্তু দেশটাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাকরি ব্যবস্থা বা ব্যবসায়ের পরিবেশ না থাকাতে ধীরেধীরে বেকারত্বের সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ মানুষ অনার্স-মাস্টার্স পাশ করে বেকার পড়ে থাকে। মেট্রিক পাশ করলে যে চাকরি পাওয়া যায় সে চাকরির জন্যই মানুষ বেকারত্বের ক্ষুধায় অনার্স-মাস্টার্সের সার্টিফিকেট হাতে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যায়। পাঁচ জনের চাকরির বিজ্ঞাপন দিলে সে চাকরির জন্য আবেদন করে পাঁচ লাখ মানুষ। তারপর শুনেন, সেই দেশেটার মধ্যে অনেক শিক্ষিত লোক থাকলে ও সেই দেশের নেতৃত্ব দেয় কিছু মূর্খ ছাগল টাইপের মানুষ। ছাগল তার মনিবের খেতের ঘাস বিপদে পরে খায়, দেখবেন একটু ছাড়া পেলেই অন্যের খেতে দৌড়ে যায়। ছাগলের নজর থাকে অন্যের খেতে। যে দেশের কথা বলছিলাম সে দেশের যারা নেতৃত্ব দেয় তাদেরও ঠিক তাই অবস্থা। পরধন লোটে খেতে তারা বেশ সাধ পায়৷ অন্যের ঘারে পা দিয়ে তাকে নিচু করে তার রক্ত চোষতে তারা বেশ আনন্দ পায়। আমি জানি আপনার এখন সেই দেশের নামটা জানতে খুব ইচ্ছা হইতাছে। কিন্তু আমি সেই দেশের নামটা আপনারে কমু না।

সেই দেশে এতো শিক্ষিত লোক থাকতে মূর্খ লোকেরা কিভাবে নেতৃত্ব দেয় জানেন! ঐ যে বললাম সে দেশ থেকে পড়াশোনার জন্য বাহিরের রাষ্ট্রে যাওয়ার বেশ সুযোগ-সুবিধা আছে। সেদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা মূলত সেই সুযোগটাই ব্যবহার করে। কি করবে বলেন? দেশে তো চাকরি বা ব্যবসা কোনটার-ই সুযোগ নাই। তখন তারা পড়াশোনার নাম দিয়ে বিভিন্ন উন্নত রাষ্ট্র গুলোতে চলে যায়৷ তারপর সেখানে কয়েক বছর থেকে তারা সে দেশের সিটিজেনশিপ পেয়ে যায়। সিটিজেনশিপ পেয়ে গেলে তারা আর তখন নিজ দেশে যায় না। তখন দেশে থেকে যায় মূর্খ, গাঞ্জাখোর গুলা। তখন তারা তারাই নিজেদের মতো করে রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেয়। আর তরুনদের হাতে মাদক ধরিয়ে দিয়ে তাদেরকে সন্তুষ্ট রাখে পরে সময় মতো শক্তি হিসাবে ব্যবহার করে।
১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে টাঙ্গাইলের কাকমারীতে মাওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে কাকমারী সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিলো। সম্মেলনের শুরুর দিকেই সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ভাসানী তখন জনতার উদ্দেশ্যে বললেন,’ ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে তাই আমি বক্তব্য করবো না৷ চলেন আমরা মুনাজাত করি। তখন উপস্থিত সকল জনতা মুনাজাত ধরলেন ; তারপর তিনি তার রাজনৈতিক সব কথা সে মুনাজাতেই বলে ফেললেন। যে বার্তা দেওয়ার জন্য সম্মেলন ডাকা হয়েছিলো জনগণের কাছে সে বার্তা পৌঁছে গেলো। এটা আমার গল্পের কোনো অংশ না। এটা এমনিতেই মনে পরলো তাই বললাম। আমি একজন বীর মুক্তিযুদ্ধা৷ তখন আমার বয়স ছিলো একুশের কোঠায়।’

এতোটুকু বলার পর লোকটা হঠাৎ করে কল কেটে দেয়। তারপর আমি তাকে অনেকবার কল করতে চেয়েছি কিন্তু তাকে আর পাওয়া গেলো না। সে সিম বন্ধ করে দিয়েছে। সে এতোক্ষণ ধরে কোন দেশের কথা বললো সেটা আর তার কাছ থেকে জানা হলো না৷

জমির সাহেব আগামী বুধবার দেশ ছাড়বেন। আজ রবিবার। মাঝ দিয়ে আর মাত্র দু’দিন বাকি৷ সামনে নির্বাচন। মহল্লাতে জমির সাহেবকে অনেকেই সম্মানের চোখে দেখেন। তিনি মানুষকে একটা কথা বললে মানুষ সে কথাটার প্রতি সম্মান দিবেন৷ চেয়ারম্যান তার কাছে এসেছেন যাতে সে তার পক্ষ হয়ে জনগণেরর কাছে তার জন্য ভোট চায়। চেয়ারম্যানের অনুরোধে জমির সাহেব গেলেন তার নির্বাচনি সভায়।
চেয়ারম্যান স্কুল মাঠে চেয়ার পেতে বসে বহু লোকজনের সাথে কথাবার্তা বলছেন। দক্ষিণ দিক থেকে একটা লোক দ্রুত হেটে এসে চেয়ারম্যান সাহেবের পা ছুয়ে সালাম করলো। লোকটা দূরের কেউ না ; পাশের গ্রামের জলিল হালদার।
‘আরে আরে তুমি সালাম করছো কেনো!’
‘চেয়ারম্যান সাহেব আপনে যেই কাজ করেছেন তাতে এ সালাম খুবি সামান্য। আমাদের জন্য খুবই উপকারের কাজ ; আপনার পায়ের বুড়ো আঙ্গুল চুষে খেলেও এর ঋণ সুধ হবে না ৷’
কথা বলতে বলতে লোকটা চেয়ারম্যানের পায়ের বুড়ো আঙ্গুল চুষতে তার পায়ের কাছে চলে যাচ্ছিলো। চেয়ারম্যানের পি.এ লোকটাকে জোর করে ধরে চেয়ারম্যানের পা থেকে তাকে সরিয়ে রাখে। তারপর চেয়ারম্যানের কথায় তাকে এখান থেকে নিয়ে গেটের বাহিরে রেখে গেট লক করে দেওয়া হয়। লোকটা গেটের বাহিরে থেকে চেয়ারম্যান সাব চেয়ারম্যান সাব করে ধুম চেচাচ্ছে। মাঠে বসে থাকা লোকজন এ ঘটনায় বড় অবাক হয়েছেন। নানান জনে নানান কথা বলছেন। এবারে চেয়ারম্যান তাদেরকে থামিয়ে বললেন-
‘আপনাদের হয়তো জানতে ইচ্ছা করছে এই লোকটা কেনো এমন করলো? আসলে আমি একটা ব্রিজ নির্মাণের কাজ করবো বলে ভেবেছি। এ কথা সরকারকেও জানিয়েছি এবং তাতে সরকার সহযোগিতার হাত বারিয়ে দিয়েছেন। আজ সকালে সরকারি লোক এসে জায়গাটা পর্যবেক্ষণ করে গেছেন। এ ব্রিজটা মানুষের অনেক দিনের চাওয়া ছিলো। কিন্তু সরকার থেকে এর জন্য অনুমতি আনতে কেউ পারেনি। আমার আগে আরো যে দুই চেয়ারম্যান ছিলো তারাও চেষ্টা করেছে কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। কেবল আমি খলিল চেয়ারম্যান পারছি এই কাজ করতে। তার জন্যই সে তার আবেগ মানাইতে পারে নাই ৷ তার মতো এমন আরো বহু লোকজন আছে যাতের স্বপ্ন ছিলো এই ব্রিজটি।’
চেয়ারম্যানের কথা শুনে সকলে করতালি দিয়ে আনন্দে ফেটে পরলো। তারপর জমির সাহেব সকলের কাছে চেয়ারম্যানের হয়ে ভোট চাইলেন। সন্ধ্যা ঘনাতেই লোকজন যার যার মতো চলে গেলো৷

সকালে ঘুম ভাঙলো কদবানের মার ডাকে। সে এসেছে নিতুকে দেখতে।
‘ কিগো কদবানের মা সকাল সকাল ডাকছো!’
‘ তুর বউকে দেখতে এলাম। গত রাতে স্বপ্নে দেখলাম তুর বউয়ের অবস্থা ভালো না৷’
‘ তুমি তো অন্ধ ৷ অন্ধ মানুষ আবার স্বপ্ন দেখে কি করে?’
‘ চোখ বন্ধ করলে তো সবাই অন্ধ৷ সব দেখে আইন্ধার আর আইন্ধার। তো মানুষ তো চোখ বন্ধ রেখে ঘুমায় তখন তারা স্বপ্নে দেখে কি করে? বাস্তব সবাই না দেখলে ও স্বপ্ন সবাই দেখে। অন্ধরাও দেখে।’
‘ নিতু বাড়িতে নেই। ওর বাবা এসে ওকে তাদের বাড়ি নিয়ে গেছে। স্বপ্নে আমার বউকে নিয়ে কি দেখলে?’
‘ মন্দ স্বপ্ন কাউকে বলতে নেই৷ তারপর ও বলি, দেখলাম তুর বউ…….।’

নেত্রকোনায় যাবো যাবো ভেবেছি কিন্তু এতোদিন যেতে পারিনি। অবশেষে সিদ্ধান্ত ঠিক করেছি বুধবার সকালে জমির সাহেবকে স্টেশন থেকে বিদায় দিয়ে সেখান থেকেই নেত্রকোনার উদ্দেশ্যে রওনা হবো। সেখানে দশ-পনেরো দিনের মতো থাকতে হবে৷ তাই সব কিছু এখন থেকেই গুছিয়ে রেখেছি। নিতুর জন্য তার স্পেশাল একটা জিনিস নিয়েছি, যেটা সে যাওয়ার সময় ভুল করে ফেলে গেছে। নিতু তার নিজ হাতে ছোট্ট একটা কাঁথা বুনেছে৷ সে কাঁথায় করে সে তার সন্তানকে প্রথমবার কোলে নিতে চায়। ব্যাগে আমি খুব যত্নের সাথে সে কাঁথাটা রেখেছি৷ এ কাঁথার প্রতি আমারো একটা ঘন আবেগ কাজ করে। এ কাঁথা বুনা হয়েছে নিতুর হলুদ সন্ধ্যার কাপড় দিয়ে৷ যেটা আমি নিতুকে বিয়ের দু’দিন আগে লুকিয়ে যেয়ে দিয়েছিলাম৷ তখন গোধূলি বেলা৷ নিতু তাদের পুকুর পাড়ে এসেছিলো। আমি কাপড়ের আঁচল দিয়ে তার মাথা ঢেকে দেই৷ সে কিছুটা লজ্জাবোধ করছিলো। তার সে রূপের কাছে সেদিন গোধূলি বেলার রূপ হার মেনেছে। মনে হচ্ছিলো সূর্যমুখী হাসছে।

রাত একটায় যেয়ে নিতুদের বাড়িতে পৌঁছালাম। ঘাওঘাও গেটের শব্দ পেয়ে আওয়াজ করতে লাগলো। শ্বশুর সাহেব আর আরাফ এসে গেট ফুলে দিলো৷ আরাফ কে দেখে খুব অবাক হলাম, এতোটুকু ছেলে এতো রাত হয়েছে তাও ঘুমায়নি এখনো। তার চোখে ঘুমের কোনো চিহ্ন ও নেই। গেট লাগিয়ে আমরা ঘরে যেয়ে বসলাম। নুপুর টেবিলে খাবার দিয়েছে, খেতে ইচ্ছে করছিলো না। তারপর ও খেয়ে নিলাম।
সকালে আমি আর নিতু উঠানে চেয়ার পেতে বসে আছি। কিছুক্ষণ পর নুপুর এসে আমাদের সাথে বসলো। আমরা বসে আলাপ করছি। রান্না ঘর থেকে গোরুর মাংসের কালো ভুনার রসালো ঘ্রাণ বেরুচ্ছে। দূর থেকে আরাফ দৌড়ে এসে বলল-
‘ মামা মামা তোমাকে একটা শোলোক দেই ; বলবে উত্তরটা কি হবে।’
‘ ঠিক আছে দেও৷’
‘ বলতো ডিমের হলুদ অংশটাকে কুসুম বলে আর সাদা অংশকে কি বলে?’
সবাই তার কথা শুনে হেসে ফেলল। নুপুর উত্তরটা ভাবছে কিন্তু পারছে না। নিতু বলল, ‘সাদা অংশকে বলে শ্বেতাংশ।’
আরাফ মাথা নেরে বললো,’ ওহুম; হয় নাই।’
নুপুর বললো,’কুসুমের জামাই কাসেম।’
সে আবার মাথা নেরে বললো,’ ওহুম ; হয় নাই। মামা তুমি বলো তো উত্তরটা কি হবে?’
আমি বললাম,’ সাদা অংশের নাম হবে সাদা কালার।’
সে এবারে মিটমিটিয়ে হেসে মাথা নেরে বললো,’ ওহুম এইটাও না। উত্তরটা হবে কুসুমের মা ঢিসুম।’ এ বলে সে আবার দৌড়ে চলে গেলো।

বেশ কিছু দিন ধরে অচেনা একটা লোককে আমি স্বপ্নে দেখছি। সে আমার কথার কোনো জবাব দেয় না। সে নিজেই একাধারে কথা বলে যায়। স্বপ্নে আমাকে নানান রকমের গল্প শুনায়। কখনো গল্পের শেষ হয় আবার কখনো গল্পের অর্ধাংশেই স্বপ্নের ইতি ঘটে। নিতুর কাছে আমি যে স্বপ্নের কথাই বলি সে কেবল বলে, ভালোই দেখেছো। তাই তার কাছে এখন আর ভালো-মন্দ কোনো স্বপ্নের কথাই বলি না। আজ রাতে স্বপ্নে দেখেছি কদবানের মা চেয়ারম্যানকে মালা পরাচ্ছে। অথচ বাস্তবে কদবানের মা’র জনমকার শত্রু চেয়ারম্যান। এই স্বপ্নের কোনো অর্থ খুঁজে পেলাম না।
একটা বিশেষ কাজে আমাকে বাড়িতে যেতে হচ্ছে৷ ট্রেনে বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেছি। পাশের একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, কমলাপুর স্টেশনে যেতে আর কত সময় লাগবে? সে বলল, ভাই সঠিক বলা যাচ্ছে না ; গাড়ি জ্যামে আছে।
অপেক্ষার প্রহর শেষে কমলাপুর এসে পৌঁছালাম। এর দু’ঘন্টার মাথায় যেয়ে বাড়ি পৌঁছালাম। এসে খবর পেলাম নির্বাচনে খলিল চেয়ারম্যান জয়ী হয়েছে। জাল ভোটে জয়ী হয়েছে। সাধারণ মানুষ ভোট কেন্দ্রে গিয়েছে ঠিকই তবে কেউ ভোট দিতে পারেনি৷ তার আগেই শুরু হয়েছে দু’পক্ষের গোলাগুলি। বিকালে চেয়ারম্যান আমাদের মহল্লার মোড়ে এসেছে। কিছু বদমাশ যেয়ে তার গলায় মালা দিচ্ছি। হেলাল যেয়ে বাড়ি থেকে কদবানের মাকে নিয়ে আসে৷ সে এসে চেয়ারম্যানের গলায় মালা দেয়। চেয়ারম্যান তার পা ছুয়ে সালাম করে। চেয়ারম্যানের ভাড়াটে সাংবাদিক এ দৃশ্যের ছবি তুলে রাখে। পর দিনের পত্রিকাতে সে ছবি ছাপিয়ে বড় শিরোনাম লেখা হলো,’ নিরহংকারী চেয়ারম্যান খলিল সাহেব।’

বিশেষ কাজ শেষে আমি আবার নেত্রকোনাতে এসেছি। রাত এগারোটা বাজতেই সেদিনের সে নাম্বার থেকে কল আসে। আমি কলটা রিসিভ করলাম।
‘ কেমন আছেন?’
‘ জ্বি ভালো। আপনি?’
‘ ভালো আছি। আমি সেদিন কল কেটে দেবার পর আপনি আমাকে কল দিয়েছেন। কিন্তু আমাকে আর পাননি। এমনটা সবার ক্ষেত্রেই ঘটে। সারাদিন বাসায় পরে থাকতে ভালো লাগে না। বাহিরে বেরোলে দেখি সব জায়গায় ময়লা-আবর্জনা। তাই বাহিরেও বের হইনা। আমি একজন বীর মুক্তিযুদ্ধা ; ময়লা-আবর্জনা সহ্য করতে পারিনা। বাসায় পরে থাকতে থাকতে যখন বিরক্ত হয়ে যাই তখন আন্দাজি নাম্বার উঠিয়ে কল দেই। মানুষের সাথে গল্প করি। ভালো লাগে। আমি সেদিন আপনাকে একটা মিথ্যা বলেছিলাম। বলেছিলাম আমি আপনার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানি; আসলে আমি আপনাকে চিনিও না। এটা বলেছিলাম কারণ হচ্ছে , এ কথা না বললে আপনি আমার কথা মন দিয়ে শোনতেন না। আচ্ছা বলেন তো, কোন ফুল বাগানে ফুটে না?’
কিছুক্ষণ চিন্তা করে জবাব দিলাম, ‘পদ্মফুল।’
লোকটা হা হা করে হাসলো। তারপর বললো,’ উত্তরটা ফেলার মতো নয়, তবে সঠিক উত্তরটা হবে নাকফুল। আমাদের দেশের রাজনীতির অবস্থা অনেকটাই নাকফুলের মতো। স্বামী আছে তো নাকফুল পরলাম ; স্বামী মারা গেলো আর নাকফুলের খবর রাখলাম না। ক্ষমতা আছে তো দেশ লুটে খেলাম আর ক্ষমতা নেই তো দেশ ছেড়ে পালালাম।’
এ বলে লোকটা আবার কল কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে দেয়। দু’বার কল দিয়েছি তারপর আর কল দিলাম না। দু’দিন পর নিতুর সিজার হবে৷ নিজেই নিজের চিন্তায় আছি। আমি নিতুকে নিয়ে দরজা আটকে মাঝের রুমে যেয়ে বসলাম। আমি নিতুর পেটে হাত বুলিয়ে বাচ্চাটাকে বললাম,’ আমি তুর বাপ।’

নিতুকে নিয়ে হাসপাতালে গেলাম। সাথে শ্বশুর সাহেব আর শাশুড়ি আছে। একটু পর ডাক্তার এসে তাকে থিয়েটারে নিয়ে যাবে। নিতু আমার হাত চেপে ধরে আছে। যেমনটা ধরেছিলো তার হলুদ সন্ধ্যার কাপড় দেওয়ার দিন,পুকুর পাড়ে। প্রায় দু’ঘন্টা পর ডাক্তার থিয়েটার থেকে বেরিয়েছে। ডাক্তারের মতিগতি বুঝা যাচ্ছে না। ডাক্তার আমার কাধে হাত রেখে বললো,’ নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন। দু’জনই ভালো আছে।’ আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলাম। বাবা হবার খুশিটা উপলব্ধি করলাম। উপলব্ধি করলাম, বাবা মানে বিশাল একটা সমুদ্র। যে সমুদ্রের কোনো শাখা-প্রশাখা নেই। যে সমুদ্রের পানি অন্য সকল পানি থেকে হাজার গুণে আলাদা।

তিন দিন পর নিতুকে নিয়ে আবার তাদের বাড়ি ফিরলাম। আগামী দু’মাস এখানেই কাটাতে হবে। এতো ছোটো বাচ্চা নিয়ে এতো দূর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা মোটেও ভালো হবে না।
জমির সাহেব মক্কা থেকে কল দিয়েছে। নিতুর কথা বাচ্চার কথা জিজ্ঞেস করলো। বাচ্চার জন্য নিতুর জন্য মক্কা থেকে দোয়া করে আমাকে যেনো ধন্য করে দিলো। কল কাটলে আমি সূরা ফাতিহা পড়ে বাচ্চার গায়ে ফুঁ দিলাম। দরজা ঠেলে আরাফ ভিতরে ঢুকে বললো,’ মামা বলতো, একটা ঘরের ভাইয়ের নাম মেঘ,বোনের নাম বৃষ্টি, মা’র নাম শিলা আর বাপের নাম কি?’
আমি বললাম,’ বজ্রপাত।’
আরাফ হেসে বললো,’ না, বাপের নাম হইলো ঠাডা।’
এ বলে আবার দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। নুপুর এসে আমাদের খাবার দিয়ে গেলো।

আজ নিতুকে আর বাচ্চাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাবো। বাচ্চার নাম রেখেছি আব্দুল্লাহ আল মুহাম্মদ। নবীর নামের সাথে মিলিয়ে। আমার বন্ধুরা বলেছিলো বাচ্চার নাম দেশ রাখতে। যাতে যে কোনো জায়গায় যেয়ে বলতে পারি, আমি দেশের বাপ।
আমরা গাড়িতে করে যাচ্ছি। গাড়ির সামনের সিটে নুপুর বসা। সে আমাদের সাথে আগামী কয়েক মাস থাকবে। গাড়ি চলছে। নুপুর কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে গান শুনছে, নিতুর কোলে বাচ্চা ঘুমাছে সে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি নিতুর দিকে এক বার দেখি আবার দেখি বাচ্চার দিকে। নিতুর কোলে আমার রক্ত। সে আমার পাশ দিয়ে বসে আছে। দৃশ্যটা খুব মধুর মনে হচ্ছে। আমি এ দৃশ্যটার একটা ছবি তুলে তাকে স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রেখে দেই।
বাড়ি ফিরতেই মানুষ এসে আমার বাচ্চাকে দেখার জন্য ভির জমায়। সবাই তাকে কোলে নিচ্ছে, আদর করছে, মন্তব্য করছে। কেউ বলছে বাচ্চার চোখ হয়েছে তার মায়ের মতো, কেউ বলছে হাত গুলো ও নাকি তার মায়ের মতো, জলিল মিয়ার বউ বলছে বাচ্চার সবই নাকি তার মায়ের মতো হয়েছে। আমি মিটমিটিয়ে হেসে মনে মনে ভাবছি, সব মায়ের মতো হলেও একটা জিনিস আমার মতো হয়েছে ; যেটার কথা কেউ বলেনি এখনো।

এক দিন রাতে বাচ্চার প্রচন্ড জ্বর উঠে। ঘরে প্রাথমিক ঔষধ-পাতি আগেই রেখা ছিলো। নিতু ঔষধ খাইয়ে দিয়েছে কিন্তু সে সহ্য করতে পারছে না। গাড়ি ডেকেছি। এখনি হাসপাতালে নিয়ে যাবো। আমরা তাড়াহুড়ো করে হাসপাতালের দিকে যাচ্ছি। বাচ্চার প্রতিটা চিৎকার আমার বুকে লাগছে। গাড়ি চলছে বাতাসের গতিতে, তবুও আমার মনে হচ্ছে পথ যেনো ফোরাচ্ছ না। ইচ্ছা করছে ড্রাইভারকে লাত্থি মেরে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে নিজেই গাড়ি চালাই। হঠাৎ বাচ্চার চিৎকার থেমে যায়। তার গায়ের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়। হৃদ স্পন্দন থেমে যায়। জীবন সমুদ্র পারি দেওয়ার আগেই সমুদ্রের কাছে হার মেনে যায় তার অর্ণবতরি। নিতুর কি হয়েছে জানিনা, তবে আমার চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসে।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ

আজকের দিন-তারিখ

  • বৃহস্পতিবার (সকাল ৮:১২)
  • ১৪ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬
  • ২৯ কার্তিক, ১৪৩১ (হেমন্তকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Sundarban IT