হঠাৎ সে খেয়াল করলো, আশেপাশে পরিচিত কেউ নেইl ডানা দুটো ঝাপটাতে ঝাপটাতে একবার এদিকে যায়, একবার ওদিকে যায়l চারিদিকে শুধু বিস্তৃত আকাশl নীচে তাকিয়ে সে দেখলো, অপরিচিত রাস্তাঘাট ও অট্টালিকারাজি তার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছেl সে ভাবলো– হতাশ হওয়া যাবে না, উড়তে থাকতে হবে। তাই সে আকাশ পাড়ি দিতে থাকলো।
কিছুক্ষণ পর সে অনুভব করলো ভীষণ ক্ষুধা-পীড়া। সে একটি বড় গাছের ডালে গিয়ে বসলোl খেয়াল করলো, নীচে রাস্তায় কে যেন ছোট এক টুকরো পাউরুটি ছুঁড়ে দিলোl তক্ষুণি সে নেমে গিয়ে ঠুকরে খাওয়া শুরু করলো টুকরোটিl একজন বৃদ্ধ ভদ্রলোক স্নেহভরা কণ্ঠে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার ক্ষুধা পেয়েছে?’
সে উপরে তাকিয়ে তাঁর হাসিমুখ দেখতে পেলো। তিনি তাঁর হাতে রাখা বানটি ছিঁড়ে ছিঁড়ে আরও কিছু টুকরো করে ছড়িয়ে দিলেন তার সামনে।
সে দুপায়ে সামনের দিকে হালকা করে লাফ দিয়ে সেগুলোকেও ঠুকরানো শুরু করলো।
‘তুমি কি দলছুট হয়ে গিয়েছো?’ তিনি অত্যন্ত নম্রভাবে জিজ্ঞেস করলেনl
সে এমন একটি উচ্চারণ করলো যার অর্থ হলো জ্বিl
‘তুমি কি তোমার এলাকার নাম জানো? বলো তো এলাকাটির নামl’ তিনি আরও জিজ্ঞেস করলেনl
সে তার মালিককে কয়েকবার “বসিলা” শব্দটি বলতে শুনেছিলোl তাহলে কি এলাকাটির নাম “বসিলা”?
কিন্তু পায়রাদের ভাষায় উত্তর দিলে কি তিনি বুঝতে পারবেন?
‘বলো,বলো,’ তিনি উৎসাহ দিতে লাগলেন।
তার ভাষাতেই সে উত্তর দিলো, ‘বসিলা’।
‘বসিলা’ তিনি শব্দটির পুনরাবৃত্তি করলেন মানুষের ভাষায়l এ কী!
‘চলো, তোমাকে নিয়ে যাই ওখানেl বসিলা তো বেশি দূরে নাl’ তিনি একটি হাত তার দিকে বাড়িয়ে দিলেন।
সে উঠতে একটু ইতস্তত করলোl সে তার ভাইবোনদের কাছে পাখি পাচারের ভয়ংকর কথা শুনেছেl কিন্তু কোথায় যাবে সে আর? কোনো অসুবিধা হলে উড়ে যাবে ভাবলো।
সে উড়ে গিয়ে তাঁর হাতে বসলো প্রথমে, তারপর উড়ে একটি কাঁধের উপর নিজের স্থান করে নিলl তিনি তাকে নিয়ে হাঁটা শুরু করলেন।
কিছুক্ষণ পর তাঁর হাঁটার গতি ধীর হয়ে যেতে লাগলোl সে বুঝতে পারলো, তাঁর কষ্ট হচ্ছে আরও হাঁটতেl তার মন খারাপ হলো দেখেl সে আশা করতে লাগলো যেন তিনি গন্তব্যে তাড়াতাড়ি পৌঁছে যান।
নিস্তব্ধভাবে অধ্যবসায়ীর মতো তিনি যেতে লাগলেন।
‘আমরা চলে এসেছি!’ অবশেষে তিনি মুখ খুললেন, ‘ঐ যে, ওরা তোমার ভাই বোন না?’ তর্জনী দিয়ে তিনি ইঙ্গিত করলেন অপরাহ্নের নীল-কমলা আকাশে ঘুরপাক দেওয়া কবুতরের দলটির দিকেl নীচ থেকে তাকিয়েও সে দূরে উপরে তার পরিবারটিকে চিনতে পারলো, কারণ তারা কেন যেন একটু নীচে নেমে এসেছিলো।
সে একবার চেয়ে দেখলো বৃদ্ধ সেই ভদ্রলোকটিকেl তিনি তখনও মুচকি হেসে আছেন, যদিও তাঁর কপালে ঘাম আর চেহারায় ক্লান্তিl তারপরই সে উড়ে গিয়ে তার ভাইবোনদের সঙ্গে যোগ দিলোl তারা খুশি হলোl সে ভাবলো, তাদেরকেও বৃদ্ধ ভদ্রলোকটির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিবেl তার আরও মনে হলো– পাখির ভাষায় তাঁকে ধন্যবাদ-এর মতো কিছু একটা বলি।
কিন্তু সে তাকিয়ে দেখলো যে নীচে কেবল খরখরে ও ক্ষীণ রৌদ্রে উজ্জ্বল একটা রাস্তা।